বৃটিশ আমলের দালান রাখার প্রয়োজন নেই -প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুড়িল ফ্লাইওভারের ওখানে- যেখানে দুটো লেক করার কথা, আমি জানি অনেক বাধা আছে- ওখানে পুলিশের কিছু জায়গা পড়েছে তারা বাধা দেয়। তারপরে যমুনা ও বসুন্ধরা- তাদেরও ঘোর আপত্তি। তবে এ আপত্তিতে কিছু যায় আসে না। মূল প্ল্যানে আছে দু’টো লেক হবে। কাজেই এটা খুব দ্রুত করা দরকার। কারও আপত্তি মানার কোন প্রয়োজন নেই। গতকাল সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগিয়ে  নেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই লেকের সঙ্গে সরাসরি নদীর যোগাযোগ থাকবে। বন্যা বা ভারি বৃষ্টির সময় ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্যই ওই লেক জরুরি। তিনি বলেন, কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশের ওই এলাকায় লেকের বদলে বক্স কালভার্ট করতে চাইছে যমুনা বা বসুন্ধরা গ্রুপ। কোথাও কোন বক্স কালভার্ট হবে না। সব লেক হবে, ওপেন লেক হবে। দরকার হলে লেকের পাশ দিয়ে ব্রিজ করে নেবে তারা। তাদের পয়সার তো অভাব নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,  কোনমতেই এখানে কমেপ্রামাইজ করা যাবে না। কাজেই বিষয়টা আপনাদের দেখতে হবে এবং খুব তাড়াতাড়ি এটা শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, মতিঝিলের এক সময় একটি ঝিল থাকলেও আইয়ুব খান  সেটি বন্ধ করে দেন। পরে বিভিন্ন সরকারের সময়ে শান্তিনগর খাল, পান্থপথ খালসহ বিভিন্ন খাল বন্ধ করে দেয় বা বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে। অথচ এ খালগুলো একটা শহরের শিরা-উপশিরার মতো। আপনারা আমাদের একটা অনুরোধ রক্ষা করবেন, বক্স কালভার্ট যেন শহরের ভেতর আর না করা হয়। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বক্স কালভার্ট তুলে দিয়ে খাল উদ্ধারের চেষ্টা করতাম। এর আগে গত ২৫শে আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকেও কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পগামী রাস্তার দু’পাশে লেক তৈরির ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি ঔপনিবেশিক আমলের কিছু কিছু স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমি আরেকটা দিক দেখি, বৃটিশ আমলের ভাঙা দালান সেটা রাখা- এটার মনে হয় খুব একটা প্রয়োজন নেই। ঐতিহ্য রক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ধরে রাখার একটা চেষ্টা..., হ্যাঁ যদি দৃষ্টিনন্দন হয় তাহলে দুই একটা জিনিস রাখা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু লাল দালান যে কয়টা আছে সবই রেখে দিতে হবে হেরিটেজ হিসেবে, কিসের হেরিটেজ? বৃটিশদের গোলামি করেছি আমরা। তাদের  হেরিটেজ রক্ষা করার কোন প্রয়োজন আমাদের আছে বলে অন্তত আমি মনে করি না। তিনি বলেন, বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। এটাও মনে রাখতে হবে। স্থাপত্য শিল্পের বিবেচনায় যে সব ভবনের গুরুত্ব আছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কিন্তু সব দালান ধরে রাখার কোন যৌক্তিকতা আছে... আমি জানি না আমার একথা শুনে হয়তো অনেকেই খুব মন খারাপ করতে পারে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে এটাই মনে করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে ধীরে ধীরে লোকসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শহরটা এত ছোট, ঘিঞ্জি হয়ে যাচ্ছে। মানুষ সুষ্ঠুভাবে বসবাস করবে, তারা নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো পাবে। সেগুলো যদি আমরা পরকিল্পিতভাবে না করতে পারি, তাহলে কিন্তু মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকবে না। আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল ক্ষতিকর মন্তব্য করে তিনি বলেন, সব থেকে ক্ষতিকারক মনে হয় হাসপাতালের বর্জ্যগুলো। এটার একটা ব্যবস্থা একান্তভাবে নেয়া দরকার এবং প্রত্যেকটা হাসপাতালের এজন্য নিজস্ব ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তো  কোন মাত্রাজ্ঞানই নেই। ইউনিভার্সিটি বলতে আগে যা বুঝতাম এখন আর তা নেই। ব্যাঙের ছাতার মতো ইউনিভার্সিটি। এক বিল্ডিংয়ে দেখা গেল অনেকগুলো সাইনবোর্ড। সব নাকি ইউনিভার্সিটি। কোন একটা পরিকল্পনা নিয়ে কিন্তু কিচ্ছু করা হয়নি। যে যখন এসেছে, একেকটা পারমিশন দিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, তেজগাঁও শিল্প এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তর করা হচ্ছে। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরুর আগেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে। ঢাকার জলাধার রক্ষায় করা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক। এটা করাতে একটা কাজ ভাল হচ্ছে যে, যেখানে সেখানে দখল করে জমি ভরাট করে ফেলা- সেই সুযোগটা আর কেউ পায়নি। আমি জানি অনেকেরই ক্ষোভ আছে আমাদের ওপর।
