এ কেমন রাজনীতি? by মীর আবদুল আলীম

দেশজুড়ে উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। কি সরকারি দল, কি বিরোধী দল সব দলেই এখন টান টান উত্তেজনা। দেশবাসীর মনেও নানা সংশয় আর শঙ্কা। একদিকে চলছে  নৈরাজ্য, সহিংসতা। পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে মরছে মানুষ। অন্যদিকে ক্রসফায়ারে মরছে মানুষ। অব্যাহত অবরোধ আর হরতালে ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা। খেটে খাওয়া মানুষড় কাজ পাচ্ছে না। বেকার দিন কাটছে তাদের। শিল্প-কারখানা একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশ জুড়ে কেবল অশান্তির দাবানল। দু’দলই  যেভাবে গোঁ ধরে আছে তাতে এই মুহূর্তে কেউ কাউকে ছাড় দিবে বলে মনে হচ্ছে না। চারদিক যেন গাঢ় অন্ধকার। আলো খুঁজে পাচ্ছে না দেশবাসী। সুড়ঙ্গের ওপারেও মিলছে না আলোর দেখা। গভীর অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে দেশ। সুশীল সমাজ দেশ ও জনগণের কল্যাণে এখনই সরকার ও বিরোধী দলকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু কেউ তাদের কথা শুনছে না। তারা চিৎকার করেই যাচ্ছেন। এখন মনে হয় তারা কাহিল হয়ে পড়েছেন। তবুও যারা তাদের কথা শুনবেন তারা চুপ করে বসে আছেন। দেশের বিদ্যমান অস্থিতিশীল অবস্থা জনমনে অনাস্থা এবং আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। সরকার ও রাজপথের বিরোধী দল যেন একে অপরের চরম শত্রু। সবাই যেন রণসাজে। যে জনগণের কথা বলে তারা রাজনীতি করছেন সে জনগণ আসলে কি চাইছেন কেউই তা লক্ষ্য করছেন না। বরং জনগণকে জিম্মি করে তারা রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। জনগণ ভাবছেন দেশ স্বাধীন করেছি পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর জন্য। রাস্তায় বেরুলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেয়ার জন্য। বিনা কারণে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে ধরে নিয়ে লাশ হওয়ার জন্য? স্বাধীনতার মর্ম কি আমরা বুঝিনি। আমরা পাকিস্তানি শাসকদের মতোই শাসক পেয়েছি। যারা সেবা নয়, জনগণকে শোষণ করছে। শাসন করছে। এমন শাসন চায় না জনতা। এমন শোষণ চায় না জনগণ। নব্বইয়ে স্বৈরাচার হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরও কে ভেবেছিল ফের গণতন্ত্রের জন্য রাজপথে নামতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, হত্যা, গুম এসবড় যেন কেমন ঘোলাটে করে দিচ্ছে। তাই মনে আজ প্রশ্ন জাগে এ কোন অনিশ্চয়তার পথে হাঁটছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ? বাংলাদেশের বহু সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো রাজনৈতিক অন্ধ বিভাজন। যে যে দলকে পছন্দ কিংবা সমর্থন করেন তিনি সেই দলের দোষত্রুটি দেখতে পান না বা দেখতে চান না। এটা আমাদের মস্ত ব্যামো। এটা একটা বড় সমস্যা। আর তা দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের সমস্যা এখানেই যে, আমরা জাতীয় কোন সমস্যাতেও জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না। এ কেমন রাজনীতি? কাদের কক্ষপথে ঘুরপাক খাচ্ছি আমরা? আমরা যারা জনগণ তাদের রাজনৈতিক অন্ধত্ব পরিহার করে রাজনৈতিক সচেতন হওয়া এখন খুবই জরুরি। ভালোকে ভালো, আর মন্দকে মন্দ বলার সাহস সঞ্চয় করা দরকার, আমাদের সদা লড়াই করতে হবে সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের এ লড়াই চলবে যত দিন না আমরা ফিরে পাই সোনার বাংলাদেশ। সত্যিই খুব হতাশা ঘিরে আছে আমাদের চারদিকে। এ জাতির সামনে  কোন আশার আলো নেই। জানি আলো আসবে; আলো ফিরে আসবেই! একদিন সমগ্র জাতি জাগ্রত হবে, জাতি প্রতিবাদী হবেই একদিন। দেশের মানুষ ভুল বুঝতে শিখবে; দলীয় দাসত্ব ত্যাগ করে বেশি বেশি ভালো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে, মন্দকে মন্দ বলবে, অসৎকে না বলবে, সেদিনই দেশে নতুন সূর্য উদয় হবে। সেই সূর্যের অপেক্ষায় সবাই। দেশের অসহায় ১৬ কোটি মানুষও হয়তো সেই দিনটিকেই খুঁজছে।
>>৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বৃহস্পতিবার

No comments

Powered by Blogger.