রাঙ্গামাটি থেকে পাচার হচ্ছে ভারতীয় কাঠ by সুশীল প্রসাদ চাকমা

রাঙ্গামাটি থেকে পাচার হচ্ছে ভারতীয় সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতের মূল্যবান কাঠ। পাচারের কৌশল হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে স্থানীয় জোতবাগানের অনুকূলে ইস্যুকৃত ফ্রি পারমিটগুলো। এসব ফ্রি পারমিটের আড়ালে মূলত পাচার করা হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের মিজোরাম থেকে চোরাই পথে আনা বিপুল পরিমাণ কাঠ। তবে বিষয়টির ব্যাপারে জানা নেই বলে দাবি করেছেন বন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। অথচ পাচারকালে অনেক সময় বিপুল পরিমাণ কাঠ আটকও করছে বন বিভাগ। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর প্রায় দেড় কোটি টাকার কাঠ আটক করেছে তারা। কিন্তু আটক কাঠগুলো স্থানীয় জোতবাগানের বলে দাবি করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি রুট দিয়ে ভারতীয় কাঠ পাচার হয়ে আসার বিষয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগ করলে বন বিভাগের রাঙ্গামাটি সার্কেলের বনসংরক্ষক মো. আবু হানিফ পাটোয়ারী বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা রেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন। এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সামসুল আজমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে ব্যস্ত আছেন উল্লেখ করে পরে ফোন করবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া পাচারে কিছুসংখ্যক কাঠচোর, অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের বন কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেলেও তা অস্বীকার করে বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বন বিভাগের বরকল রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রকিব সরকার। তিনি তার রেঞ্জের অধীন রাঙ্গামাটির রুট দিয়ে ভারতীয় কাঠ পাচার হয়ে আসার ব্যাপারে জানা নেই বলে জানান। স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, স্থানীয় বিভিন্ন জোতবাগানের মালিকের নামে নির্ধারিত অংকের পার্সেন্টেজ নিয়ে ফ্রি পারমিট ইস্যু করে বন বিভাগের বরকল রেঞ্জ। অনেক জোতবাগানে অল্প পরিমাণ কাঠ থাকলেও প্রতি পারমিটে দেখানো হয় হাজার হাজার ঘনফুট। কিন্তু বাস্তবে সেসব পরিমাণের অংক কেবল কাগজে। যত বেশি পরিমাণ দেখানো যায় রেঞ্জ কর্মকর্তা-বন কর্মীদের তত লাভ। কারণ পার্সেন্টেজ আদায় করা হয়ে থাকে প্রতি ঘনফুট হিসাবে। আর ডি-ফর্ম থেকে শুরু করে টিপি (ট্রান্সফার পাস) পর্যন্ত প্রতি ঘনফুট (সেগুন) ৮০ টাকা এবং অন্যান্য ৫০ টাকা হারে পার্সেন্টেজ আদায় করে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের কর্মকর্তা-কর্মীরা। এতে প্রতি পারমিটে লাখ লাখ টাকা আয় হয় তাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রাঙ্গামাটি থেকে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে ভারত থেকে আনা প্রচুর কাঠ। এসব বিদেশী কাঠ চোরাই পথে পাচার হয়ে আসছে রাঙ্গামাটি জেলার বরকলের সীমান্তবর্তী এলাকা ঠেগামুখ, বড়হরিণা ও ছোটহরিণা নৌরুট দিয়ে। ভারতের মিজোরাম থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করান হচ্ছে চোরাই কাঠগুলো। সূত্রমতে, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সীমান্ত চৌকি না থাকায় রাতের আঁধারে বাঁশের চালি করে প্রতিনিয়ত বিদেশী চোরাই কাঠ বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছে উভয় দেশের সংঘবদ্ধ একাধিক চোরাকারবারি চক্র। এরপর চোরাই পথে আনা বিদেশী কাঠগুলো স্থানীয় বিভিন্ন জোতবাগানের মালিকের নামে ইস্যুকৃত ফ্রি পারমিটের আড়ালে অভিনব কায়দায় পাচার হয়ে আসে। সেগুলো দেশীয় ইঞ্জিনবোটযোগে বরকল ও হরিণা নৌরুট দিয়ে আনা হয় সরাসরি রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই সদরে। সেখান থেকেই পাচার হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এদিকে পাচার রোধে বন বিভাগের টহল দল ও নিরাপত্তাবাহিনীর তৎপরতা থাকলেও জোত পারমিটের আড়ালে পরিবহন করায় বিদেশী কাঠগুলো চেনার কোনো উপায়ই থাকে না বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা। ফলে বৈধ কাগজপত্রমূলে প্রচুর বিদেশী কাঠ পাচার হয়ে গেলেও সেগুলো আটক করা সম্ভব হয় না। যেগুলোর সঠিক কাগজপত্র থাকে না কেবল সেসব কাঠ আটকের সুযোগ থাকে বন বিভাগের।এদিকে সংশ্লিষ্টদের মতে, ভারতের মিজোরাম থেকে পাচার হয়ে আসা সেগুন কাঠগুলো অতি উত্তম মানের। সেজন্য এদেশীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে কাঠগুলোর কদর বেশি। অন্যদিকে ভারতের দুর্গম মিজোরামে সেগুন কাঠের মূল্য একেবারে কম। কিন্তু বাংলাদেশে পাচার করে বিক্রি করতে পারলে পাওয়া যায় সেদেশের চেয়ে অনেকগুণ বেশি দাম। তাই পাচারকারী চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাচ্ছে প্রচুর ভারতীয় সেগুন কাঠ।

No comments

Powered by Blogger.