চীনের উন্নয়ন দর্শনে চলবে শেখ হাসিনার সরকার
চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে প্রয়াসী বাংলাদেশ সরকার উন্নয়ন মডেল হিসেবে নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির দেশটিকে অনুসরণ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  দেশটির সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে একথা বলেন তিনি। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, চীনকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে বাংলাদেশ অনুসরণ করবে। চীনের উন্নয়ন মানে এশিয়ার উন্নয়ন। দু’দেশ পরস্পরকে সহায়তা দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্য পূরণে পৌঁছাতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, চীনের মন্ত্রী মনে করেন বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে। শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের বড় শক্তি। এখানে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের জরুরি প্রয়োজনে চীন পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, চীনা বাংলাদেশের জরুরি (আরজেন্ট নিড) প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে চীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ওই প্রতিনিধি গত ছয় বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন জানিয়ে প্রেস সচিব জানান, তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ দ্রুত এগোচ্ছে। এভাবে গেলে ২০২১ ও ২০৪১ সালে লক্ষ্যে  পৌঁছতে পারবে। এক্ষেত্রে চীন সকল সহযোগিতা দেবে। ওই আলোচনায় বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘ভাল সম্পর্কে’র কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন বলে জানান প্রেস সচিব। সমপ্রতি চার দেশের মধ্যে বিসিআইএম নামের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দুই রাউন্ড মিটিং হয়েছে। ২০১৫ সালে ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্ণ হবে। এ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব  জানান, চীনা মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সম্পর্কের ৪০ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হবে। এরই অংশ হিসেবে চীনা প্রেসিডেন্ট কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলেও আশা করেছেন তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি বাড়াবে বলে জানিয়েছেন সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর চীনের ওই প্রতিনিধি প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গভবনে ওই সাক্ষাৎ হয়। সেখান থেকে ফিরে তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার গুলশানের বাসায় যান তিনি। 
চীনা মন্ত্রীর সফর রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনায়: ৫ই জানুয়ারির বহুল আলোচিত নির্বাচনের পর বাংলাদেশের শুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার চীন সরকারে উচ্চ পর্যায়ের কোন প্রতিনিধির এটিই প্রথম সফর। গত জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফর করেন। সে সময়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পে চীন সহযোগিতার ঘোষণা দেয়। ওই প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি দেখতে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করার মিশন নিয়ে চীনা মন্ত্রী ঢাকায় এসেছেন বলে জানানো হয়েছে। মন্ত্রীর সফরের উদ্দেশ্য যাই হোক ২৬শে ডিসেম্বর তার সফরসূচি  ঘোষণার পর ঢাকার রাজনীতিতে নতুন হিসাব-কিতাব শুরু হয়েছে। ওই দিন বেইজিংয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নেপাল ও বাংলাদেশ সফরসূচি বিস্তারিত প্রকাশ করেন। মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণে ওয়াং ই অফিসিয়্যাল ভিসিটে ২৮ ও ২৯শে ডিসেম্বর ঢাকায় অবস্থান করবেন। সফরকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হামাস মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেয়ার পাশাপশি প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব রয়েছে উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি হবে। এ সময় দেশ দুটির জনগণের