রাঙ্গুনিয়ায় ট্রাকে হামলা- পেট্রোল বোমায় পুড়ল সেলিম দুলাল ও আলীর স্বপ্ন

প্রায় ১৫ বছর ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করছেন মো. সেলিম। এ থেকে প্রতিদিন তার আয় হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। ছয় সদস্যের পরিবারে জীবিকা নির্বাহের তিনি ছিলেন একমাত্র ভরসা। টানা হরতাল-অবরোধে সেলিমের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। উপায়ান্তর না দেখে সোমবার ভোরে হরতালের মধ্যেই ঘর থেকে বের হন তিনি। গাড়িভর্তি বালু নিয়ে প্রথমে যান বাংলাখালী এলাকায়। কিছু টাকা আয় করে সোমবার রাতে বাড়ি ফিরছিলেন সেলিম। কিন্তু তার গাড়ি রাঙ্গুনিয়া থানার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মহাজন বটতল এলাকায় পেঁৗছতেই পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। বাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে থাকতেই পুড়ে যায় সেলিমের মুখ ও হাত। তার সঙ্গে অগি্নদগ্ধ হন ট্রাকে থাকা দুলাল ও আলী হোসেন। বাড়ি খুব কাছে থাকলেও এ তিনজনেরই ঠিকানা এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের মেডিকেল অফিসার মিশমা ইসলাম সমকালকে জানান, আহতদের মধ্যে সেলিমের শরীরের ২০ শতাংশ, দুলালের ১৫ ও আলী হোসেনের ৬ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে দুলাল ও সেলিমের মুখের অধিকাংশই এবং তাদের শ্বাসনালির কিছু অংশও পুড়ে গেছে। সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
গতকাল মঙ্গলবার চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, স্বামীর বেডের পাশে বসে বিলাপ ধরে কাঁদছেন সেলিমের স্ত্রী স্বপ্না বেগম। এ সময় তিনি এমন নির্মমতার বিচার চান এবং আর্থিক সাহায্যেরও দাবি জানান। তার পাশেই অঝোরে কাঁদতে দেখা গেল আয়েশা বেগম, আনু বেগম ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অগি্নদগ্ধ হওয়ায় কাঁদছেন তারাও। সেলিম রাঙ্গুনিয়ার নবগ্রামের লেচু বাগান এলাকার মৃত নুরুল হক ছেলে। সেলিমের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এমন অবস্থায় বাকরুদ্ধ স্বপ্না বেগম। তার ছেলে মো. বেলাল সমকালকে বলেন, 'বাবার সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। যে কারণে একপর্যায়ে বাবাকে সাহায্য করতে লেখাপড়া ছেড়ে কাজে যোগ দিই। দুই জনের আয়ে মোটামুটিভাবেই সংসার চলছিল। শঙ্কার মধ্যেও ঘর থেকে বের হয়ে উপার্জন করতে গিয়ে বাবার এমন অবস্থা। যা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না।'সেলিমের মতো অগি্নদগ্ধ আরেক হেলপার মো. দুলাল। ছয় মেয়ে ও এক ছেলের জনক তিনি। তিন মেয়েকে কোনোভাবে কষ্ট করে বিয়ে দিলেও এখনও ঘরে আছে তিন মেয়ে। তাদের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ের বয়স হলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বিয়ে দিতে পারেননি দুলাল। অন্য এক মেয়ে ও এক ছেলেকে শত কষ্ট এবং বাধার মধ্যেও লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন দুলাল। তিনি রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনার উত্তর বনগ্রাম এলাকার মৃত আবদুল মাজিদ তালুকদারের ছেলে।
অগি্নদগ্ধ মিনি ট্রাকচালক আলী হোসেনের মেয়ের নামও সোনিয়া। তবে তার বয়স মাত্র ছয় মাস। সোমবার রাতে দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমায় তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। প্রাণে বাঁচতে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আগুন থেকে বাঁচতে পারেননি। উল্টো আঘাত পান মাথা ও পায়ে। আলী হোসেনের স্ত্রী আনু বেগম সমকালকে বলেন, 'ছয় মাসের মেয়ে সোনিয়া অসুস্থ। বাকি দুই ছেলেও স্কুলে পড়ছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি এখন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছেন। এ অবস্থায় কীভাবে সংসার চালাব, বুঝে উঠতে পারছি না।' তিনি সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান।

No comments

Powered by Blogger.