দ্বিমুখী ক্ষতিতে প্রান্তিক মানুষ by দেলোয়ার হুসেন ও মামুন আব্দুল্লাহ

টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে দ্বিমুখী ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের প্রান্তিক মানুষ। বিশেষ করে কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভাসমান হকার, দৈনন্দিন আয়ের ওপর নির্ভরশীল স্বল্প আয়ের মানুষের অবস্থা এখন নিঃস্ব হওয়ার মতো। রাজনৈতিক অস্থিরতায় তাদের কাজের সুযোগ যেমন সংকুচিত হয়ে পড়েছে, তেমনি কমে গেছে তাদের আয়। ফলে বাধ্য হয়ে জীবনযাত্রার মান কমাতে হয়েছে। একদিকে কৃষকরা ক্রেতার অভাবে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছে না, অন্যদিকে সরবরাহ কম থাকায় তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ফলে দুই দিক থেকেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে টানা লোকসানে পড়ে পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন কৃষক ও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তারা। তখন দেশে পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেবে, যা মূল্যস্ফীতির হারকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। এমনকি খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সোমবার এক অনুষ্ঠানে স্বীকার করেছেন, অবরোধ-হরতালের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের কৃষকরা। তারা পথে বসে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এমকে মুজেরী যুগান্তরকে বলেন, যে করেই হোক উৎপাদন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে। কৃষক বা ছোট উদ্যোক্তারা পণ্যের বিপণন করতে না পারায় এখন উৎপাদন করছেন না। এই অবস্থা বেশিদিন চললে সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দেবে। উৎপাদন কমে গেলে দেশে খাদ্য ঘাটতি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনই সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।
কৃষকের নাভিশ্বাস : পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিশেষ করে কৃষকের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। একদিকে তারা উৎপাদিত পণ্য ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করতে পারছেন না, অন্যদিকে কীটনাশক, সার, বীজ এবং ডাল, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। শীত মৌসুমে উৎপাদিত পণ্যই একমাত্র কৃষকরা পুরোমাত্রায় ঘরে তুলতে পারেন। অন্য সময়ে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বা বন্যার কারণে কৃষক পুরো ফসল ঘরে তুলতে পারেন না। এবার শীতের সবজি ও অন্যান্য পণ্যের বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে কৃষক উৎপাদিত পণ্য ক্ষেত থেকে গ্রামের পাইকারি বাজারে নিয়ে এসেও ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছে না। এতে বাজারেই পণ্য পচে নষ্ট হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষেত থেকে পণ্য তোলার খরচও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেক পণ্য ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে।
যুগান্তরের নরসিংদী প্রতিনিধি বিশ্বজিত সাহা জানান, অবরোধ শুরুর পর নরসিংদীর চৈতাবো এলাকায় নাশকতা আতংকে সবজির ট্রাক উল্টে মারা গেছেন শিবপুরের ৫ জন কৃষক ও পাইকার। এই ঘটনার পর সবজি নিয়ে কৃষক ও পাইকাররা ঢাকামুখী হচ্ছেন কম। স্থানীয় পাইকারি সবজির বাজারগুলোও প্রায় পাইকারশূন্য। পরিবহন সংকটে নরসিংদী থেকে সবজি এনে সেগুলো রফতানিও হচ্ছে কম। ফলে কৃষকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। তারা ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন। শস্য বিক্রি করে ঋণ শোধের কথা। কিন্তু এখন পণ্য বিক্রিই করতে পারছেন না। ঋণ শোধ করবেন কীভাবে।
মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণপুর সবজির হাটে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের গ্রাম থেকে সবজি চাষীরা ভ্যানে ঝুড়িভর্তি বিভিন্ন সবজি নিয়ে হাটে জড়ো হয়েছেন। কিন্তু টানা হরতালে পাইকারি ক্রেতা কম আসায় সবজি বিক্রি করতে পারছেন না। পাইকারের তুলনায় সবজির সরবরাহ বেশি। ফলে কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে সবজি বিক্রি করছেন।
