সাভারের ফুলচাষিরা ভালোবাসা দিবসে কিছুটা পুষিয়েছেন by আমান উল্লাহ পাটওয়ারী

সাভারের একটি গোলাপ বাগান : নয়া দিগন্ত
টানা অবরোধ আর মাঝে মধ্যে হরতালে সাভারের ফুলচাষিদের ব্যবসায় কয়েক দিন মন্দা গেলেও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দুই-তিন দিন ব্যবসায় ভালো হওয়ায় লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিয়েছেন চাষিরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন টানা অবরোধ আর হরতাল থাকলে তাদের ব্যবসায় গুটিয়ে নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না। অথচ অন্যবার এ দিবস উপলক্ষে সাভারের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় কাটাতেন। কোনো প্রশিণ ছাড়াই সাভার উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে গোলাপের চাষ করছেন। গোলাপ চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলেছে। ফুলচাষিরা হয়েছেন স্বাবলম্বী। কিন্তু দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা এখন দিশেহারা। এ ছাড়া পরিবহন সঙ্কটসহ ফুলের ন্যায্য দাম না পেয়ে তারা হতাশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা এখন লোকশান গুনছেন।
সাভারে ফুলচাষ শুরুর সময়কাল : সাভার উপজেলার মাটি ফুলচাষে সহায়ক। ১৯৮০-৮২ সালের দিকে হল্যান্ড থেকে এ জাতের ফুল বীজ এনে রাজধানীর মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে রোপণ করা হয়। তখন থেকে এর শুরু। ১৯৮৫-৮৬ সালের গোড়ার দিকে সেখানকার এক গবেষক সাভারের সাদুল্লাহপুর মোস্তাপাড়া গ্রামে এর বীজ রোপণ করেন। এর পর থেকে শুরু হয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে গোলাপের চাষ। বিরুলিয়া ইউনিয়নের কালিয়াকৈর, বাঘœীবাড়ী, মইস্তাপাড়া, কাকাবর, সামাইর, সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, আকরাইন, সাভারের রাজাশন, নামাগেণ্ডা, কাতলাপুর, কমলাপুরসহ অর্ধশত গ্রামে দুই শতাধিক চাষি গোলাপের আবাদ করছেন। চোখ মেলে তাকালেই যেন নয়নাভিরাম দৃশ্য। গোলাপ ফুলের চাষ আর ব্যবসায় তা ছড়িয়ে পড়ে সাভারের বিভিন্ন স্থানসহ আশপাশের জেলা ও পুরো দেশে।
বিরুলিয়া ইউনিয়নের কালিয়াকৈরে জাহিদুল, আজিজুল আর আক্তার হোসেন ৪৫০ শতাংশ জমিতে যৌথভাবে গোলাপের আবাদ করেছেন। তার মধ্যে ৬০ শতাংশে ইতোমধ্যে ফুল আসা শুরু হয়েছে। ৬০ শতাংশে তাদের আবাদ খরচ হয়েছে সাত লাখ টাকা। একবার রোপণ করলে তাদের ২০ বছরের মধ্যে আর কোনো ফুলের চারা রোপণ করতে হয় না। শুধু প্রতি বছর একবার করে গাছগুলো কেটে দিলেই হয়। রোপণের তিন মাস পর গাছে ফুল আসা শুরু হয়। আর প্রতি বছর ৬০ শতাংশ জায়গায় শ্রমিক, সার ও কীটনাশক বাবদ খরচ বাদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। এক সময় এ জমিতে তেমন কোনো ফসল হতো না।
গোলাপ ফুল ও বেচা-বিক্রি : সাভার এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুলের মধ্যে রঙিন গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, বিভিন্ন জাতের গোলাপ, গাঁদা ও জারবেরা ফুলের সমারোহ থাকে বাজারগুলোয়। তবে গোলাপের মধ্যে মেরিন্ডা লাল গোলাপ চাষে খুবই উপযোগী সাভারের মাটি। মাটির প্রভাবে কিছু স্থানে কোনোভাবে ফেলে রাখলেই গাছে ফুল আসে। এরপরও চাষিরা গাছে ভালো ফুলের আশায় সার, কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। চাষিরা বাগান থেকে এক দিন পরপর ফুল তোলেন। আর এসব ফুল রাজধানীর শাহবাগ আড়তে পাইকারি বিক্রি করে থাকেন তারা। চাষিরা রাজধানীতে ফুল নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক চাষি একত্রে একটি গাড়ি মাসিক চুক্তিতে ভাড়া করে থাকেন। চাষিরা দুপুর থেকে ফুল তোলা শুরু করে রাত পর্যন্ত তোলেন। রাত সাড়ে ১২টায় সাভার থেকে রওনা হয়ে রাত ৩টায় শাহবাগে ফুলের আড়তে বিক্রি শুরু হয়ে সকাল ৬টায় তাদের বেচা-বিক্রি শেষ হয়।
সাভারে মোস্তাপাড়াবাজার : সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের মোস্তাপাড়া গ্রাম। এখানে বসে প্রতিদিন ফুলের হাট। দূরদূরান্ত থেকে গোলাপ ব্যবসায়ীরা এখানে প্রতিদিন ফুল কিনতে আসেন। এ এলাকার লাল মাটিতে তুলনামূলক বড় সাইজের গোলাপ পাওয়া যায়। ফলে এখানে ফুল ব্যবসায়ীরা আসেন বেশি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এখান থেকে ফুল কিনে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন; কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা অবরোধে ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে বলে জানান তারা।
গোলাপ ফুলের বান্ডিল : তিন শ’ গোলাপ দিয়ে এক বান্ডিল করে চাষিরা পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক শ’ গোলাপ দিয়েও বান্ডিল করা হয়। তবে তিন শ’ গোলাপ দিয়েই বেশি বান্ডিল হয়ে থাকে।
বান্ডিলপ্রতি মূল্য : তিন শ’ গোলাপের বান্ডিল অহরহ বিক্রি হতো ৫০০-৬০০ টাকায়। অবরোধ-হরতালে দাম হয়ে দাঁড়ায় ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। অবরোধ-হরতালে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মূল্যবান ফুলগুলো ফেলে দিতে বাধ্য হয়। কারণ এগুলো বহন করে নিয়ে আসতে পরিবহন খরচের একটা ব্যাপার থাকে। সংরক্ষণ করতে গেলে পচে নষ্ট হয়ে যায়।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে মূল্য : বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গত দ্ইু-তিন দিন তিন শ’ গোলাপের বান্ডিল বিক্রি হয়েছে ১৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো ব্যবসায়ী ২৫০০ টাকাও পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। দিবসের আগের দিন এবং দিবসের দিনে সাভারসহ আশপাশে প্রতি পিস গোলাপ ২০ টাকা মূল্যে বিক্রি হতেও দেখা গেছে।  গোলাপ চাষি আজিজুল অভিযোগ করে নয়া দিগন্ত জানান, তারা ফুলের বাগানে সেচের জন্য নিজস্ব সেলু মেশিনে পানি তুলে বাগান করছেন। বিদ্যুতের মাধ্যমে সরকারি সেচের সহযোগিতা পেলে তারা আরো লাভবান হতেন।

No comments

Powered by Blogger.