ইছামতি নদী রক্ষা করুন by আবদুল বাছের শিকদার

ঢাকা জেলার ইছামতি। নদীটির উৎস পদ্মা। পতিত হয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদি খান উপজেলার সৈয়দপুরে, মানিকগঞ্জ জেলা থেকে আগত কালীগঙ্গা নদীতে। পদ্মা থেকে পানি ইছামতি নদীতে প্রবেশপথ ছিল দোহার থানার কার্তিকপুর ও নবাবগঞ্জ থানার কাশিয়াখালী। কার্তিকপুর রাস্তা নির্মাণ করে এবং কাশিয়াখালী অপরিকল্পিতভাবে বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগে এ পথে গোয়ালন্দ থেকে ঢাকার সদরঘাট যাতায়াত করত মোটর লঞ্চ। ইছামতি তীরের প্রায় সবগুলো খাল অপরিকল্পিতভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। ইছামতি নদীতে মাছের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। প্রায় চার লাখ লোকের বসবাস ইছামতি নদীর তীরে এবং তাদের বেশির ভাগ কৃষক। নদীর পানি গভীর নলকূপের পানির চেয়ে ইরি ধানের জন্য অধিক ফলদায়ক। নবাবগঞ্জ উপজেলার হাটবাজার, স্কুল, কলেজ, থানা, ইউএনও এবং সমাজকল্যাণ অফিস, ব্যাংক, আনসার, ভিটিসি ক্যাম্পসহ বহু প্রতিষ্ঠান ইছামতি নদীর তীরে। এখনো ঢাকা শহর থেকে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, লবণ, চিনি ও নির্মাণসামগ্রী যন্ত্রচালিত নৌকায় বান্দুরা পর্যন্ত আসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল নদীপথে আনা-নেয়ার খরচ কম কিন্তু নদীতে পানিস্বল্পতার জন্য মালভর্তি নৌযান স্থানে স্থানে ঠেকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে জোয়ারের আশায়। ইছামতিতে জোয়ারভাটা হয় বিধায় পানি বেশ স্বচ্ছ।
আগে ইছামতি নদীর গতিপথ ছিল বাহ্রা থেকে আগলা, গালিমপুর, চূড়াইন, শেখের নগর, সৈয়দপুর। নদীটির ওই অংশ বাঁকা ছিল বিধায় পানির স্বল্পতা দেখা দেয় এবং লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নাব্যতা রক্ষার্থে ঢাকা-১ আসনের এমপি সুবেদ আলী টিপু এগিয়ে আসেন এবং বাহ্রা থেকে আওনা, কৈলাইল, ভাঙ্গাভিটা, মরিচা পর্যন্ত খনন করে ইছামতি নদী কালীগঙ্গার সাথে যোগ করেন। এখন এই পথেই ইছামতি নদী। ইছামতি রক্ষাকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় এই নদী যদি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়, চার লাখ লোক, যাদের বেশির ভাগ কৃষক; তারা হালের গরু, হাঁস-মুরগি বিক্রি করে শহরপানে ছুটবেন স্ত্রী-সন্তানের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে। ইছামতি নদীর তীরে এমন কিছু ধনী লোক আছেন, যারা শিল্প গড়ে তুলতে সক্ষম। ইছামতি নদী রক্ষাকল্পে নিম্নে বর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক : ১. কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ স্লুইসগেট। ২. বন্ধ করে দেয়া সবগুলো স্লুইসগেট সংস্কার। ৩. কাশিয়াখালী থেকে বান্দুরা চার-পাঁচ মাইল, কার্তিকপুর থেকে বান্দুরা তিন-চার মাইল, বাহ্রা থেকে শেখের নগর চার-পাঁচ মাইল খনন। ৪. বান্দুরা থেকে সৈয়দপুর, যে যে স্থানে পানির স্বল্পতা সেখানে ড্রেজিং। ৫. যেসব সমাজবিরোধী, লোভী লোক নদীর অংশবিশেষ দখল করতে অপচেষ্টায় রত, তাদের প্রতিহত করা। ৬. পদ্মা নদী থেকে একটি খাল জয়পাড়া, খালপাড়, সৈয়দপুর, আলহাদিপুর, হযরতপুর, সাদাপুর হয়ে ইছামতি নদীতে পতিত হয়েছে। এ খালটি পদ্মা নদীর সাথে ইছামতির যোগসূত্র। হযরতপুর, আলহাদিপুর ও সাদাপুর গ্রামে খালের ভাঙনের হাত থেকে জনপদ রক্ষা করা খুবই প্রয়োজন।
আবদুল বাছের শিকদার, কলাকোপা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.