স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য মোহাম্মদ আলী by আল আমিন

দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত যাতায়াত করতো। কৌশলে নিয়ে আসতো স্বর্ণের বার ও বিদেশী মুদ্রা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে এ সব স্বর্ণের বার ও মুদ্রা দেশে প্রবেশ করাতো। পরে সরবরাহ করতো বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছে। পাচার করতো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও। তার নাম মোহাম্মদ আলী। সম্প্রতি বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধারের ঘটনায় আটক মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞেসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ঘন ঘন বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে দু’বার পাসপোর্ট নবায়ন করেছেন। বলেছে, পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে।  গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলী স্বর্ণ চোরাচালান এবং মুদ্রা পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পুরানা পল্টন থানাধীন ২৯/১ নম্বর মোহাম্মদ আলীর ঠিকানা নামে একটি বাড়ির ৭ এবং ১১ তলার ফ্ল্যাটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় শুল্ক ও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। এ সময় ওই বাড়ির বেডের ও বালিশের নিচে এবং আলমারি থেকে ৩ কোটি টাকা মূল্যের বিদেশী মুদ্রা এবং ৫২৮টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। স্বর্ণের আনুমানিক মূল ৩০ কোটি টাকা। স্বর্ণ ও মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায় শনিবার রাতে শুল্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বাদী হয়ে চোরাচালান দমন ও প্রতিরোধ বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর মোহাম্মদ আলীকে ৬ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি। এ বিষয়ে পল্টন থানার ওসি মোর্শেদ আলম জানান, স্বর্ণ ও মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনাটি পল্টন থানা এলাকার মধ্যে হওয়ায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের এডিসি মো. মাহাফুজ জানান, আসামি মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে অনেক তথ্যই গোপন করেছে। বিদেশী মুদ্রা ও স্বর্ণের বার চোরাচালানে আর কারা জড়িত তাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তবে মামলার তদন্তকারী একজন জানান, ঢাকায় যে ক’জন স্বর্ণ ও মুদ্রার চোরাচালানকারী আছে তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী একজন। সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশ থেকে স্বর্ণ ও মুদ্রা নিয়ে আসে। পরে বিমানবন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেগুলো আনে ঢাকায়। তার সঙ্গে একাধিক চোরাচালানকারীর  যোগাযোগ রয়েছে। কয়েকজনের নামও জানা গেছে। অনেকে আত্মগোপন এবং তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তার পেশা নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলেছে। কখনও হোটেল, কখনও ডেভেলপার আর কখনও পরিবহন ব্যবসার কথা বলছেন। কিন্তু তার কোন কথাই বিশ্বাসযোগ্য নয়। স্বর্ণ ও মুদ্রাগুলো ওই বাড়িতে বিভিন্ন কৌশল রাখা হয়েছিল। সেগুলো কেন এভাবে রাখা হয়েছে সেটি মোহাম্মদ আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে সে কোন উত্তর দেয়নি। তবে বলেছে, নিরাপত্তার জন্য সেগুলোক এভাবে রাখা হয়েছে। ঘন ঘন বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে মোহাম্মদ আালী জানিয়েছে, দুবাইসহ সিঙ্গাপুরে একাধিক বন্ধু আছে। তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্যই সে বিদেশ যায়। একটি বাড়ি নির্মাণ করার জন্য সে বিদেশী মুদ্রা ও স্বর্ণের বারগুলো সে ওই বাড়িতে রেখেছিল। তবে অর্ধেক স্বর্ণ এবং বিদেশী মুদ্রাগুলো তার বন্ধু রিয়াজ উদ্দীনের। রিয়াজের নয়া পল্টন এলাকায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। রিয়াজ উদ্দীন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। এ স্বর্ণ এবং বিদেশী মুদ্রায় তার বন্ধু রিয়াজের কোন যোগাসাজশ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। মামলার প্রয়োজনে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইতিমধ্যে মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার ও স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়টি রিয়াজকে ডিবি পুলিশের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। এছাড়াও মোহাম্মদ আলী তার কয়েকজন ব্যক্তিগত বন্ধু, বিমানবন্দরের কয়েকজন কমকর্তা-কর্মচারীরা নাম বলেছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ডিবির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, উদ্ধার অভিযানে ওই মোহাম্মদ আলীর বাড়ি থেকে কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জের নামের তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রাজধানীর কাকরাইলের রাজমণি ঈসা খাঁ হোটেলের নিচতলায় একটি মানি এক্সচেঞ্জ ঠিকানা পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ওই মানি এক্সচেঞ্জের অফিসটি বন্ধ রয়েছে। মানি এক্সচেঞ্জের মালিক এবং প্রতিষ্ঠানটি কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। মোহাম্মদ আলী ডিবি পুলিশের কাছে প্রথমেই নিজেকে একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মোহাম্মদ আলী অবৈধভাবে মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করে আসছিল। এতগুলো টাকা কেন ব্যাংকে না রেখে বাড়িতে রাখলো এমন প্রশ্নের উত্তেরে বিভিন্ন সময় অসংলগ্ন কথা বলেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, উদ্ধারকৃত স্বর্ণ ও মুদ্রাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দার সদস্যরা মোহাম্মদ আলীকে অনেক দিন ধরে নজরদারীতে রেখেছিল। তার সঙ্গে চোরাচালানকারী সিন্ডিকেটের যোগাযোগ থাকত বলেও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.