স্বপ্নের সিঁড়ি অতিক্রমে পিতা পুত্রের সংগ্রাম

কার স্বপ্ন বড়? পিতা না পুত্রের। ভ্যানচালক পিতা রশিদুল ইসলামের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছেন মামুন। কখনও কখনও মানুষ তার স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যায়। বাপ-বেটার গল্প যেন তেমনি। এক ভ্যানচালকের ছেলে চিকিৎসক হওয়ার পথে ফেলেছেন প্রথম পদক্ষেপ। ভর্তি হয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজে। ছেলে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করায় শুরুতে আনন্দে আত্মহারা ছিলেন রশিদুল। যদিও ছেলের পড়ার খরচ যোগানোর চিন্তায় ছিলেন বেসামাল। ঠিক ওই মুহূর্তেই মামুনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তার পাশে এসে দাঁড়ায় দি অপটিমিস্টস। গত জানুয়ারি মাসে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় মানবকল্যাণের ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলা এ সংস্থার এসএসপিতে। অপটিমিস্টের সহায়তা পেয়ে কৃতজ্ঞ মামুন। বলেন, সংস্থাটির সহযোগিতার কারণে আমার পথচলা সহজ হচ্ছে। চিকিৎসক হয়ে গ্রামের চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চান মামুন।
নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার কাঁঠালী ইউনিয়নের দক্ষিণ দেশীবাই গ্রামের বাসিন্দা রশিদুল। স্ত্রী ছফিয়া বেগম আর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার টানাপড়নের সংসার। ভাই-বোনের মধ্যে মামুন তৃতীয়। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় মামুন উত্তীর্ণ হয়। তার ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলে রংপুর মেডিকেল কলেজে। সে সময় চিন্তাগ্রস্ত মামুন বলেছিলেন, মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু পড়ার খরচ চালাবো কিভাবে। বাবা বলেছেন, তুই চিন্তা করিস না। আমি ভ্যান চালিয়েই তোর খরচ যোগান দেবো। কিন্তু আমি জানি ভ্যান চালিয়ে এত টাকা যোগান দেয়া সম্ভব নয়। সে সময় তার সহযোগী হয় দি অপটিমিস্টস। মামুনের বাবার সম্পত্তি বলতে ৩ দশমিক ৫ শতক ভিটেমাটিটুকু। ভ্যান চালিয়ে কোন দিন ২০০, কোন দিন ১০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই সংসারটা টেনে নিচ্ছেন। যে কোন মূল্যে ছেলের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মামুন। শিক্ষাজীবনে বরাবরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে মামুন। অষ্টম শ্রেণীতে সে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। মানবতাকল্যাণের ব্রত নিয়ে ২০০০ সালের ৬ই অক্টোবর যাত্রা শুরু করে বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান দি অপটিমিস্টস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় নিউ ইয়র্কে। ঢাকায় সংস্থাটির শাখা কার্যালয় রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে দি অপটিমিস্টস-এর নিবন্ধন রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, রংপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের ৬২৮ শিক্ষার্থীর স্পন্সর করছে সংস্থাটি। সাভারের রানা প্লাজায় ভবনধসে ক্ষতিগ্রস্ত গার্মেন্ট শ্রমিকদের ৮১ স্কুলগামী শিশুর সহযোগিতায়ও এগিয়ে এসেছে দি অপটিমিস্টস। আশাহত শিশুদের আশা যোগানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থটি। দারিদ্র্য অথবা পিতা-মাতা হারিয়ে দুর্যোগে পড়া শিশুদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে দি অপটিমিস্টস। শিক্ষা উপকরণ থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে অসহায় মানুষের সহযোগিতা করে যাচ্ছে এ দাতব্য সংস্থা।

No comments

Powered by Blogger.