১৬২ আরোহী নিয়ে নিখোঁজ এয়ারএশিয়া- রুট পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন পাইলট

রুট পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার নিখোঁজ বিমানের পাইলট। সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে খারাপ আবহাওয়ার কারণে তিনি এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। তবে কন্ট্রোল সেন্টার থেকে তাকে কি বার্তা দেয়া হয়েছিল তা জানা যায়নি। গতকাল ১৬২ আরোহী নিয়ে এয়ার এশিয়ার একটি বিমান নিখোঁজ হয়। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বছর শেষে নেমে এসেছে আরও একটি ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। মালয়েশিয়ার রহস্যময় বিমান নিখোঁজ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে বিমানটি নিখোঁজ হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোন সন্ধান মেলে নি। এর আরোহীদের ভাগ্যে কি পরিণতি হয়েছে কেউ বলতে পারছেন না। ফলে আত্মীয়স্বজন, সাধারণ মানুষ সবাই শোকে কাতর। অনেক আত্মীয় কান্নায় ফেটে পড়ছেন। দৌড়ে ছুটে যাচ্ছেন বিমানবন্দরে, যদি কোন সুখবর মেলে। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিমান চলাচল বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ মালয়েশিয়ার ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০ এর সঙ্গে এ ঘটনাকে মিলিয়ে দেখা শুরু করেন। তারা বলেন, দুটি ঘটনা একই রকম। এ জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত সমুদ্রপথকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল হিসেবে অভিহিত করছেন কেউ কেউ। কারণ, প্রায় একই রুটে মালয়েশিয়ার বিমানটি নিখোঁজ হয়েছে। এবার শিকার ইন্দোনেশিয়া। তাহলে কি ওই অঞ্চলে আকাশপথে কোন অশুভ শক্তি ভর করেছে- ইত্যাকার আলোচনা চলছে চারদিকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমএইচ ৩৭০-এর মতো করে ইন্দোনেশিয়ার বিমানটি রাডার থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারপর থেকে কন্ট্রোল সেন্টারের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। ১৬২ আরোহী নিয়ে এয়ার এশিয়ার ফ্লাইট ‘কিউজেড৮৫০১’ ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে। উড্ডয়নের ৪২ মিনিট পর ৭টা ২৪ মিনিটে বিমানটির সঙ্গে জাকার্তার এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সিঙ্গাপুরের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অবতরণের সম্ভাব্য সময়ের এক ঘণ্টা আগে বিমানটি নিখোঁজ হয়ে যায়। এয়ার এশিয়া তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে তারা জানিয়েছে, বিমানটি ছিল এয়ারবাস এ৩২০-২০০ মডেলের। সুরাবায়া বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক ত্রিকোরা রাহার্হো জানিয়েছেন, বিমানে ১৫৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ১৬টি শিশু ও একটি নবজাতক রয়েছে। বিদেশী নাগরিক ছিলেন ৬ জন। এর মধ্যে নবজাতকসহ দক্ষিণ কোরিয়ার তিন নাগরিক এবং সিঙ্গাপুর, বৃটেন, মালয়েশিয়া থেকে একজন করে নাগরিক। বাকিরা সবাই ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাদি মোস্তফা জানিয়েছেন, কালিমান্তান এবং জাভা দ্বীপপুঞ্জের মধ্যবর্তী জাভা সমুদ্রের ওপর থাকাকালে বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানকার আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি পৃথক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে সিঙ্গাপুর। দেশটির বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী দুটি সি-১৩০ বিমান নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। এয়ার এশিয়া স্বল্প মূল্যে সফরের সেবা দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এয়ারলাইন্সটির ইতিহাসে এমন কোন দুর্ঘটনা এটাই প্রথম। গত রাতে বিমানটির উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখা হয়।
মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সহায়তা প্রস্তাব: নিখোঁজ বিমানটি অনুসন্ধান অভিযানে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া এবং সিঙ্গাপুর অনুসন্ধান তৎপরতা শুরু করেছে। মালয়েশিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রী লিও তিওং লাই বলেছেন, উদ্ধার অভিযানে মালয়েশিয়া সরকার সব রকম সহায়তা করবে। একই ভাবে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদিকে তিনি ফোন করে সার্বিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি যোগাযোগ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে। তাদেরকেও যে কোন প্রকার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এদিকে, মালয়েশিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রী লিও বর্তমানে সেপাংয়ে অবস্থিত এয়ার এশিয়ার সদর দপ্তরে অবস্থান করছেন। এয়ার এশিয়া কর্মকর্তাদের সহায়তা দিতে তিনি সেখানে যান। এক টুইট বার্তায় লিও এ কথা জানান। ইন্দোনেয়িশার সুরাবায়ার জুয়ান্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে ভারত প্রস্তুত রেখেছে ৩টি জাহাজ ও বিমান।
যাত্রাপথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন পাইলট: খারাপ আবহাওয়ার কারণে যাত্রাপথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিল বিমানটির পাইলট। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানটির পাইলট নির্দিষ্ট ফ্লাইট প্লান পরিবর্তনের অনুরোধ করেছিলেন। মালয়েশিয়া ভিত্তিক এয়ারলাইন্স এয়ার এশিয়া তাদের ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত বিবৃতিতে নতুন তথ্য যোগ করে তারা জানিয়েছেন, বিমানটি স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে সুরাবায়ার জুয়ান্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। এয়ারবাস এ৩২০-২০০ মডেলের বিমানটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর পিএক্স-এএক্সসি। বিমানটিতে পাইলট ছিলেন দু’জন। চারজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট এবং একজন প্রকৌশলী ছিলেন। প্রধান পাইলটের ৬১০০ ঘণ্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর দ্বিতীয় পাইলট অর্থাৎ ফার্স্ট অফিসারের উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ২২৭৫ ঘণ্টার। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিমানটি পূর্ব নির্ধারিত ফ্লাইট প্ল্যানেই ছিল। বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে পাইলট খারাপ আবহাওয়ার কারণে যাত্রাপথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। নতুন তথ্য আসার সঙ্গে সঙ্গে তা জানানো হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বছরটাই যেন বিমানের ইতিহাসে ট্র্যাজেডির: এ বছরটাই বিমানের ইতিহাসে এক দুর্যোগময় সময়। বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জন্য। এ বছরেই মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০ মালয়েশিয়া থেকে চীনে যাওয়ার পথে ২৩৯ আরোহীকে নিয়ে নিখোঁজ হয়। আজ পর্যন্ত তা রহস্যই হয়ে রয়েছে। এরপর ইউক্রেনের আকাশে ২৯৮ আরোহী নিয়ে একই বিমান সংস্থার আরেকটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে আরোহীদের সবাই নিহত হন। ধারণা করা হয়, ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে বিমানটি ভূপাতিত করেছে। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে। অনেকে এ জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেন।

No comments

Powered by Blogger.