চট্টগ্রামে মহিউদ্দিনের মেজবান নিয়ে কৌতূহল by মহিউদ্দীন জুয়েল

খবরটি চাউর হয়ে গিয়েছিল শহরজুড়ে। চশমা হিলের মহিউদ্দিন সাহেবের বাসায় মেজবান হচ্ছে। সবাই দলে দলে যাচ্ছেন। বড়সড় দু’টো গরু জবাই করা হয়েছে। শ’ শ’ লোক খাচ্ছেন। আরও ৩টি গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার সেগুলো জবাই দেয়া হবে মহিউদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, ঈদে মিলাদুন্নবীকে ঘিরে তার এই আয়োজন। জনসেবা থেকেই সবাইকে খুশিমনে দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন। তবে নগর আওয়ামী লীগের অন্যতম কাণ্ডারি ও সাবেক প্রভাবশালী মেয়রের এই আয়োজন দেখে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে। তা হলো, আসন্ন মেয়র নির্বাচন। কৌশল পাল্টে এবার তাই আগেভাগেই সরব আওয়ামী লীগের নগর সভাপতি মহিউদ্দিন। প্রতিশোধ নিতে চান শিষ্য মনজুর আলমের বিপক্ষে। গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে হারার কষ্টটা এইবার তুলে নিতে চান। গতকাল রোববার বেলা ১২টায় শহরের মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে  গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে রান্নার আয়োজন। সঙ্গে হাত লাগাচ্ছেন হাসিনা মহিউদ্দিনও। দাওয়াত পেয়েছেন সাংবাদিক থেকে নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতারাও। এর আগে মেয়র নির্বাচন থেকে তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও সর্বশেষ আবারও জয়লাভ করার বাসনা ব্যক্ত করেছেন। এতে নড়েচড়ে বসেছে তার নিজ দলের বিপক্ষের বিদ্রোহীরাও। দাওয়াতের কার্যক্রমে গিয়ে দেখা যায়, বাসার বিভিন্ন ফ্লোরে চেয়ার টেবিলের ছড়াছড়ি। কখনও তিনি হাত দিয়ে খাবার তুলে দিচ্ছেন পাতে। আবারও অনেকে তাকে কাছে পেয়ে মেয়র নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তবে মহিউদ্দিন বারবারই সাংবাদিকদের সামনে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন প্রসঙ্গ। সূত্র জানায়, সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয় ২০১০ সালের ১৭ই জুন। এতে বিএনপি প্রার্থী মনজুর আলমের কাছে ৯৫ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। বিশাল একটি ভোট ব্যাংক তার বিপক্ষে কাজ করায় তিনি ধরাশায়ী হন। ২০১৫ সালের ১৬ই জুন বর্তমান মেয়র মনজুর আলমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তিনি হেসে বলেন, আপনাদের সাংবাদিকদের একটি বড় সমস্যা। সব কিছুতেই অনুসন্ধান করেন। সামনে ঈদে মিলাদুন্নবী। তাই সবাইকে খুশিমনে খাওয়াচ্ছি। এখানে কে কোন দলের তা বড় নয়। মানুষ হিসেবে সবার সেবা করছি। মেয়র নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, সময় হলে দেখতে পারবেন। তবে এ কথা সত্যি- আমি যে নগরী রেখে গিয়েছিলাম সেখানে এখানে পানি আর ময়লার স্তূপ। মানুষ এ সব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ। তারা পরিবর্তন চায়। সাধারণ মানুষের ধারণা, চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে হাওয়া বইছে রাজনৈতিক মহলে। আগামী এপ্রিল-মে মাসে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় শুরু হয়েছে জোর লবিং। আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কারিশমা কতটুকু দমাতে পারবে বর্তমান নগরপিতা বিএনপির মনজুর আলমকে? এই প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরছে সর্বত্র। দু’টি দলেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগেভাগে নেমেছেন রাজপথে। তবে শেষ মুহূর্তে মেয়র নির্বাচনের প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে সঙ্কট তৈরি হতে পারে দুই দলেই- এমনটি আশঙ্কা সচেতন ভোটারদের। ইতিমধ্যে আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কমিশনার আবদুল মোবারক। সম্প্রতি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনের সার্ভার স্টেশন পরিদর্শনের পর তিনি এই কথা জানান। আবদুল মোবারক বলেন, আগামী জুন মাসে চট্টগ্রাম কর্পোরেশনের ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে। ওই সময় রমজান মাস থাকবে। রোজার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কোন নির্বাচনের আয়োজন করে না। এক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণের ১৮০ দিন আগে নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে দুই দল থেকে জোরেশোরে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। এতে নির্বাচনের শেষ সময়ে কোন্দল আরও চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে হতে পারে ভরাডুবিও। ২০১০ সালে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে চমক দেখিয়ে গুরুকে পরাজিত করেছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া বর্তমান মেয়র মনজুর আলম। সেই সময় আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন চৌধুরীর চেয়ে ৯৫ হাজার ৫২৮ ভোট বেশি পান তিনি। তবে এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন চট্টগ্রামের কয়েক লাখ ভোটার। বিএনপির টিকিটে ফের জয়লাভ করতে ঈদের আগে ঢাকায় গিয়ে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন বর্তমান মেয়র মনজুর আলম। বিএনপির একাধিক তৃণমূল কর্মীরা জানান, মেয়র মনজুর আলম বিজয়ী হওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ছাড়া আর কারওই তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না। পরে একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিকেও ভাল চোখে দেখেননি অনেকে। এই নিয়ে স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাতের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। অন্যদিকে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ২০১০ সালের আগে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে। সেবার তিনি হেরেছিলেন ৯৫ হাজার ভোটে। ফলে এবার হারের ইমেজ কাটিয়ে তিনি কতটুকু জয়লাভ করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একই সঙ্গে ডা. শাহাদাতকে প্রার্থী করার বিষয়ে দলের বেশ কয়েকজন নেতার রয়েছে ঘোর আপত্তি। বিশেষ করে মহানগর কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরুর সম্পর্কে বেশ টানাপড়েন গেছে। এ সব বিষয় নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে সবার ধারণা। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অন্যদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরী এককভাবে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলেও এবার তাকে টেক্কা দিতে ভেতরে ভেতরে আরও অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাসির উদ্দিন ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। আওয়ামী লীগের দু’টি সূত্র জানায়, গত নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরাজয়ের পেছনে আওয়ামী লীগের একটি অংশ জড়িত ছিল বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ওঠে। বিশেষ করে মহিউদ্দিন বিরোধী শিবিরের লোকজন তার দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছাচারিতাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। এই ক্ষেত্রে তাকে সব ধরনের সমর্থন দেয়া থেকে বিরত ছিলেন তারা। এবারও এই ধরনের একটি বিষয় কাজ করতে পারে বলে সবার ধারণা। তাছাড়া তার বিকল্প হিসেবে ইতিমধ্যে অনেকে সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসির বিষয়ে মত দিয়েছেন। বর্তমান সরকার  দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে বিএসসি তার নির্বাচিত আসনটি জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দেন। এই সময় নেত্রী তাকে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে জানান তার অনেক কর্মী।

No comments

Powered by Blogger.