৩ মাসে ক্ষতি ১০০০ কোটি ডলার -স্ট্যার্টফোরের প্রতিবেদন

বাংলাদেশজুড়ে সহিংসতা শিগগিরই তৃতীয় মাসে পদার্পণ করবে। অর্থনীতির উপর কঠোরতা আরও বিস্তৃত হবে, যার দরুণ ইতিমধ্যেই ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলার। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরী পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ এ বছর শুরু করেছে বিনিয়োগের চাহিদা নিয়ে, যাতে করে উৎপাদন খাতে বৈচিত্র্য আনা যায়। বর্তমানে কেবল টেক্সটাইল খাতেই কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে বিনিয়োগ। বাংলাদেশ সস্তা ইলেক্ট্রনিক্‌স ও অটোমোবাইল খাতেও বিনিয়োগ দেখতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট ৫ই জানুয়ারির ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকীর পরপর শুরু করে ব্যাপক অস্থিরতা। এর ফলে জাতীয় অর্থনীতি ও টেক্সটাইল শিল্পের সামপ্রতিক বছরগুলোতে অর্জিত প্রবৃদ্ধি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই, এর ইতিহাস রাজনৈতিকভাবে গভীর বিভাজিত। রয়েছে নিয়মিত সামরিক অভ্যুত্থান ও অস্থিরতা। এ অস্থিতিশীলতা দেশটিকে গরিব করে রেখেছে, মজুরিও রয়েছে কম। আবার এর ফলে ও বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থানের কারণে দেশটিতে গার্মেন্ট শিল্পের উত্থান দেখা দেয়। তবে এখনও বাংলাদেশ নিজের দুর্বল রাজনৈতিক কাঠামো ও গভীর সামাজিক বিভাজনের শিকার। যার ফলে তৈরি হয়েছে সহিংস সামাজিক অস্থিরতা যা দেশটিকে ঘিরে রেখেছে এ বছরের বেশিরভাগজুড়ে। স্থানীয় হিসাব মতে, গত তিন মাসের সংঘর্ষের ফলে অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন ১৫০০০ কোটি ডলার। সে হিসেবে ১ হাজার কোটি ডলার বিশাল অংক। সামরিক বাহিনী ঐতিহাসিকভাবেই একটি কঠিন শক্তি। তবে বাংলাদেশের এবারের অস্থিরতায় এটি নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে না সম্ভবত। গত দশকে পেশাদার সংগঠনগুলো যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে টেক্সটাইল ও তৈরী পোশাক খাত। এ খাতে কাজ করে দেশটির মোট শিল্প শ্রমের ৬০ ভাগ। দেশটির মোট বার্ষিক রপ্তানির ৮০ শতাংশই এ খাতের। এসবই হচ্ছে ঢাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস। বাংলাদেশ সরকারের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সামপ্রতিক পরিসংখ্যান মতে, গার্মেন্ট রপ্তানি এখনও বাড়ছে। জানুয়ারিতে গত বছরের তুলনায় ৭.৮ শতাংশ ও ফেব্রুয়ারিতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এ খাতে। আন্তর্জাতিক কোমপানিগুলো থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ স্বল্পমেয়াদি অর্ডার ফেরত গেছে বলে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশের শিল্প অ্যাসোসিয়েশনগুলো। এর ফলে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর লাভ হয়েছে। তবুও বাংলাদেশ টেক্সটাইল ও তৈরী পোশাক শিল্প খাত গত ২ বছরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও অসামান্য সহনশীলতা দেখিয়েছে। সামরিক বাহিনী সতর্ক, যাতে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি না হয়। কিন্তু যেহেতু অর্থনীতি এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে ও বিএনপি যেসব অবরোধ-হরতালের আহ্বান জানিয়েছে, সেসব প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে, সেহেতু এ কঠিন ও বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে সামরিক বাহিনীর কাছে যথেষ্ট উৎসাহজনক কিছু নেই। সামরিক বাহিনী বারবার ঘোষণা করছে, বর্তমান সমস্যা নিরসনে হস্তক্ষেপের কোন পরিকল্পনা নেই তাদের। সুতরাং, বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা শিগগিরই সমাধান হওয়ার লক্ষণ নেই।
(যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি বৈশ্বিক গোয়েন্দা সংস্থা স্ট্যার্টফোরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুবাদ)

No comments

Powered by Blogger.