পদ্মার কারণে বন্ধ হলো গ্যাস প্রজেক্ট কাজ by শাহ্‌ জামাল

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’র কাছে পদ্মা নদীর কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে ভেড়ামারা-খুলনা গ্যাস প্রজেক্ট’র কাজ। পদ্মা নদীর তলদেশের ৭০ ফিট গভীর দিয়ে কোন মতেই পাইপলাইন স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। দু’বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ার পর মালামাল গুটিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানির গ্রিলকেট কোম্পানি। কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। ২০০৬ সালে টাঙ্গাইল থেকে খুলনা পর্যন্ত ২৬৬ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর মধ্যে ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার। সরকার, এডিবি এবং জিটিসিএল’র অর্থায়নে গ্যাস সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ ২-এর আওতায় ভেড়ামারা-খুলনা পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস প্রকল্পের ব্যয় ধরা ৯০ হাজার ৩৮১ দশমিক ৪০ লাখ টাকা। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে কাজটি শুরু হয়। সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় ২০১৪ সালের জুন। কিন্তু নানা জটিলতা আর পদ্মা নদীর কারণে পিছিয়ে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প। সূত্র জানিয়েছে, খুলনার সঙ্গে এ প্রকল্পের সংযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার কাছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজসংলগ্ন পদ্মা নদী। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সেতুবন্ধ তৈরি করেছে পদ্মা নদীর ওপর লালন শাহ ব্রিজ। কিন্তু ব্রিজটিতে গ্যাসলাইন স্থাপনের জন্য কোন প্রভিশন রাখা হয়নি। সে কারণে চরম বিপাকে পড়ে ভেড়ামারা-খুলনা গ্যাস প্রজেক্ট বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা। তাই বাধ্য হয়ে পদ্মা নদীর তলদেশের ৭০ থেকে ১৬০ ফিট গভীর দিয়ে পাইপলাইন বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ দুরূহ কাজটি পায় জার্মানির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রিলকেট নামের একটি কোম্পানি। প্রায় সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলারে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজটি শুরু করে অখ্যাত এ কোম্পানি। কিন্তু তারা পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে মাত্র ২ কিলোমিটার খনন করে ৩০ ইঞ্জি ডায়া পাইপ স্থাপন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’র ১০০ মিটার উজানে গ্রিলকেট কোম্পানি পাইপলাইন বসানোর কাজটি শুরু করেছিল অনেক আগে। পদ্মার তলদেশের নিচে ২ কিলোমিটার ৩০ ইঞ্জি ডায়া পাইপ স্থাপনের চুক্তি করে তারা। প্রযুক্তির সাহায্যে নিয়ে নদীর তলদেশ দিয়ে তারা প্রথমে ৬ ইঞ্জি ডায়া পাইপ দিয়ে নদী খনন শুরু করে। প্রথমে সফল হলেও মোটা পাইপ’র ক্ষেত্রে দেখা দেয় চরম বিড়ম্বনা। মূল বাধা হয়ে দাঁড়ায় পদ্মা নদীর প্রচুর পরিমাণের পাথর। পাথরেই আটকে যায় গোটা প্রকল্প। ৩০ ইঞ্জি ডায়াচের পাইপ স্থাপন তো দূরের কথা এর ধারে-কাছেও যেতে পারেনি কোম্পানিটি। পরপর দু’বার চেষ্টা করেও তারা সফল না হওয়ায় মালামাল নিয়ে ছিটকে পড়ে। বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী জানিয়েছেন, ১৯১২ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের সময় পদ্মা নদী নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রচুর পরিমাণ পাথর ফেলা হয়। পদ্মার দু’ধারে গাইড ব্যাংকও নির্মাণ করা হয় পাথর দিয়েই। পাথর ভেদ করে পাইপলাইন স্থাপন করা খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে ৭০ থেকে ১৬০ ফিট গভীর দিয়ে ৩০ ইঞ্চি ডায়া পাইপ স্থাপন করা হবে। দু’বার চেষ্টা করেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানির গ্রিলকেট। এ জন্য তাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলার।
 তিনি জানান, নতুন কোন অভিজ্ঞ, দক্ষ ও উন্নত প্রযুক্তির কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে আবার নদীর তলদেশে পাইপ স্থাপনের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর জন্য এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছে। তবে কবে কাজটি আবার শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না, তবে শিগগিরই শুরু হবে। এ দিকে ভেড়ামারা থেকে ১৬৫ কিলোমিটার কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা পর্যন্ত ২০ ইঞ্চি ডায়া পাইপ বসানোর কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। সানিক্স লিমিটেড কোম্পানির সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পর এখন ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৫টি গ্যাস ট্রান্সমিশন সাব-স্টেশন বসানো হবে। ইতিমধ্যে ভেড়ামারার কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনার কাজও শেষের দিকে। অন্যদিকে, গ্যাস প্রজেক্টর কাজ বাস্তবায়নের জন্য ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত কোটি কোটি টাকার সম্পদ, পাইপলাইন, গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ, মালামাল এবং সাব-স্টেশনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য কাজ করছে আল আরাফাত সার্ভিসেস নামক একটি কোম্পানি। কোম্পানির এতদাঞ্চলের সুপারভাইজার আখতারুজামান জানিয়েছেন, ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইন এবং সাব-স্টেশনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ কর্মীবাহিনী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে এর কার্যক্রম চলছে।

No comments

Powered by Blogger.