সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ- হায় রে দুর্ভাগা দেশ!

সংবাদপত্রের যে ছবি পাষাণ হৃদয় গলিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা ঘটবে কি? সোমবার ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার একদল দুগ্ধ উৎপাদক প্রায় দুই হাজার লিটার দুধ সড়কে ঢেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা এ অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন ব্র্যাক ডেয়ারি চিলিং সেন্টারের সামনে। তাদের অভিযোগ_ চলমান অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন বিপুল লোকসান যাচ্ছে। যারা উৎপাদকদের কাছ থেকে প্রতিদিন দুধ কেনে তারাও নিরুপায়। কারণ দুধ কিনে স্থানীয় কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা গেলেও তার সবটা ঢাকা কিংবা অন্যান্য বড় শহরে পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। পেট্রোল বোমা এবং অন্যান্য ধরনের নাশকতাকে তাদের বড় ভয়। পাবনা থেকে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় পেঁৗছানোর দীর্ঘ পথের কোথায় নাশকতা সৃষ্টিকারীরা ওত পেতে রয়েছে সেটা কেউ বলতে পারে না। প্রক্রিয়াজাত করার পর দুধ বড় বড় বাজারে পেঁৗছাতে না পারলে মিল্ক ভিটা ও আড়ংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের লোকসান। সে কারণে তারা উৎপাদকদের কাছ থেকে দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দুধ তো আর হরতাল-অবরোধ মেনে উৎপাদন হয় না। অবোধ গাভীকে কেউ তো বোঝাতে পারবে না যে, হরতাল-অবরোধে ঢাকায় সরবরাহ পাঠানো যাচ্ছে না বিধায় প্রতিদিন তাদের কম দুধ দিতে হবে। আড়ং ব্রান্ডের দুধ প্রক্রিয়াজাত করে ব্র্যাক। এ প্রতিষ্ঠান তারা স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন পাবনা ও সিরাজগঞ্জ থেকে এক লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। মিল্ক ভিটা সংগ্রহ করে দুই লাখ লিটারের মতো। প্রাণসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহ দিনে এক লাখ লিটার। এখন সবার জন্যই দুর্ভাবনার বিষয়ের নাম হরতাল-অবরোধ। তারা বাজারের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদকদের কাছ থেকে কম দুধ কিনছে। কিন্তু উৎপাদকরা কী করবেন? তাদের পক্ষে তো উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। গবাদিপশুর পেছনে প্রতিদিন যে ব্যয় সেটাও তো কমবে না। আন্দোলনকারীরাও তাদের ছাড় দেবে না। এ অবস্থায় সড়কে দুধ ঢেলে দেওয়া ছাড়া তাদের আর কীই-বা করার আছে! হায় রে দুর্ভাগা দেশ, কেউ কি এদের কথা ভাববে না?

No comments

Powered by Blogger.