মধ্যবর্তী নির্বাচন ও সংবিধান by ইকতেদার আহমেদ

সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় সংসদের মেয়াদ অবসান-পরবর্তী অথবা মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে নির্বাচন আয়োজন একটি স্বীকৃত ব্যবস্থা। সংসদের মেয়াদ অবসানের কারণে যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়, সেটি নির্ধারিত নিয়মমাফিক নির্বাচন। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে অনুষ্ঠিত হয় অনির্ধারিত নির্বাচন। এরূপ অনির্ধারিত নির্বাচনকে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলা হয়।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের সংবিধান প্রণয়নের মধ্য দিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু হয়। এ সরকারব্যবস্থাটি ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ পর্যন্ত চালু থাকে। ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার বিলোপ করে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা চালু করা হয়। রাষ্ট্রপতিশাসিত এ সরকারব্যবস্থা ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ পর্যন্ত চালু থাকে। ওই তারিখে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু করা হয়। জাতীয় সংসদের নির্বাচন বিষয়ে ৭২-এর সংবিধানে উল্লেখ ছিল মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসানের আগে অন্য কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা চালু করা হলেও সে সংশোধনী দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধানে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এরপর ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করা হয়, তাতে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়। পরিবর্তিত বিধানে বলা হয়, মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসানের আগে অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন বিষয়ে এ বিধানটি নবম সংসদ নির্বাচনে কার্যকর থাকে। নবম সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান রহিত করলে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পুনঃজাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ৭২-এর সংবিধানে উল্লিখিত বিধান প্রবর্তিত হয়। অর্থাৎ মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম সংসদ নির্বাচন থেকে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ ছয়টি সংসদের কোনোটি মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারায় দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ এ পাঁচটি নির্বাচন সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। সুতরাং এ পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বেলায় মেয়াদ অবসানের আগে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয়নি। এরপর সপ্তম, অষ্টম ও নবম এ তিনটি নির্বাচনের মধ্যে প্রথম দুইটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এবং শেষটি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ তিনটি সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করায় এবং এ তিনটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে মেয়াদ অবসান বা মেয়াদ অবসানের আগে অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান কার্যকর থাকায় ওই তিনটি নির্বাচনের সময় সংসদের মেয়াদ অবসান হয়েছে কি হয়নি, সে প্রশ্নটি অপ্রাসঙ্গিক ছিল।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর গত বছর ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি এ দেশের ইতিহাসে সংসদ বহাল থাকাবস্থায় ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি সংসদ বহাল রেখে এবং দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ এর জোটভুক্ত ২০ দল এবং অপরাপর কিছু দল যেমন গণফোরাম, সিপিবি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ প্রভৃতি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তা ছাড়া এ নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের জন্য উন্মুক্ত ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট যে ১৪৭টি আসনে ভোট হয়, তাতে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। এ নির্বাচন ভারত ও ভুটানের চারজন পর্যবেক্ষক ছাড়া অন্যান্য দেশের কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণ করেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দেশের মানুষের কাছে এ নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষপর্যায়ের নেতার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নেহাত সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার জন্য এ নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান-পরবর্তী অচিরেই সব দলের অংশ নেয়ার ভিত্তিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
দশম সংসদ নির্বাচনটি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত দল এবং আরো কিছু দল শুধু বর্জনই করেনি, প্রতিহতেরও হুমকি দিয়েছিল। দেশের বেশির ভাগ দলের বর্জন ও প্রতিহতের মুখে যেভাবে বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র ভোটারশূন্য ছিল, তাতে গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে এটিকে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন বলার অবকাশ নেই। দশম সংসদ নির্বাচনের সময় বিরোধী দলগুলোর হরতাল ও অবরোধের ডাকে দেশব্যাপী যে সহিংস অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির হরতাল ও অবরোধের আহ্বানে দেশব্যাপী অনুরূপ সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন এ দু’টি নির্বাচনই একতরফা ও ভোটারবিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এ দু’টি নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য প্রথমটি অনুষ্ঠিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ষষ্ঠ সংসদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে সে সংসদের অবলুপ্তি ঘটিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করেন। সে সময় বেগম খালেদা জিয়া তার দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিষয়ে অনীহ হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন বিরোধী দলের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে দেশকে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য থেকে রক্ষার জন্য সংসদে একতরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করেছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনের পর দেশবাসী প্রত্যাশা করেছিল যে আওয়ামী লীগ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানুভবতার বশবর্তী হয়ে দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী দেখা গেল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ দশম সংসদের মেয়াদ অবসান পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড়।
