নেতাকর্মীদের না পেয়ে স্বজনদের হয়রানি by আবু সালেহ আকন

পুলিশের হয়রানি ও গ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন এখন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আত্মীয়স্বজনও। ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম না হলে পুলিশ তাদের আত্মীয়স্বজনদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এমনই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এতে ওইসব পরিবারগুলোতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত রোববার রাতে পুলিশ রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ২০ দলীয় জোটের এক নেতার আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালায়। মামুন নামের ওই আত্মীয়কে পুলিশ না পেয়ে পুলিশ তার বাড়ি থেকে শফিউল আলম নামের অপর এক আত্মীয়কে তুলে নেয় বলে তার আত্মীয়স্বজন অভিযোগ করেন। মামুনের বাড়িতে শফিউল আলম বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তার ওপর মামুনকে না পেয়ে পুলিশ লালমাটিয়া এলাকায় তার শ্বশুর বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে পুলিশ মামুনের শ্বশুর নুরুল আবেদিন, শ্বাশুড়ি শাহানা বেগম এবং তাদের মেয়ে নাঈমা আবেদিনকে আটক করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কি কারণে তাদের আটক করা হয়েছে তাও কেউ জানতে পারেননি। এ দিকে শফিউলের এক আত্মীয় বলেছেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা জানতে পারেননি তিনি কোথায় আছেন। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, শফিউল ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন। পুলিশের কেউ অবশ্য বিষয়টি স্বীকার করেনি।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে ওই কলেজের এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হোসাইনকে গ্রেফতার করে মিরপুর থানা পুলিশ; কিন্তু আটকের পর পুলিশ বিষয়টি এড়িয়ে যায়। রাতে খবর শুনে তার ভাই আব্দুল্লাহ হাসান ছোট ভাইয়ের খোঁজ নিতে থানায় যান। পুলিশ সেখান থেকে তাকেও আটক করে। এ নিয়ে মিরপুর থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করে। এ দিকে পুলিশ রাতে হাসানের শ্যামলীর বাসায় অভিযান চালায়। রাতে তার বাবা এনায়েত উল্লাহর মগবাজারের বাসায়ও অভিযান চালিয়ে পুলিশ সেখান থেকে তার বাবাকে আটক করে। পর দিন ১০ ফেব্রুয়ারি হাসান ও হোসাইনকে আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত হাসানকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং হোসাইনকে এক দিনের রিমান্ডে দেন। অপর দিকে এনায়েত উল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই দিন পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
এভাবে দেশের সর্বত্রই পুলিশ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদেরকে না পেয়ে তাদের আত্মীয়স্বজনকে হয়রানি ও আটক করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের এক স্বজন জানিয়েছেন, পুলিশ ইসহাক সরকারকে খুঁজে না পেয়ে প্রায়ই তার বাড়িতে হানা দিচ্ছে এবং মাঝে মধ্যেই পুলিশ তার বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীকে গালাগাল করে আসছে। সর্বশেষ গত শনিবার বিকেলে ইসহাক সরকারের বাসার গ্যাস লাইন কে বা কারা কেটে দেয়। তবে পুলিশ এই বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে তিতাসের লোকজন এটা করতে পারে বিল বকেয়া পড়ার কারণে; কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের কোনো বকেয়া বিল নেই।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি ক্রসফায়ারে নিহত নুরুজ্জামান জনির বিধবা স্ত্রী মুনিয়া পারভীন মনিষার নেতৃত্বে পরিবারের সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে তার গুলশান কার্যালয়ে যান। সন্ধ্যা ৭টায় গুলশানে পৌঁছলে সেখান থেকে গুলশান থানা পুলিশ নিহত জনির বাবা ইয়াকুব আলী, মা মরিয়ম বেগম নিলু ও ছোট বোন ফাতেমাতুজজোহরা তুলিকে তুলে নিয়ে গিয়ে এক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়। তবে পুলিশ জনির খালাতো বোন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশীতাকে গ্রেফতার করে পর দিন তাকে আদালতে পাঠায়।

No comments

Powered by Blogger.