লাঙ্গলবন্দ ট্রাজেডি- তদন্ত কমিটির কাজ শুরু by বিল্লাল হোসেন রবিন

লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী স্নানোৎসবে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আয়োজকদের দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাখ লাখ মানুষের এ উৎসবে যতটুকু প্রশস্ত সড়ক থাকা প্রয়োজন সেটা না থাকার কারণেই এ দুর্ঘটনা। তাছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের ১৬টি ঘাটে এবার যে পরিমাণ কচুরিপানা ছিল তাতে স্নান করার মতো উপযোগী ছিল না। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা স্নান উদযাপন কমিটিকে দায়ী করলেও কমিটির লোকজন পুরো বিষয়টি প্রশাসনের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। আর প্রশাসন প্রকৃত কারণ বের করতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসক বলেছেন, দখলের কারণেই রাস্তা সরু হয়েছে। আর সরু রাস্তার কারণেই এ দুর্ঘটনা। অচিরেই তদন্ত প্রতিবেদনের পর সরু রাস্তা প্রশস্ত করা হবে। তবে পুণ্যার্থীদের অভিযোগ- এ সমস্যা কেন আগে চিহ্নিত করা হয়নি। এদিকে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের লাঙ্গলবন্দে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহাসিক তীর্থস্থান ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ ও ধর্মীয় স্থানের উন্নয়নে আমব্রেলা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এ প্রজেক্ট আলোর মুখ না দেখার কারণেও পুণ্যার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, অভিযোগ উদযাপন পরিষদের। লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সাবেক কয়েকজন সদস্য বলেছেন, আগে লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদ উৎসবের একমাস আগে থেকেই আয়োজন ও প্রস্তুতি নিতেন। ওই সময় তারা এক মাস আগে থেকে লাঙ্গলবন্দে অবস্থান করে সমস্যা চিহ্নিত করে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু বর্তমান কমিটির নেতারা বছরজুড়ে তাদের কার্যক্রম শুধু আলোচনা সভার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। স্নান উৎসবের মাত্র দুদিন আগে ওনারা সেখানে গিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন। উদযাপন কমিটির সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা অবশ্য অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন না। তিনি বলেন, মূলত ঘটনাটি ঘটেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা কেন্দ্র করে। একটি ছিনতাইচক্র ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বেইলি ব্রিজের কাছে গিয়ে ব্রিজ ভেঙে পড়ছে বলে আওয়াজ তুললে হুড়োহুড়ি শুরু হলে এ ঘটনা ঘটে।
রাস্ত সরু, অবৈধ দখলদার, নদে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিভিন্ন সভায় লাঙ্গলবন্দের সমস্যার ব্যাপারে স্নান পরিচালনা কমিটিকে জানিয়েছি। লিখিতভাবেও তাদের জানিয়ে সেই কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যদি লাঙ্গলবন্দে আমব্রেলা প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে এমন ঘটনা কখনই ঘটতো না।
তদন্ত কমিটির কাজ শুরু
এদিকে পদদলিত হয়ে ১০ নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গতকাল দুপুরে কমিটির সদস্যরা বন্দরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর আগে কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইসরাত হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, তাদের কমিটি গতকাল দুপুরে বন্দরের লাঙ্গলবন্দে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কিছু বলা যাবে না।
এর আগে শনিবার তদন্ত কমিটির পুনর্গঠন করে ৭ সদস্য করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহমুদুর রহমান হাবিব, ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজানুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-পরিচালক, জেলা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি এবং সড়ক ও জনপথের প্রতিনিধি। এ কমিটিকে ৫ কার্যদিবসে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে বন্দরের লাঙ্গলবন্দ বাজারে রাজঘাট এলাকায় প্রচণ্ড ভিড়ে পদদলিত হয়ে ৭ নারীসহ ১০ জনের মৃত্যু ঘটে। আহত কমপক্ষে ৩০ জন। লাঙ্গলবন্দের স্নানের ইতিহাসে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এটিই প্রথম।

No comments

Powered by Blogger.