বাংলাদেশকে শাস্তি দেয়ায় বিপরীত ফল বয়ে আনবে -ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের রানা প্লাজায় ধসের ফলে অনিরাপদ ভবনটিতে আটকা পড়ে ১১৩৮ জন গার্মেন্ট শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। মার্কিন ও ইউরোপিয়ান খুচরা বিক্রেতারা তাদের আওতাধীন কারখানাগুলোর পরিস্থিতি আরও উন্নত করার জন্য দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু তাদের এখনও অনেক দূর যাওয়া বাকি। শুক্রবার এ কথা বলা হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়তে। এতে আরও বলা হয়, ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর একটি পরিদর্শক দল গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছে যে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর এ পর্যন্ত তারা প্রায় ১১০৬টি বাংলাদেশী কারখানা পরিদর্শন করেছে। এগুলোতে তারা ৮০ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। এগুলোর প্রায়  এক-দশমাংশেরও বেশি কারখানার অবকাঠামোগত পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, এগুলোতে যদি উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে অবিলম্বে সংস্কার করতে হবে, অন্যথায় পরিত্যক্ত করতে হবে। বিশাল ঘন বসতিপূর্ণ বাংলাদেশে পোশাক শিল্প হচ্ছে আশীর্বাদস্বরূপ। ১৯৯৭ সালের পর দেশটির মাথাপিছু মোট জাতীয় উৎপাদন ও আয় দ্বিগুণ হয়েছে। কেননা বাংলাদেশ নিজেকে তৈরী পোশাক উৎপাদনের একটি কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের মোট প্রবৃদ্ধির অর্ধেকেরও বেশি এসেছে এ শিল্প থেকে, যা আগের একই সময়ের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হচ্ছে এ দেশ। তবুও ২২০০ কোটি ডলারের গার্মেন্ট ব্যবসা বৈশ্বিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখনও একটি গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্র এ দেশ। তাই বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানার সঙ্গে যে সব কোম্পানি ব্যবসা করে, তাদের বর্জন করা এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশকে শাস্তি দেয়ায় বিপরীতমুখী ফল বয়ে আনবে। তাই শ্রমিক নিরাপত্তার দাবিটি শুধু তাদের রক্ষা করার অজুহাত হওয়া উচিত নয়। এর ফলে চাকরি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বহু গরিব মানুষ। কিন্তু ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও ভাল কর্মপরিবেশ বিপরীতমুখী কিছু নয়। গার্মেন্ট শ্রমিকদের আগুনের ফাঁদে যেতে বাধ্য করা কিংবা রানা প্লাজার মতো ভবন ধসের ঘটনা নিয়ে অবহেলা দেখানো নিয়ে কোন প্রশ্রয় নয়। প্রাথমিক দায়ভার বাংলাদেশী নেতাদের ওপরই পড়ে। তাদের উচিত বিদ্যমান মানদণ্ডের উন্নতি ঘটানো, রাতে কাজ করানো হয় যেসব গার্মেন্টে সে সবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা। একই সঙ্গে দায়িত্ব রয়েছে পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতাদের। তাদের উচিত তাদের ব্যাপক বাজার শক্তি ব্যবহার করে সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ভাল কিছু দাবি করা। শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে বা নিজেদের করপোরেট ইমেজ ধরে রাখতে বা যে কোন কারণেই হোক, তবে কিছু কোম্পানি এটি করতে বেশ ভাল অবস্থান নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইউরোপীয় ও মার্কিন কোম্পানিদের দু’টি গ্রুপ নিরাপত্তা পরিদর্শন শুরু করেছে। ইতিমধ্যে স্বাধীন নিরাপত্তা নীতিমালা তৈরি করেছে এবং প্রাথমিক পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে গ্রুপ দু’টি। গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান কোম্পানিদের গ্রুপটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরীক্ষা হচ্ছে, এর মাধ্যমে নতুন কোন দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে কিনা। পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতাদের উচিত ছিল ধসের আগেই রানা প্লাজার নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করা। বড় কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের আরও ভাল পরিস্থিতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গ্রাহকদের অধিকার ও দায়িত্ববোধ রয়েছে এ ধরনের দাবি ওঠানোর।

No comments

Powered by Blogger.