ইয়েমেন সংকট: আরব লিগের বৈঠকে সিদ্ধান্ত : হামলায় বিধ্বস্ত সানা বিমানবন্দর, সমন্বিত আরব সামরিক বাহিনী গড়া হবে

আরব লিগের শীর্ষ বৈঠক শেষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে
বক্তব্য দেন জোটের মহাসচিব নাবিল এলারাবি (বাঁয়ে)।
তাঁর পাশে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি l ছবি: রয়টার্স
ইয়েমেন সংকটের প্রেক্ষাপটে মিসরের শীর্ষ বৈঠকে আরব অঞ্চলে একটি যৌথ সেনাবাহিনী তৈরির ঘোষণা দিল আরব লিগ। এই বাহিনী গড়ে তোলার প্রক্রিয়া কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হতে পারে। এদিকে ইয়েমেনের শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব বাহিনী চতুর্থ দফা বিমান হামলা চালিয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানী সানার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এ হামলায়। খবর এএফপি ও রয়টার্সের। গতকাল মিসরের শারম আল-শেখে আরব লিগের শীর্ষ বৈঠকে বৃহত্তর আরব অঞ্চলে বাড়তে থাকা নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় একটি সমন্বিত সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে একমত হয়েছেন আঞ্চলিক নেতারা। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ দুই শক্তি সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ইয়েমেন নিয়ে ছায়াযুদ্ধ তুঙ্গে ওঠার প্রেক্ষাপটে এই বাহিনী গঠনের ঘোষণা এল।
সম্মেলনে সমন্বিত সেনাবাহিনী গড়ে তোলার প্রস্তাবটি দেন স্বাগতিক মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। এ রকম একটি বাহিনী গড়তে আগেও চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বিভক্ত আরবে সেই চেষ্টা সফল হয়নি।
আরব লিগের সম্মেলনে যোগ দেওয়া ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট আবেদরাব্বো মানসুর হাদি হুতি বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়ে যেতে আরব মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। হুতিদের আক্রমণের মুখে সৌদি আরব পালিয়ে যাওয়া মানসুর হাদি হুতিদের ইরানের ‘হাতের পুতুল’ আখ্যায়িত করেন।
সানা বিমানবন্দর বিধ্বস্ত: এদিকে শনিবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত চতুর্থ দফায় হুতি মিলিশিয়া এবং তাদের সমর্থক ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহের অনুগত বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়। এই হামলায় সানা বিমানবন্দর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিমানবন্দরের রানওয়েতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে হুতিবিরোধী আন্তর্জাতিক বাহিনী। বিমানবন্দর এবং ইয়েমেনের অন্যত্র চালানো হামলায় ১৫ জন হুতি বিদ্রোহী যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলছিলেন, এই প্রথম এ বিমানবন্দরের রানওয়ে বিধ্বস্ত হলো। বিমানবন্দরটি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সানা বিমানবন্দরে তিনটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ তাঁরা পেয়েছেন। বড় আগুনের কুণ্ডলীও দেখেছেন। বিমানবন্দর ছাড়াও রাতব্যাপী বিমান হামলার আরেক লক্ষ্যবস্তু ছিল বিদ্রোহী রিপাবলিকান গার্ডের সদর দপ্তর আল সুবাহা ঘাঁটি। স্থানীয় একটি সামরিক হাসপাতালের এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেছেন, তিনি ১২টি মৃতদেহ পেয়েছেন।
হুতি বিদ্রোহীদের বিমান হামলার সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দিতে জোট বাহিনী বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত পশ্চিম ইয়েমেনের হুদাইদা বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালায়। সেখানে বেশ ক্ষতি হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
উদ্ধার তৎপরতা: চীনের কর্মী এবং কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনতে দেশটির একটি যুদ্ধজাহাজ গতকাল এডেন বন্দরে পৌঁছেছে। এদিকে পাকিস্তানও ইয়েমেনে থাকা কূটনীতিক এবং কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে যুদ্ধজাহাজ এবং উড়োজাহাজ পাঠিয়েছে। গত শনিবার জাতিসংঘ, বিভিন্ন দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার দুই শতাধিক কর্মকর্তা ইয়েমেন ত্যাগ করেন।

No comments

Powered by Blogger.