দিনাজপুরে যৌথবাহিনীর গুলিতে শিবির নেতা নিহত : ঢাকায় লাশ নিয়ে বিপাকে পুলিশ

নিহত মতিয়ার রহমান
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের নশরতপুর ইউনিয়ন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মতিয়ার রহমান মতি (২২) যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। গত শনিবার রানীবন্দরে এই গুলির ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুরের দিকে পুলিশ প্রহরায় তার লাশ নিয়ে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আনা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশটি গ্রহণ করেনি। পরে সেখান থেকে তার লাশ শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যায় তার লাশ নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। আমাদের দিনাজপুর ও চিরিরবন্দর সংবাদদাতা জানান, চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে গত শনিবার রাত ৮টায় নশরতপুর ইউনিয়ন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মতিয়ার রহমান ওরফে মতির বড় ভাই আনসার ভিডিপির ইউনিয়ন কমান্ডার ও পল্লী চিকিৎসক মো: খোদা বখসকে আটক করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের প্রতিবাদে পুলিশের সাথে স্থানীয়দের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে ১১০ রাউন্ড শটগানের গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন মতিয়ার রহমান মতি। এরপর রানীরবন্দরের সুইহারিবাজারে ১২ রাউন্ড গুলি ছুড়লে আহত হন দুইজন মহিলা। আহতরা হলেন নশরতপুর গ্রামের বালাপাড়ার আলাউদ্দিনের স্ত্রী হাজেরা বেগম (৫৫) এবং এমদাদুল হকের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪৫)। স্থানীয় কিছু মুখোশধারীর ও কথিত সাংবাদিক ফজলুর রহমানের সহযোগিতায় পুলিশ রাতে নশরতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: নুর-এ-আলম সিদ্দিকী নয়নের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পুলিশ রাত ১০ টায় গুলিবিদ্ধ মতিকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পুলিশ হেফাজতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ঢাকায় নেয়ার পথে তিনি মারা যান। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসে পুলিশ। কিন্তু মতিকে মৃত অবস্থায় দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রহণ করেননি। পরে সেখান থেকে লাশ নিয়ে রাখা হয় শেরেবাংলা নগর থানায়। সন্ধ্যায় তার লাশ নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। কিন্তু লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন না থাকায় মর্গ কর্তৃপক্ষ লাশটি গ্রহণ করেনি। রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত লাশটি মর্গের সামনে পুলিশের গাড়িতে ছিল। এসআই খলিলুর রহমান খলিল লাশটি নিয়ে মর্গের সামনে অবস্থান করছিলেন। মর্গ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সুরতহাল প্রতিবেদন ছাড়া তারা লাশ গ্রহণ করতে পারেন না।
নিহত মতি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের নশরতপুর দোহালাপাড়া গ্রামের মো: আবদুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র এবং ওই ইউনিয়নের শিবির সভাপতি। তার মৃত্যুর খবর শুনে পরিবারে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় এবং আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা দোষী পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। নিহত মতি দিনাজপুর সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
দিনাজপুর পুলিশ সুপার মো: রুহুল আমীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চলছে যৌথবাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। চিরিরবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ আনিছুর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবের উপস্থিতিতে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দিনাজপুর-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ান কমান্ডার অধিনায়ক জামাল হোসেন জানান, এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রায় ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট তরাল রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সাঁড়াশী অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে রানীপুর গ্রামের শমসের আলী মুন্সির ছেলে পুরাতন কাপড় বিক্রেতা আবুল কালাম (৩৫), আলোকডিহি গ্রামের বাবলু রহমানের ছেলে স্কুলপড়ুয়া ছাত্র মতিউর রহমান (১৫) এবং নশরতপুর বারজামাত গ্রামের ওবায়দুর রহমানের ছেলে আসাদুল ইসলামকে (১৮) আটক করেছে।  বর্তমানে রানীরবন্দরে সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে শহরে। গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষ ও মহিলাশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা।

No comments

Powered by Blogger.