ডা. শামারুখের লাশের ফের ময়নাতদন্ত

যশোরে ডা. শামারুখ মাহজাবীন সুমির লাশের ফের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের কারবালা কবরস্থান থেকে তার লাশ তোলা হয়। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মুন্সী রুহুল কুদ্দুস যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডা. শামারুখের বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশের ১০ দিন পর লাশ উত্তোলন ও পুনঃময়নাতদন্ত করা হল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সালামের নেতৃত্বে একটি টিম শহরের কারবালা কবরস্থানে লাশ উত্তোলনের জন্য যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল হাসান, ডা. সুমির বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ধানমণ্ডি জোনের এএসপি মুন্সী রুহুল কুদ্দুস, মেডিকেল টিমের সদস্য যশোর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. হুসাইন সাফায়েত ও প্রভাষক জেসমিন সুমাইয়া এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইনামুল হক। লাশ উত্তোলনের পর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। সেখানে বিকাল ৩টার দিকে পুনঃময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত করেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হুদা, প্রভাষক ডা. হুসাইন সাফায়েত, ডা. জেসমিন সুমাইয়া ও ডা. মুশফিকুর রহমান।
অধ্যাপক ডা. নাজমুল হুদা জানান, মৃতদেহের ১১ ধরনের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও চারটি স্থানের এক্স-রে করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. আতিকুর রহমান খান জানান, পুনঃময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ পুনঃময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
লাশ উত্তোলনের খবর শুনে সকাল থেকে কারবালা কবরস্থানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ভিড় করতে থাকেন। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম কর্মীসহ কয়েকশ’ মানুষ এ সময় উপস্থিত হন। ডা. শামারুখের বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম, ভাই শাহানুর শরীফসহ আত্মীয়স্বজনও আসেন। তাদের চোখে মুখে ছিল বেদনার ছাপ। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তারা শামারুখের হত্যার বিচার দাবি করেন।
ডা. শামারুখের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মরদেহের অধিকাংশ অক্ষত আছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে তার গলার দাগের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার গায়ের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত ন্যায়বিচার দাবি করে যাব। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তার ওপর চাপ রয়েছে। এ ছাড়া শুরু থেকেই এ মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। এ কারণেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’ এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে পচেনি। আমার নিষ্পাপ সোনার টুকরা কখনও মরতে পারে না। আমার মেয়ে দেশের সম্পদ ছিল। ও কী দোষ করেছিল, যে ওকে মারতে হবে?’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সালাম জানান, লাশ উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এরপর লাশ যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
২৩ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ধানমণ্ডি থানায় পাঠানো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুনঃময়নাতদন্তের আবেদন করেন ডা. শামারুখের বাবা। বিষয়টি আমলে নিয়ে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে লাশ উত্তোলন করে ফের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। গত ১৩ নভেম্বর ধানমণ্ডির বাসা থেকে যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূ ডা. শামারুখ মাহজাবীন সুমির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ডা. শামারুখের বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বেয়াই খান টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী এবং মেয়ের জামাইর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ১৪ নভেম্বর রাতে কারবালা কবরস্থানে ডা. শামারুখের লাশ দাফন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.