৬ জনের যাবজ্জীবন- জুবায়ের হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড by মো: শহীদুল্লাহ মিঞা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুইজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক গতকাল এ দণ্ডাদেশ দেন। যাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তারা হলেনÑ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো: রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাজু (পলাতক), শিক্ষাবর্ষ ২০০৭-০৮, দর্শন বিভাগ; খান মোহাম্মদ রইস ওরফে সোহান (পলাতক), শিক্ষাবর্ষ ২০০৭-০৮, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ; মো: জাহিদ হাসান ওরফে জাহিদ (পলাতক), শিক্ষাবর্ষ ২০০৭-০৮, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ; খন্দকার আশিকুল ইসলাম ওরফে আশিক ওরফে ফয়সাল (পলাতক), শিক্ষাবর্ষ ২০০৭-০৮, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও মাহবুব আকরাম (পলাতক), শিক্ষাবর্ষ ২০০৭-০৮, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ। রায় ঘোষণার সময় তারা পলাতক থাকায় আদালত তাদের গ্রেফতার করতে পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যখন তাদের গ্রেফতার করা বা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করবে তখন থেকে তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন।  যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেনÑ ইশতিয়াক মেহের ওরফে ওরূপ (পলাতক), শিক্ষাবর্ষ ২০০৭-০৮ দর্শন বিভাগ; অভিনন্দন কুণ্ডু ওরফে অভি একই শিক্ষাবর্ষ, পরিসংখ্যান বিভাগ; মো: কামরুজ্জামান ওরফে সোহাগ, একই শিক্ষাবর্ষ, দর্শন বিভাগ; মাজহারুল ইসলাম, একই শিক্ষাবর্ষ, ইতিহাস বিভাগ, মো: শফিউল আলম ওরফে সেতু, একই শিক্ষাবর্ষ পরিসংখ্যান বিভাগ ও মো: নাজমুন সাকিব ওরফে অপু একই শিক্ষাবর্ষ প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ।
খালাস প্রাপ্তরা হলেনÑ লোক-প্রশাসন বিভাগের মো: নাজমুল হুসাইন প্লাবন ও ইতিহাস বিভাগের মো: মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুদ। যাবজ্জীবন প্রাপ্তদের ২০ হাজার টাকা করে জারিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত তার রায়ে পর্যালোচনা করে উল্লেখ করেছেন যে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অত্র মামলার ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে বর্তমান ছাত্র রাজনীতির চরম বিশৃঙ্খলা নীতিহীন ও আদর্শচ্যুত চেহারাই উন্মোচিত করেছে। সুস্পষ্টভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, আসামি আশিকুল ও রাশেদুল ২০০৮ সালে তর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথেই সম্পৃক্ত হয় এবং ভিকটিম জুবায়ের আহমেদও ওই সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পরে ২০০৯ সালে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ওই আসামিরাসহ ছাত্রদলের অন্যরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়। আর এ ধারাটি মূলত বিশেষ করে ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা, মারধর, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, শিক্ষকদের সাথে অশালীন আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনসহ ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডকেই অতিমাত্রায় উৎসাহী করে তোলে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রবলভাবে প্রতিরোধ বা প্রতিহত করতে সক্ষম হয় না। কারণ প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় রাজনীতির মাত্রারিক্ত প্রভাব প্রবলভাবে বিদ্যমান রয়েছে।
বস্তুত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখিত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের শেষ পরিণতি হচ্ছে জোবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ড। আর অনুরূপ অহেতুক হত্যাকাণ্ড মানবতা ও নৈতিকভাবে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করে, যা ভিকটিমের পরিবারের ওপর নেমে আসে শোকের ছায়া। আর বলাবাহুল্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশিশক্তির জোরে কোনো ধরনের সহিংসতা, নৃশংসতা অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়, হানাহানি-উগ্রতা, বর্বরতা এ খুনখারাবি ইত্যাদি সব কর্মকাণ্ড শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যা কারো কাম্য হতে পারে না।
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দণ্ডিত আসামিরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হামিদুর রহমান বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় এ মামলা করেন।

No comments

Powered by Blogger.