রাস্তা পারাপার: সেই আগের চিত্র

আইন ভেঙে রাস্তা পারাপার ঠেকাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সপ্তাহব্যাপী অভিযান গত ১লা ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী এ অভিযানে প্রায় ৯৭২  জন পথচারীকে জরিমানা, এক পথচারীকে এক মাসের কারাদ- দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান শেষ হওয়ার একদিন পর গতকাল সরজমিন হোটেল সোনারগাঁও মোড় থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায় পথচারীরা আগের মতো আইন ভেঙেই রাস্তা পার হচ্ছেন। এ সব পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও তারা অনেকটা দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। তারা জানিয়েছেন অভিযানের সময় মোবাইল কোর্ট তাদের সহযোগিতা নিলেও পরে তাদেরকে আর কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। বাংলামোটর মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ বক্স থেকে মাইকের মাধ্যমে পথচারীদের সচেতন করা হলেও পথচারীরা আগের মতো ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হচ্ছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সুব্রত সরকারের কাছে নিচ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন সিগন্যাল পড়েছে, তাই রাস্তা পার হচ্ছি। সিগন্যালের সময় যদি রাস্তা পার না হওয়া যায় তবে সিগন্যাল দেয়া হয়েছে কেন?  বাংলামোটর মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মেজবাহ উদ্দিন বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে পথচারীদের সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও যারা নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে আমরা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করতে অনুরোধ করছি। কিন্তু অনেকেই তাদের শারীরিক সমস্যার কথা বলছেন। তবে আগের তুলনায় পথচারীরা বেশি ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করছেন। কাওরান বাজার মোড়ে দেখা যায় সেখানে হোটেল সোনারগাঁও ও একুশে টিভি ভবন সংলগ্ন দুটি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পথচারীরা রাস্তা পার হচ্ছেন। একুশে টিভি ভবনের সামনের জেব্রা ক্রসিংটি অভিযানের পড়ে আঁকা হয়েছে। সার্ক ফোয়ারার পূর্বদিকে হোটেল সোনারগাঁও অংশে এবং সার্ক ফোয়ারার পশ্চিম দিকে পান্থপথ অংশের জেব্রা ক্রসিংয়ে যানবাহন সব সময় চলমান থাকায় জেব্রা ক্রসিংয়েও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে মানুষ। সিগন্যালে আটকে থাকার সময় গাড়িগুলো জেব্রা ক্রসিংয়ে থেমে থাকায় পথচারীদের রাস্তা পারাপারে সমস্যা হচ্ছে। অভিযানের  আওতায় থাকা দু’টি অঞ্চলের দৃশ্যমান উন্নতি হলেও ফার্মগেট খামারবাড়ি মোড়ের চিত্র একটুও বদলায়নি। সেখানে একটি ফুটওভারব্রিজ থাকলেও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন। বিএএফ শাহীন কলেজের ছাত্র জাহিদুর রহমান জানান, সে আইন সম্পর্কে জানে তবুও বন্ধু তার জন্য অপেক্ষা করছে তাই সে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়েছে। অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল হালিম জানান, ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার না হওয়া যে অপরাধ সেটা তিনি জানতেন না। গৃহিণী মোমেনা খাতুন অনেকক্ষণ ধরেই রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এক সময় একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কাও খান তিনি। দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. রফিক জানান, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ডিএমপি সপ্তাহব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেছে। যারা সচেতন হয়েছেন তারা ফুটওভারব্রিজ দিয়ে পার হচ্ছেন। যখন অভিযান চলছিল তখন মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করে এবং ২ প্লাটুন পুলিশ সদস্য দিয়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপারে নিবৃত্ত করা হয়েছিল। এখন যে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে আছেন তারা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করবেন নাকি পথচারীদের রাস্তা পারাপারে বাধা দেবেন? দায়িত্বরত অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এত কম সময়ের অভিযানে সফলতা আশা করা বৃথা। ন্যূনতম ৬ মাস এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হলে পজিটিভ কিছু পাওয়া যেতো। অভিযান শেষ হওয়ার পর পথচারীদের ফের আইন ভেঙে রাস্তা পারাপার প্রসঙ্গে অভিযান পরিচালনাকারী ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল কুদ্দুস বলেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ সরকারি সফরে মালয়েশিয়া আছেন। ৮ই ডিসেম্বর তিনি দেশে এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ডিএমপির উচিত আরও কিছু দিন সময় যে সব জায়গায় ফুটওভারব্রিজ রয়েছে সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।

No comments

Powered by Blogger.