দরপত্র ছাড়াই ইউক্রেন থেকে আড়াই লাখ টন গম আমদানি by আশরাফ আলী

ইউক্রেন থেকে জরুরিভিত্তিতে আড়াই লাখ টন গম আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। অপর্যাপ্ত মজুদের কারণ দেখিয়ে দরপত্র ছাড়া অনেকটা তড়িঘড়ি করে সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে এ আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি টন গমের আমদানি মূল্য ধরা হয়েছে ২৯৭ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার, যা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ২০৫ টাকা। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আজ অর্থনৈতিক ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য ওঠার কথা রয়েছে। বর্তমানে দেশে গমের মজুদ দুই লাখ ৭০ হাজার টন, যা পর্যাপ্ত নয় বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরিভিত্তিতে গমের আপদকালীন মজুদ বাাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। আর মজুদ বাড়াতেই আন্তর্জাতিক দরপত্রের পাশাপাশি সরকার-টু-সরকার পর্যায়ে ইউক্রেন থেকে এ গম আমদানির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইউক্রেনের সাথে চলমান সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আওতায় গম আমদানি ও অন্যান্য দ্বিপীয় আলোচনার জন্য ইউক্রেনের খাদ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম গত ৩১ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউক্রেন সফর করেন। এ সময় একটি ‘মিনিটস অব দ্য মিটিং’ স্বারিত হয়। এ আলোচনার পরিপ্রেেিত গত ১৫ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসে। প্রতিনিধিদলটি খাদ্যমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করে। বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিনিধিদলটি আড়াই লাখ টন গম রফতানির বিষয়ে সম্মত হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সারসংেেপ বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে গণখাতে ক্রয় আইন-২০০৬ (পিপিএ) ও গণখাতে ক্রয় বিধি, ২০০৮ (পিপিআর) অনুযায়ী এ আমদানি করা হচ্ছে। ক্রয় আইন পিপিএর ৬৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজন, ইত্যাদি েেত্র সরকারি ক্রয় সম্পর্কিত বিশেষ বিধান-সরকার, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বা বিপর্যয়কর কোনো ঘটনা মোকাবেলার জন্য জনস্বার্থে, সরকার কর্তৃক গঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশক্রমে, ধারা ৩২-এ বর্ণিত সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি বা অন্য কোনো ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয়কার্য সম্পন্ন করতে পারবে।
খাদ্য সচিব মুশফেকা ইকফাৎ স্বারিত সারসংপে বলা হয়েছে, বিগত অর্থবছরের আমদানিসংক্রান্ত বিভিন্ন রেকর্ডে দেখা যায় আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনি¤œ দরদাতার সাথে চুক্তি করা হলেও অনেক েেত্র এসব প্রতিষ্ঠান গম সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেও এরা আইনের আশ্রয় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গম পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। ফলে জরুরি প্রয়োজনে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি বলেছেন, গত অর্থবছরে ১০টি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হলেও নির্ধারিত সময়ে গম সরবরাহ করতে না পারার কারণে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের চারটি চুক্তি বাতিল এবং পারফরম্যান্স গ্যারান্টি (পিজি) বাতিল করা হয়। তাই জি-টু-জি পর্যায়ে গম আমদানি ল্যমাত্রার একটি অংশ আমদানি করা হলে গমের সন্তোষজনক মজুদ গড়ে তোলা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে বলে তিনি ওই সারসংেেপ উল্লেখ করেছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংেেপ বলা হয়েছে, গমের মজুদ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্রের পাশাপাশি সরকার-টু-সরকার পর্যায়ে ইউক্রেন থেকে এ গম আমদানির কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইতোমধ্যে গমের মজুদ আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। গত ১৯ অক্টোবর দেশে গমের মজুদের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৭০ হাজার টন, যা আপদকালীন মজুদ হিসেবে পর্যাপ্ত নয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দরের মাধ্যমে এ গম আমদানি করা হবে। প্রতি টন গমের আমদানি মূল্য ধরা হয়েছে ২৯৭ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থনৈতিকবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উঠানো হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে আজ রোববার সচিবালয়ে বিকেল ৩টা ও ৪টায় সভা দু’টি হওয়ার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.