পর্যায়ে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। যাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক এবং সার্বিক যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওই ব্রিফিংয়ে চীনা মুখপাত্র ঢাকায় তার মন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ সব কর্মসূচি প্রকাশ করেন। সেখানে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর সংসদের বাইরে চলে যাওয়া নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনা মন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও সরকার ও বিরোধী বেঞ্চে অবস্থানকারী জাতীয় পার্টি নেত্রী ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠকের কোন উল্লেখ ছিল না। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদার সঙ্গে দেখা করতে চীনা মন্ত্রী তার বাসভবনে যাচ্ছেন এটি প্রকাশের পর ঢাকার তরফে অফিসিয়াল বিরোধী নেতা রওশান এরশাদের সঙ্গে বৈঠক প্রস্তাব করা হয়। ঢাকার অনুরোধ অগ্রাহ্য করেনি বেইজিং। এজন্য মন্ত্রীর সিডিউলে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজ সকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন ছিল তারা। গতকাল এটি বাতিল করা হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত ওই সিডিউলের কাছাকাছি সময়েই সংসদের বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে বৈঠকের সময় দেয়া হয়েছে। ১০টায় সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠকটি হবে বলে গত রাতে বিরোধী দলের নেতার দপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
এফটিএ সাক্ষর ও সমুদ্রবন্দরে বিনিয়োগে আগ্রহী বেইজিং: গতকাল দিনের শুরুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ঢাকা-বেইজিং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম-খুনমিং ভায়া মিয়ানমার স্বতন্ত্র সড়ক নির্মাণে সম্মতি দিয়েছে দেশটি। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র তিন দিনের ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল মন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অপর পক্ষে চীনের সফররত মন্ত্রীর নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন দেশটির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি। সকাল পৌন ১১টার দিকে মন্ত্রণালয়ে শুরু  হওয়া ওই আলোচনা দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আয়োজিত ভোজসভার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজ শেষে নিজ দপ্তরে ফিরে অপেক্ষমাণ  সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্র সচিব জানান, ঢাকা-বেইজিং বিদ্যমান সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেছেন তারা। সেখানে উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি স্থান পেয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু বছরের। কিন্তু এখনও এটি চীনের অনুকূলে। বাংলাদেশের অনেক ঘাটতি রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠেছিল। সেখানে ওই ঘাটতি কমাতে চীন এফটিও সইয়ে আগ্রহী হয়েছে। এই প্রথম চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যে চুক্তি সইয়ে আগ্রহ দেখালো। সচিব জানান, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা আবুল হাসান মাহমুদ আলী চট্টগ্রাম থেকে খুনমিং ভায়া মিয়ানমার সড়ক ও রেল যোগাযোগের প্রস্তাব করেন। চীনের প্রতিনিধিরা সড়ক নির্মাণে সায় দেন। এখন এ নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ত্রিমুখী আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন দেশটির জন্য স্বতন্ত্র একটি জোট প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। ২০১৫ সালে এটি পূর্ণতা পাবে বলে আশাবাদী আলোচকরা। এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বরাবরের মত চীন সোনাদিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর নির্মাণে তাদের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশের কাছে এ সংক্রান্ত আরও প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে আরও আলোচনার বিষয়টি বৈঠকে জানানো হয়েছে। ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে সচিব বলেন, বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগামী বছর ব্যাপক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এটি উদযাপিত হবে। সেখানে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর আগে, তিনদিনের সফরে শনিবার (২৭শে  ডিসেম্বর) ঢাকায় এসেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.