আর কত নৃশংসতা? হরতাল-অবরোধ

রাজনীতির নামে এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনা কখনও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেনি। পেট্রোল বোমায় ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ-শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে। আরও শতাধিক ব্যক্তি দগ্ধ হয়েছেন। তাদের রোগযন্ত্রণা অবর্ণনীয়। হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিট পোড়া মানুষের গন্ধ ও রোগী-স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে। সবারই প্রশ্ন_ এর শেষ কোথায়? আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার নিষ্ঠুরতার অবসান কবে ঘটবে? শুক্রবার রাতে পুলিশ পাহারায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে ঢাকার পথে যাত্রা করা একটি বাসে পেট্রোল বোমার হামলা হলে দুটি শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। পুলিশ পাহারায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ২০-২৫টি গাড়ির একটিতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। শনিবার ভোর রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলারায় বরিশালগামী একটি ট্রাকে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে এবং তাতে ট্রাকের চালক ও হেলপারসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। আগুনে দগ্ধ হয়ে এই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলেই। গত এক মাস দেশের নানা স্থানে যে ধরনের পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটছে তার সঙ্গে গাইবান্ধা ও বরিশালের হামলার মিল রয়েছে। স্পষ্টতই একটি অশুভ মহল দেশের স্থিতিশীলতা নস্যাৎ এবং মানুষের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করতে সুপরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষে ২০ দলীয় জোট আন্দোলনের নামে যা করছে তাকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলন বলা চলে না। সমকালের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় বাসে রওনা দেওয়া বাসটিতে যাত্রী ছিলেন এক পরিবারের চারজন। তাদের মধ্যে ছিলেন কিশোরী তানজিলা বেগম। পেট্রোল বোমায় তার মা ও ভাইয়ের করুণ মৃত্যু ঘটেছে। 'সারা শরীর জ্বলছে। আর সহ্য করতে পারছি না'_ হাসপাতালের শয্যায় তার এ আর্তনাদে উপস্থিত সবার চোখ অশ্রুসিক্ত। কিন্তু তাতে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে বেপরোয়া 'আন্দোলনকারীদের' যেন একটুও বেদনার সঞ্চার হয় না। তানজিলা বারবার আকুতি জানাচ্ছে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। তার পরিণতিও কি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রোল বোমা হামলার শিকার যশোরের কিশোরী মাইশার মতো হবে? সমুদ্রসৈকত দেখার আবদার মেটাতে স্নেহময় পিতা মাইশাকে নিয়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজার। সেখান থেকে ফেরার পথেই বাবার সঙ্গে তারও জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে 'আন্দোলনকারীদের' পেট্রোল বোমা হামলায়। শুক্রবার রাতেই আন্দোলনের নামে আগুন দেওয়া হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি বাসে। শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চালবাহী একটি ট্রাকে পেট্রোল বোমার হামলা হলে ট্রাকটিতে আগুন ধরে যায় এবং চালক ও হেলপার আহত হন। গতকাল শনিবার রাজধানীর শ্যামলীতে দুর্বৃত্তদের নিক্ষিপ্ত ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন একজন পুলিশ সার্জেন্ট। আন্দোলনের নামে একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটতে থাকায় মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ করার কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। ব্যতিক্রমী আয়োজনে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু টানা তিন দিন হরতাল আহ্বান করায় আবার বিঘ্ন ঘটল পরীক্ষাসূচিতে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগই দিতে চাইছে না ২০ দলীয় জোট। এভাবে প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিঘি্নত করে তারা কী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় সেটা কারও বোধগম্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত সহিংসতাকে 'অযৌক্তিক' হিসেবে আখ্যায়িত করে এর তীব্র নিন্দা করেছে। এতে বলা হয়, বাসে আগুন দেওয়া, দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ, ট্রেন লাইনচ্যুত করাসহ এ ধরনের ঘটনার শিকার হচ্ছে নিরীহ লোকজন। এ অভিমতের সঙ্গে আমরাও একমত। আন্দোলনের নামে এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড থেকে ২০ দলীয় জোট যত শিগগির বিরত হয়, দেশের ততই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.