মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট

আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রেরিত রেমিটেন্স। বর্তমানে প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশী বিদেশে কর্মরত বলে সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে এক প্রশ্নোত্তরে জানানো হয়েছে। বিদেশে থাকা অঘোষিত কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাও কম নয়। সব মিলিয়ে এক থেকে সোয়া কোটি বাংলাদেশী শ্রমজীবী মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। রাষ্ট্র যাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনি, তারা স্ব-উদ্যোগে স্ব-প্রণোদনায় বিদেশ-বিভূঁইয়ে নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। এই পরিশ্রমী, সাহসী নাগরিকরা আজ যে কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে- সেটা রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতায়। বিশ্বব্যাপী প্রবর্তিত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু না করতে পারার ব্যর্থতায় বিদেশে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীর জীবন-জীবিকা তো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেই উপরন্তু তারা এখন ফেরারি উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীতে পরিণত হওয়ার হুমকির সম্মুখীন। যদি তাই ঘটে, এই বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী যদি বাংলাদেশের এমআরপির অভাবে দেশের নাগরিকত্ব এবং বিদেশ-বিভূঁইয়ে কাজের অধিকার হারান, তাহলে তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রবাহ অব্যাহত থাকবে কি?
মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত প্রয়োজন সাড়ে ৫৩ লাখ, ইস্যু ৫৩ হাজার শীর্ষক প্রতিবেদনে এমআরপি সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রথম বৈঠকের তথ্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের বৈঠকে উপস্থিত সবাই দিন রাত খেটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব এমআরপি ইস্যু করতে পারবেন এমন আশা ব্যক্ত করেছেন। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বরের পর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছাড়া কাউকে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করতে দেয়া হবে না বলে সময় বেঁধে দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ৫৩ লাখ এমআরপি ইস্যুর কাজ সম্পন্ন করার কোনো বিকল্প নেই। শুধু আশাবাদে এই কাজ শেষ করা অসম্ভব বলে আমরা মনে করি। এজন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা দেখিয়েছেন সব সময়। এখন সময় এসেছে দেশের জন্য তার নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার।

No comments

Powered by Blogger.