আধা বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের পুটিমারা গ্রামের সবজি চাষী ফিরোজ মিয়া। তিনি জানান, হরতালের এক সপ্তাহ আগে যে বেগুন এক হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ দরে। প্রতি মণে তাদের লোকসান হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বেগুন সপ্তাহে দুই দিন তুলতে হয়। সময়মতো না তুললে বেগুনে পোকা ধরে পচে যায়। তাই বাধ্য হয়েই হরতাল-অবরোধের মধ্যেই জমি থেকে বেগুন তুলতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় বিক্রি করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারলেও কীটনাশক, সার, বীজ কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ডাল, তেলও কিনতে হয় বেশি দামে। এগুলোর সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। ফলে দুই দিক থেকেই আমরা লোকসানে পড়ছি।
একই কথা বললেন নারায়ণপুর বাজারে টমেটো বিক্রি করতে আসা সবজি চাষী নুরুল ইসলাম। তিনি জানান, আগে টমেটো ১৬ টাকা কেজি বিক্রি হতো। এখন তা ৮-৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে যাওয়ায় এখন উৎপাদন খরচও উঠবে না। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এহন বেকুপার (অসহায়) মধ্যে পড়ছি। গিরস্ (কৃষক) মইর‌্যা যাওয়ার অবস্থা হইছে।’
সবজি চাষী বায়েজিদ বলেন, ‘সকাল ৮টার সময় টমেটো নিইয়্যা বাজারে আইছি, হরতালের কারণে ঢাকা থাইক্যা পাইকার আসতে পারে নাই। কি কইর‌্যা আমরা চলাফেলা করি বুঝতে পারছি না।’
সারা দেশেই কৃষকের একই অবস্থা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের অবস্থা আরও খারাপ। তারা উৎপাদিত পণ্য ক্ষেতেই নষ্ট করে দিচ্ছেন। কৃষি বিপণন অধিদফতর সূত্র জানায়, কৃষকের ক্ষতি নিরূপণের বিষয়ে তাদের জেলা অফিসগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলোর তথ্য পাওয়া গেলে মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। তখন মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংকটে ক্ষুদ্র শিল্প : দেশের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্ষুদ্র শিল্প। এগুলোর পণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা চলে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে। অবরোধের কারণে পণ্য বিপণন করতে না পারায় তারা এখন উৎপাদনও কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহ সংকটও প্রকট হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের সূত্র জানায়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুঁজির ঘূর্ণন হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে। ফলে এক সপ্তাহে কোনো কারণে পণ্য বিক্রি করতে না পারলে তারা পুঁজির সংকটে পড়েন। চলমান টানা অবরোধের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে পথে বসে গেছেন। তাদের টেনে তুলতে হলে এখন নতুন পুঁজির জোগান দিতে হবে। তা না হলে ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবেন না তারা।
বগুড়া ব্যুরো প্রধান নাজমুল হুদা নাসিম জানান, উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারায় মালিকরা শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে অনেকে তাদের শ্রমিকদের বিদায় করে দিচ্ছেন। বেকার শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
বগুড়া বিসিক সূত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে তিন হাজার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রয়েছে। এখানে হস্তশিল্প, কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, তালের আঁশের ঝুড়ি, তাল পাখা, মোমবাতি, তাঁতের শাড়ি, স্পেয়ার পার্টস, কোদাল, কাস্তেসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী উৎপন্ন হয়। এসব পেশার সঙ্গে ২০ হাজার মানুষ জড়িত। মালিকরা ব্যাংক ঋণে বা নিজস্ব টাকায় পণ্য সামগ্রী তৈরি করলেও সেগুলো বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না। বাইরে থেকে ক্রেতা আসতে না পারায় উৎপাদিত পণ্যে ঘর ভরে যাচ্ছে। শিগগিরই এসব পণ্য বিক্রি করতে না পারলে ব্যবসায়ীরা কর্মচারীদের বেতন দিতে ব্যর্থ হবেন। ব্যাংকের সুদ বৃদ্ধি পাবে। লোকসান গুনতে হওয়ায় ইতিমধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
বগুড়া শহরের চকলোকমান এলাকার পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক শেখ মোহাম্মদ আবু হাসানাত জানান, তার প্রতিষ্ঠানে নকশিকাঁথা, চাদর, তালের আঁশের ঝুড়িসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। এসব পণ্য বিদেশে রফতানি হয়ে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০০ নারী শ্রমিক কাজ করেন। শীত মৌসুমে এসব পণ্যের চাহিদা বেশি। বিপুলসংখ্যক পণ্য তৈরি করা হলেও বিদেশ থেকে ক্রেতা না আসায় বিক্রি হচ্ছে না। এ অচলাবস্থার নিরসন না হলে তিনি তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যর্থ হবেন। ফলে তাদের কাজ থেকে বিদায় করে দিতে হবে।
বগুড়া বিসিকের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম সানাউল হক জানান, দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে এ শিল্পের অবস্থা আরও খারাপ হবে।
