মৃত ঘোষণার ৩ ঘণ্টা পর...

দুপুর ২টায় মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল ৪৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক নারীকে। মৃত্যুর প্রমাণপত্রও (ডেথ সার্টিফিকেট) ইস্যু করা হয়েছিল তার নামে। কিন্তু ঘন্টা তিনেক পর মর্গের দায়িত্বে থাকা ডোম যখন ওই নারীর লাশ নিতে গেলেন, তখনই ঘটে বিপত্তি। নড়ে উঠল মৃতদেহটি। চিৎকার করে উঠলেন ডোম। খবর দেয়া হলো চিকিৎসককে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখলেন ওই নারীর হৃৎস্পন্দন রয়েছে। শুরু হলো নতুন করে চিকিৎসা। গতকাল চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা মেডিক্যালের নতুন ভবনের ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডে। সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় এক নারীকে সেখানে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর নির্দেশ দেন অধস্তন কর্মকর্তাদের। অজ্ঞাত নারী হিসেবে তাকে ভর্তি করা হয় ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর ইউনিটে। অপুষ্টির কারণে ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। চলমান চিকিৎসার  এক পর্যায়ে গতকাল দুপুর ২টার দিকে ওই নারীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন নারী চিকিৎসক। ওই মহিলার নামে একটি ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। ওয়ার্ডবয় বেলাল সেই ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে যান মর্গের অফিসে। মর্গের দায়িত্বে থাকা নূর আলম বাবু লাশটি আনার জন্য তার সহকারী আজিজকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে পাঠান। বেলালকে সঙ্গে নিয়ে ডোম আজিজ বিকাল ৫টার দিকে ওয়ার্ড থেকে ওই নারীর লাশ আনতে যান। মৃতদেহটি ট্রলিতে তোলার সময় আজিজ খেয়াল করেন তার হাত-পা নড়ছে। মৃতদেহের নড়ে ওঠা দেখে চিৎকার করে ওঠেন আজিজ। পুরো ওয়ার্ডে এ সময় চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়। ওয়ার্ডবয় বেলাল ডেথ সার্টিফিকেট লুকিয়ে ফেলে দৌঁড়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ডেকে আনেন। কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসক মৃতদেহের হৃৎস্পন্দন পরীক্ষা করে দ্রুত ক্যানোলা লাগিয়ে স্যালাইন পুশ করেন। তিনি জানান, আসলে তাকে যখন মৃত ঘোষণা করা হয়, তখন তার হৃৎকম্পন বা শারীরিক কোন সচলতা ছিল না। ওই ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন মোয়াজ্জেম হোসেন মঞ্জু জানান, দুপুরে চিকিৎসকরা ওই নারীকে তাদের সামনেই মৃত ঘোষণা করেন। বিকাল ৫টার দিকে মর্গের লোকজন তাকে ভ্যানে ওঠাতে গেলে লাশটি নড়েচড়ে ওঠে। তখন আশপাশের লোকজনই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। জানতে চাইলে ইউনিট ৭-এর প্রধান অধ্যাপক আমিনুল হক বলেন, এ জন্য ডিউটি ডাক্তার দায়ী। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডিউটি ডাক্তারের নাম জানতে চাইলে তিনি মোবাইলের লাইন কেটে দেন। তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ঢামেক জরুরি বিভাগ সংলগ্ন রাস্তায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদকালে ২রা ডিসেম্বর ওই নারীকে ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখি। তখন লোকজন দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করি। ওই রোগীকে ‘মৃত’ ঘোষণার পর জেগে ওঠার ব্যাপারে ?জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোষী চিকিৎসককে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.