লাশ নিয়ে শোকার্তদের মিছিল by খালিদ সাইফুল্লাহ

অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশবাহী গাড়ি বাসা থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ এবং বায়তুল মোকাররম থেকে বাসায় নেয়ার সময় জনতার ঢল বিশাল শোকমিছিলে পরিণত হয়। দুপুরে লাশের গাড়ির সাথে হাজার হাজার মানুষ হেঁটে মগবাজারের কাজী অফিস লেনের বাসা থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসেন। আবার একইভাবে বিশাল মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররম থেকে মগবাজার পর্যন্ত পৌঁছেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই মগবাজার কাজী অফিস লেনে অধ্যাপক গোলাম আযমের বাসার সামনে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ। প্রিয় নেতাকে দেখার সুযোগ করে দিতে সকাল ৭টার পর তার লাশবাহী গাড়িটি বাসার নিচে রাখা হয়। এরপর রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা মানুষ সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে তাকে শেষবারের মতো দেখেন। এ সময় মাইকে অনবরত কালেমা শাহাদত ও দোয়া চলতে থাকে। আগত দর্শনার্থীরাও দোয়া-দুরুদ পড়েন। সময় যত বাড়তে থাকে কাজী অফিস লেনে নেতাকর্মী ও জনসাধারণের আগমন তত বাড়তে থাকে। তাকে দেখতে আসেন দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম, প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি ডা: আবদুল্লাহ মো: তাহের, বরিশাল মহানগরী আমির মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা মহানগর সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, বিশিষ্ট আলেম অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদিন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী প্রমুখ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা তাকে দেখতে ভিড় জমান। ফলে তার বাড়ির সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা শৃঙ্খলার সাথে নেতাকর্মী ও জনসাধারণকে দেখার সুযোগ করে দেন। দুপুর ১২টা বাজতেই কাজী অফিস লেনসহ আশপাশের সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সকাল থেকেই কাজী অফিস লেনসহ আশপাশের বিভিন্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য অবস্থান নেন। কিন্তু নেতাকর্মীরা সুশৃঙ্খল থাকায় তাদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে রওনা দেন নেতাকর্মীরা। এ সময় তাকে বহনকারী গাড়ির সাথে বিপুল মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারে নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া গাড়ির আগে-পিছে হাজার হাজার নেতাকর্মী হেঁটেই বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে রওনা দেন। উচ্চৈঃস্বরে কালিমা শাহাদত ও দোয়া-দুরুদ পড়তে পড়তে তারা ভিকারুননিসা স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে বেইলি রোড হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে কাকরাইল আসেন। সেখান থেকে বিজয়নগর হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে গিয়ে পৌঁছেন। লাশবাহী গাড়ির সাথে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে এটি যেন একটি শোকমিছিলে পরিণত হয়। মিছিলকালে রাস্তার পাশেও শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে মিছিলের সাথে একাত্মতা প্রকাশ এবং গোলাম আযমের রূহের মাগফিরাত কামনায় উচ্চৈঃস্বরে দোয়া করতে থাকেন। নামাজে জানাজা শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে আবারো তার লাশবাহী গাড়িটি মগবাজার কাজী অফিস লেনের বাসায় নেয়া হয়। এ সময় নামাজে জানাজার আগে আসা মানুষের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আরো হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন। উচ্চৈঃস্বরে কালিমা শাহাদত, অন্যান্য দোয়া-দুরুদ এবং কখনো নারায়ে তাকবির সেøাগানসহ পথ চলতে থাকেন তারা। এ সময় পল্টন মোড়, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক ও মগবাজারসহ আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শোকমিছিলে একাত্ম হয়ে যান। শুধু কালিমা শাহাদত ও দোয়া-দুরুদের আওয়াজ শোনা যায় চারদিকে। ফিরে যাওয়ার সময় শোক মিছিলটি শান্তিনগর থেকে মালিবাগ হয়ে মৌচাক ঘুরে ওয়্যারলেস মোড় হয়ে তার বাসায় যায়। এ সময় শান্তিনগর থেকে শোকমিছিলে অংশ নেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। বেলা ২টা ৫০ মিনিটে তার লাশবাহী গাড়িটি কাজী অফিস লেনের বাসায় পৌঁছায়। এ সময় কাজী অফিস লেন ছাড়াও মগবাজার ওয়্যারলেস মোড় থেকে ভিকারুননিসা স্কুল মোড় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। অধ্যাপক গোলাম আযমের লাশ বাসায় নেয়ার পর পরিবারের সদস্য ও নেতাকর্মীদের শেষবারের মতো দেখার সুযোগ দেয়া হয়। তারপর বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশে তার দাফনকাজ শুরু হয়। ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও তার পরিবারের দুইজন সদস্য গোলাম আযমের লাশ কবরে রাখেন। বেলা সাড়ে ৩টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। দাফন শেষে কবর জিয়ারত করা হয়। এ সময় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম, সহকারী প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর জামায়াতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দাফন শেষে দীর্ঘ লাইন দিয়ে নেতাকর্মীরা অধ্যাপক গোলাম আযমের কবরে মাটি ছিটিয়ে দেন। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত কাজী অফিস লেনে সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা যায়।

No comments

Powered by Blogger.