বাংলাদেশে হামলার জন্য জেএমবি-র সদস্যরাই গ্রেনেড তৈরি করেছিল

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে গ্রেনেড(আইইডি) বানানো হয়েছিল বাংলাদেশে হামলা চালানোর জন্য। আর এই গ্রেনেড বানানোর কাজে যারা নিযুক্ত ছিল তারা সকলেরই বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)র সদস্য। ভারতের জাতীয় ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ)-র মহাপরিচালক শরদ কুমারের বিস্ফোরণ স্থল সহ একাধিক জায়গা পরিদর্শন এবং তদন্তকারি গোয়েন্দাদের সঙ্গে একাধিক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে গত শুক্রবার গভীর রাতে এনআইএ-এর এক প্রেস বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। গত ২রা অক্টোবর বর্ধমানের বিস্ফোরন কান্ডের তদন্তভার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ৮দিন পরে এনআইএ-র হাতে তুলে দেবার পর পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি মডিউলের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য গোয়েন্দারা হাতে পেয়েছেন। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে , প্রচুর গ্রেনেড ও অন্যান্য বিস্ফোরক। এনআইএ শুক্রবারই প্রথম প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, খাগড়াগড়ে অভিযুক্ত এবং তাদের সহকারীরা সকলেই বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ জেএমবি-র সদস্য। এর মধ্যে রাজিয়া বিবি, আলিমা বিবি, বদর-এ আলম ওরফে হাসেম মোল্লা এবং আব্দুল হাকিম ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে। তারা এখানে বসে বাংলাদেশে পাচার করার জন্য আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বানানোর কাজে যুক্ত ছিল। এনআইএ জানিয়েছে, তারা জেএমবি-র কাজকর্মের হদিস পেতে তদন্তে সম্ভাব্য সব দিকই খতিয়ে দেখবে। জেএমবি-র পিছনে আর্থিক মদতের উৎসও চিহ্নিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এনআইএ সূত্রে জানানো হয়েছে, খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরীর বাড়ির দোতলায় সন্ত্রাসবাদীরা বিস্ফোরক, আইইডি ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র তৈরির পুরোদস্তুর একটি গবেষণাগার গড়ে তুলেছিল। খাগড়াগড়ের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে বাদশাহি রোডের একটি বাড়িতে গত ১৬ই অক্টোবর এনএসজি (ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড) তল্লাশি চালিয়ে ৩৫টি হ্যান্ড গ্রেনেড ও চারটি সকেট বোমা উদ্ধার করেছিল। খাগড়াগড়ের মতোই আরও একটি গবেষণাগারের হদিস মিলেছিল মুশির্দাবাদের বেলডাঙাতেও। শুক্রবার এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমার সব কটি জায়গা পরিদর্শনের পর কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, তদন্ত পর্যালোচনা করার জন্য আমি কলকাতায় এসেছি। মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানে গিয়েছি। এই মামলায় যারা পলাতক, তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য আমরা কিছু কৌশল বার করেছি। পলাতকদের হদিস দিলে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে এনআইএ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে তেলেঙ্গানার করিমনগরে গত ফেব্রুয়ারি মাসের একটি ব্যাঙ্ক ডাকাতির যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে এনআইএ। ওই ডাকাতির টাকার একাংশ খাগড়াগড়ের জঙ্গিদের কাছে পৌঁছেছিল বলে তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা। খাগড়াগড়ে উদ্ধার টাকার বান্ডিলে করিমনগরের ব্যাঙ্কের ছাপ মিলেছে বলে খবর। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে ঝটিকা সফরের মধ্যেই এনআইএ-ও ডিজি শরদ কুমার বিএসএফ-এর ডিআইজি এবং মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সীমান্ত এলাকার অপরাধ নিয়েই তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।  অনুপ্রবেশ, জাল নোটের কারবার, জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরির চক্র নিয়েও বিশদ তথ্য এনআইএ-র ডিজি জেনে নেন। এদিকে এনআইএ-র ডিজির পরে পশ্চিমবঙ্গে আসছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সোমবার তাঁর আসার কথা। সূত্রের খবর, তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের জামাত-যোগ এবং সারদার টাকা বাংলাদেশে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে যে সব তথ্য ঢাকা দিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করতে চান ডোভাল। পড়শি দেশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেই আসছেন ডোভাল। তিনি খাগড়াগড় কান্ডের তদন্তের অগ্রগতি জানতে বর্ধমানেও যেতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.