বাংলাদেশের বন্ধুরা উদ্বিগ্ন, অনুরোধ করলে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি -বার্নিকাট

নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশের বন্ধুরা চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। অনুরোধ করলে আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থেই শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ চায়। তিনি বলেন, কোন পদ্ধতিতে রাজনৈতিক বিরোধের অবসান হবে তা বাংলাদেশীদেরই নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর গতকাল রাজধানীর আমেরিকান কাবে আয়োজিত প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বার্নিকাট এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি কথা আমি অত্যন্ত সরাসরি বলতে চাই যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট শক্তি বা দলকে সমর্থন দেয় না। সরকারসহ সব বাংলাদেশীর সাথে আমরা কাজ করতে চাই। বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতা ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাসে আগুন ও রেললাইন চ্যুত করাসহ নির্বিচার আক্রমণে নিরীহ মানুষ হতাহত হচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংসতার ব্যবহারকে কঠোরভাবে নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই। সহিংসতা বন্ধ, অহিংস উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি ও দায়িত্বশীলতার সাথে রাজনৈতিক অধিকার ব্যবহারে সব পক্ষের ভূমিকা রাখতে হবে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ‘অনস্বীকার্যভাবে ক্রটিপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে কথা বার্নিকাট পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেছিলেন তা কিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব- প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবার জানা এবং তা অন রেকর্ডেই আছে। আমি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ওপর জোর দেবো। এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং নির্বাচনসংক্রান্ত ইস্যুগুলো মোকাবেলার জন্য অনেক উপায় আছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে এই সুযোগগুলোকে বাংলাদেশ কাজে লাগাবে বলে আমরা গভীরভাবে প্রত্যাশা করি।
ওয়াশিংটনে সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিশওয়ালের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারানকো ও বিসওয়ালের মধ্যে বৈঠকের বিস্তারিত আমি জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের বন্ধুরা চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। অনুরোধ করলে আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, যেকোনো ধরনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে হতাহতের পরিমাণও বেড়ে যায়। এটি বিভিন্ন ধরনের অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে। মানুষ যখন চলাফেরা করতে পারে না, কাজ যখন করতে পারে না, পণ্য পরিবহন যখন বাধাগ্রস্ত হয় তা দেশের লাইফলাইনকে হুমকিতে ফেলে। অস্থিতিশীলতা চমরপন্থার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাটা জরুরি। এর ফলে বাংলাদেশ তার অগ্রগতির যাত্রা আবারো শুরু করতে পারবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের সাথে চলমান সহিংসতার কোনো সম্পর্ক আছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখতে চাই। এ জন্য বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কর্মসূচিও রয়েছে। বাংলাদেশের আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের সাথে মতবিনিময় করা আমার দায়িত্ব। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে আমি বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং সার্বিকভাবে বাংলাদেশকে জানার চেষ্টা করব। বাংলাদেশের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র তাই চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে বৈঠককে ‘এ ধরনের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম’ বলে আখ্যায়িত করে বার্নিকাট বলেন, এতে আমরা একমত হয়েছি যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত শক্তিশালী অংশীদার। গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে আমরা একসাথে কাজ করব।
আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। আইএসবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দেয়ার জন্য আমরা অংশীদারদের উৎসাহিত করি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী চলতি সপ্তাহে সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। আমার মনে হয় আইএসআইসহ সহিংস চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে এটি বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান তুলে ধরে।
বাংলাদেশের ব্যবসায় ও বিনিয়োগ পরিবেশসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিতে চায়। সহায়তা নয়, বাণিজ্য বাংলাদেশের এ মনোভাবকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। দাতাদের অর্থের চমৎকার ব্যবহার করে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সাথে আমার দু’টি বৈঠক হয়েছে। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, যা যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বাংলাদেশীদের জন্যও কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার মতো কোনো স্বপ্ন নির্ধারণ করেছেন কি না জানতে চাইলে বার্নিকাট বলেন, মজিনা আমার অনেক পুরনো বন্ধু। দক্ষিণ এশিয়ায় ও আফ্রিকার অনেক দেশে আমরা একসাথে কাজ করেছি। আমার স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশীরা যাতে তাদের নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এটিকে কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আমি আবদ্ধ করব না। তবে কয়েকটি বিষয়ে আমার আগ্রহ রয়েছে। তার একটি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। বিশেষ করে তৈরী পোশাক শিল্পে নারীদের অবদান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। আর অন্য ইস্যুটি হলো জলবায়ুু পরিবর্তন। জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করতে না পারার পরিণতি বাংলাদেশ এখনই ভোগ করছে। জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা এবং এর সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশ্ব ফোরামে জলবায়ুসংক্রান্ত আলোচনায়ও বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.