‘পদত্যাগ করুন, তবেই নিরাপদ অবতরণের বিষয়টি বিবেচনা করবে জনগণ’ -বিএনপি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্রুত পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে দ্রুত পদত্যাগ করুন। তবেই জনগণ আপনার নিরাপদ অবতরণের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। এসময় সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, সরকার জনগণের বৈধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কার্যক্রম বলে চালিয়ে দেয়ার প্রচারযুদ্ধ শুরু করেছে। আজ বুধবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার জনগণের বৈধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কার্যক্রম বলে চালিয়ে দেয়ার প্রচারযুদ্ধ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে  পেট্রলবোমায় আক্রান্ত মানুষের আর্তনাদকে পুঁজি করে আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি অর্জনে আওয়ামী ভণ্ডামী জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। কতিপয় দলকানা গণমাধ্যমে দিবা-নিশি অপপ্রচারের মাধ্যমে গোয়েবলসীয় কায়দায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের  নেতৃত্বে চলমান শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনকে কলুষিত করার হীন চক্রান্ত কখনও সফল হবে না। সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তথ্য-উপাত্ত সহকারে জাতির সামনে বারবারই উপস্থাপন করেছি, এসব জঘন্য পেট্রলবাজির সঙ্গে সরকারি দলের নেতাকর্মীরাই জড়িত। গণতন্ত্র মুক্তির ন্যায্য আন্দোলনকে দমন-পীড়নের সকল অপচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে এখন  কেবল নিয়ন্ত্রিত ও দলকানা কতিপয় মিডিয়ার বদৌলতে অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চায়। বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে লুট করা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চিরস্থায়ীকরণের প্রাণান্তকর আওয়ামী কসরত জাতীয় জীবনে চরম রাজনৈতিক সংকট উৎপত্তির মূল কারণ। গায়ের জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি ঘটানোর ফলেই সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বাকশালের অনুকরণে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের উগ্র বাসনাই জাতিকে চরম সংকটে নিপতিত করেছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিরোধী দলের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ক্যাবল লাইন কেটে দিয়ে এবং সর্বশেষ খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী  দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের সবক শেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতা-মন্ত্রীদের মিথ্যার  বেসাতি এ দেশের জনগণ ও সারাবিশ্ব জানে। দেশের পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের মতো- প্রধানমন্ত্রীর মঙ্গলবারের এ বক্তব্যের সমর্থন করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি ঠিকই বলেছেন, কারণ ১৯৭১ এ শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে জনগণের মুক্তি সংগ্রাম জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আর বর্তমানে গণতন্ত্র হত্যাকারী আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী গণতান্ত্রিক সমাজ পুন:প্রতিষ্ঠার দুর্বার আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় সমৃদ্ধ প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই। সেই জাতীয় স্পৃহা পূরণে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা, সাংবিধানিক, মৌলিক ও মানবাধিকার আদায়ের সংগ্রামে আন্দোলনরত জনগণ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত প্রায়। তিনি বলেন, মঙ্গলবারও গাইবান্ধার জামায়াতকর্মী মোস্তফা মঞ্জিলকে ঠা-া মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে সরকারি পেটোয়া র‌্যাব-পুলিশ বাহিনী। পুলিশি নির্যাতনে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেছে জামায়াত কর্মী শফিকুল ইসলাম। আর রূপক মিয়াকে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করে পুলিশ। আমরা এহেন ঘৃণ্য নরহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী আদালতে এসব নরহত্যার বিচার করা হবে। বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনার পিতা রক্ষীবাহিনী সৃষ্টি করে ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন। অসংখ্য বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা করে হত্যার রাজনীতি প্রচলন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে স্বঘোষিত স¤্রাট বনে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। আপনিও চলমান গণআন্দোলনকে দমন করার জন্য আপনার পেটোয়া পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবিকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করে নরহত্যার নির্দেশ প্রদান করে গণতন্ত্রের শবযাত্রার আয়োজন সম্পন্ন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.