দশম সংসদের মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিন ছিল গত ৫ জানুয়ারি। ওই দিন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র রক্ষা দিবস এবং বিএনপিসহ এর জোটভুক্ত দলগুলো গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। উভয় দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ফলে দেশব্যাপী পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং সারা দেশ বিরোধী দলের অবরোধ ও হরতালের কবলে পড়ে। বিরোধী দলের অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি এখনো অব্যাহত আছে। ফলে এরই মধ্যে সহিংসতায় জান ও মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তথাকথিত ক্রসফায়ারে বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব মৃত্যুতে যাদের প্রাণ গেছে তারা সাধারণ জনমানুষ ও বিরোধী দলের নেতাকর্মী।
আমাদের দেশে এ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এর প্রতিটিতেই ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হয়েছে। অপর দিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সে চারটিতে বিরোধী দল বিজয়ী হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে আমাদের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল একের প্রতি অপরে আস্থাশীল নয়। এ আস্থাহীনতার কারণে কোন ধরনের সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আমরা এখনো স্থায়ীভাবে এ বিষয়টি সুরাহা করতে পারিনি। এ কারণেই যে বারবার আমাদের অসহনীয় সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
দশম সংসদ নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক না হওয়া সত্ত্বেও সরকারি দল মনে করছে নির্ধারিত মেয়াদের পর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরা আরো যুক্তি দেখিয়ে বলেন, আমাদের সংবিধানে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো বিধান নেই। তাদের এ যুক্তি যে অমূলক তা সংবিধানের বিধানাবলি পর্যালোচনা থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত।
সংসদের মেয়াদ বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্রপতি আগে ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে। সংবিধানের এ বিধানটি দিয়ে একটি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে সংবিধানের বর্তমান বিধান অর্থাৎ মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিন আগে এবং মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং আগেকার বিধান মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের আগেকার বিধান ও বর্তমান বিধান বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, উভয় বিধানে মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদের আগে অর্থাৎ পাঁচ বছর পূর্ণ করার আগে যেকোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটিই মধ্যবর্তী নির্বাচন। সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠÑ এ পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে সংবিধানে বর্তমানে যে বিধান আছে সে বিধান কার্যকর ছিল। সুতরাং একই বিধানের অধীন সংসদের পাঁচটি মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। সঙ্গত কারণেই অনেকের মনে প্রশ্ন উদয় হতে পারে আমাদের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালে পদত্যাগ করবেন অথবা সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবেন। এ বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন থাকাকালীন তিনি কী করে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য পরামর্শ দেবেন? এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ষষ্ঠ সংসদ ভেঙে দেয়াটি প্রণিধানযোগ্য। তা ছাড়া আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিতে আমাদের এ সংবিধান রচিত হয়েছে। দেশের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের অভিপ্রায় বিষয়ে গণভোটের আয়োজন করা হলে দেশের বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সপক্ষে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়বে এ বিষয়ে বোধকরি দ্বিমত পোষণের কোনো অবকাশ নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে সংবিধানে তো বর্তমানে গণভোটের বিধান নেই।
সংবিধানে এর উত্তর খুঁজতে গেলে বলতে হয় সংবিধানে যখন গণভোটের বিধান ছিল সেটি সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনসংক্রান্ত। আর তাই মধ্যবর্তী নির্বাচন বিষয়ে জনগণের অবস্থান পক্ষে নাকি বিপক্ষে গণভোটের মাধ্যমে তা জানার জন্য সংবিধান কোনোভাইে অন্তরায় নয়। আমাদের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন মেয়াদ অবসানের আগে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ চারটি নির্বাচনও মধ্যবর্তী নির্বাচন ছিল। যদিও সে সময় রাষ্ট্রতিশাসিত সরকারব্যবস্থা ছিল তা সত্ত্বেও সরকারব্যবস্থার ভিন্নতা এতদবিষয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অভিন্ন হওয়ায় তা কোনোভাইে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ক্ষুণœ করে না। আর তাই দেশবাসীর প্রত্যাশা যেকোনো ধরনের খোঁড়া যুক্তি দিয়ে সংবিধান দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত নিয়মের ব্যত্যয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে কোনো ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি না করাই কাম্য।
লেখক : সাবেক জজ; সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.