পাইকারি বাজারে ক্রেতা নেই : গ্রামের পাইকারি বাজারগুলোতে ক্রেতা নেই। পরিবহন সংকট ও বোমা আতংকের কারণে পাইকাররা গ্রামের হাটগুলোতে যাচ্ছেন না। ফলে ক্রেতা না থাকায় পাইকারি বাজারগুলো হয়ে গেছে মৃতপ্রায়। নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাট এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য। ক্রেতা না থাকায় তাঁতিরাও এখন আর পণ্য নিয়ে হাটে আসেন না। তাঁতিদের ঘরে জমছে কাপড়ের স্তূপ। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁতিরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। অবরোধের কারণে বাবুরহাটের সাপ্তাহিক লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা থেকে নেমে ৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বস্ত্রশিল্পে। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাবুরহাটে বিভিন্ন প্রকারের কাপড়ের প্রায় ৫ হাজার দোকান রয়েছে। এ কাপড়ের বাজারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীজুড়ে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক টেক্সটাইল, ডাইং, অ্যামব্রয়ডারিসহ সহায়ক শিল্প-কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ।
পাইকারি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, যে হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রচুর বেচাকেনা হতো অবরোধের সহিংসতার আতংকে তা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
মুন টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপক আলামিন বলেন, অবরোধে ব্যবসায়ীদের মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, অবরোধের কারণে সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার শেখেরচর বাবুরহাটের লেনদেনে ধস নেমেছে। পূর্বে যেখানে প্রতি সপ্তাহে ৭শ’ থেকে ৮শ’ কোটি টাকা লেনদেন হতো এখন তা ৫০ কোটি টাকাও হয় কিনা সন্দেহ রয়েছে। অন্য পাইকারি হাটগুলোরও একই অবস্থা।
ভাসমান হকারদের অবস্থা শোচনীয় : টানা অবরোধে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ভাসমান হকারদের অবস্থা খুবই করুণ। ভাসমান হকাররা বিশেষ করে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেল স্টেশনে পণ্য বিক্রি করে। এসব স্থানে যাত্রী কম থাকায় তাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়া বাস-ট্রেন ঠিকমতো চলাচল না করায় তাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীর আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন যারা বিভিন্ন পণ্য এনে ভাসমান অবস্থায় বিক্রি করতেন পরিবহন সংকটে তারাও নিয়মিত আসতে পারছেন না। ফলে তাদের আয়ের সুযোগ কমে গেছে। নগরীর ভাসমান শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ। কাজ না পেয়ে অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন।
দুগ্ধ খামারিদের দুর্দিন : মিল্কভিটা, আড়ং, প্রাণ কোম্পানিগুলোর দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে দুগ্ধ খামার। খামারিরা দুধ উৎপাদন করে ওইসব কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। কোম্পানি তা প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করে। অবরোধ শুরুর পর থেকে বাজারে দুধের বিক্রি কমে গেছে। ফলে কোম্পানিগুলো দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারা খামারিদের কাছ থেকে দুধ কিনছে কম। কিন্তু খামারিদের বক্তব্য- কোম্পানি বা ক্রেতারা দুধ না কিনে থাকতে পারে। কিন্তু আমরা তো আর গরুর দুধ সংগ্রহ না করে থাকতে পারি না। কারণ গরুকে প্রতিদিন খাওয়াতে হয়। আর গাভী প্রতিদিনই দুধ দেয়। এই দুধ সংগ্রহ না করে কোনো উপায় নেই। সংগৃহীত দুধ বিক্রি করতে না পেরে তা রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদও করেছেন খামারিরা।
শাহজাদপুর প্রতিনিধি মুমীদুজ্জামান জাহান জানান, এ অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ ৮৫ হাজার লিটার দুগ্ধ উৎপাদন হয়। লাগাতার হরতাল-অবরোধে দুধের বিক্রি কমে গেছে। ফলে দেড় মাসে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারলেও অবরোধে সরবরাহ কম থাকায় গো-খাদ্য খৈল, ভুসি ও দানাদার গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্রতিদিন কৃষকদের গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ লোকসান হচ্ছে ৩৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে দেড় মাসে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া গবাদি পশুর চিকিৎসা ও অন্য খরচ বাদে বাকি টাকা লোকসান হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.