কবিতাযোনীর প্রজনন তত্ত্ব by অমিতাভ পাল

কবিতাযোনী পিঁপড়া থেকে তিমি পর্যন্ত যেকোন সন্তান প্রসব করতে পারে। কিন্তু আমরা যেমন জানি জেনেটিক্যাল কোডই নির্ধারণ করে দেয় কার সন্তান কি বৈশিষ্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে- কবিপুরুষও তাই কবিতার বৈশিষ্টের জন্য দায়ী। কবিপুরুষের ক্ষেত্রে জেনেটিক্যাল কোড হলো তার চিন্তাশক্তি। আজকাল যেসব কবিতা বিভিন্ন দিকে ছাপা হচ্ছে- তাদের অধিকাংশগুলি পড়লে মনে হয় কবিযশোপ্রার্থীরা কবিতার খোঁজে পথ হাতড়াচ্ছেন অন্ধদের মতো। এটা সেই হিতোপদেশের গল্পটিকে মনে করিয়ে দেয়- যেখানে এক বৃদ্ধ মৃত্যুর আগে তার তিন পুত্রকে একখণ্ড জমি দিয়ে বলে গিয়েছিলেন- এরই নীচে কোথাও পোঁতা আছে গুপ্তধন। তারপর সেই তিন ছেলের কোদাল নিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি- ব্যর্থতা এবং তারপর তাতে বীজ বুনে ফসল প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে অন্য অর্থের এক গুপ্তধন লাভ যেন আজকের কবিতার ক্ষেত্রেও মেলে। সেই বৃদ্ধ যেন অগ্রজ কবি এবং তিন পুত্র তরুণ কবিরা- যারা গুপ্তধনের মোহে খুঁড়ে চলেছেন অগ্রজদের রেখে যাওয়া জমি। এখনো তাদের অনেকের উপলব্ধিতে এই চেতনা জাগেনি- এবার বীজ বোনার সময় এসেছে। আর যেহেতু তাদের সংকট চেতনার- তাই কিসের বীজ বুনতে হবে সেটাও অজানাই থেকে যাচ্ছে। কবিতার ক্ষেতে চিন্তার বীজ বুনতে হয়। আর এই চিন্তার বীজের জন্ম হয় আমি কে- কোথায় ছিলাম- এখনই বা কোন পারিপার্শ্বিকতায় আছি এবং এই পারিপার্শ্বিকতার বিবর্তনই বা হলো কিভাবে- এইসব সম্বন্ধে জ্ঞানের প্রজননের ফলে। আর প্রজননের যে প্রক্রিয়া- অর্থাৎ সঙ্গম, গর্ভধারণ ও প্রতীক্ষা- এটি প্রজননের এমন এক সহযোগী যাকে বাদ দিলে হয় গর্ভপাত হবে কিংবা অপুষ্ট অথবা মৃত শিশুর ভূমিষ্ট হওয়া অনিবার্য। আমাদের কবিতায় আজকাল এইসব শিশুমৃত্যু কিংবা বিকলাঙ্গতা বা গর্ভপাতের ঘটনাগুলি ঘটছে অধিকাংশ সাহিত্য পত্রিকার ক্লিনিকগুলিতে- যারা এমআর করা হয় জাতীয় বিজ্ঞাপনে ভরে ফেলছে চারপাশ কিছু অদক্ষ চিকিৎসক আর দালালের সহযোগিতায়।
কবিতার জন্য একটা সাদা হাসপাতালের জন্ম দিতে পারিনি আমরা আজো। আর যে হাসপাতালগুলি ছিল সেগুলি সরকারী অদক্ষতার চরম অচলায়তনের স্থবিরতায় এবং বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবকদের ঔপনিবেশিক দালালীর ফলে গ্রামের বাজারের ডাক্তারখানার মর্যাদাও হারিয়ে ফেলেছে। ফলে সভ্যতার চরমতম বিকাশ যে কবিতা- সে আজ অর্থনীতির মতো দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রের কাছে হারিয়ে ফেলেছে মেধার জৌলুস এবং এখন তাকে হেঁটে যেতে হয় শহরের আলোকোজ্জ্বল রাস্তাগুলির বাইরে থাকা অন্ধকার গলিগুলি দিয়ে।
তবে এটাও এখানে সন্দেহহীন মনে স্বীকার করতে হবে- অর্থনীতি ছাড়া জীবন চলে না। কিন্তু অকবির হাতে পড়লে কবিতার যে দশা হয়- অর্থনীতির ক্ষেত্রেও যোগ্যতার অভাব এইরকম অবস্থার জন্ম দিতে পারে। আর অর্থনীতিবিদ যোগ্য হয়ে ওঠেন তখনি যখন জীবন সম্বন্ধে তার ধারণা থাকে স্বচ্ছ। এবং তাকে এই ধারণা দিতে পারে, তাকে প্রখর করে তুলতে পারে কবিতাই- কোন কর্পোরেট কর্তা না। আজকের বাংলাদেশে অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেখলে মনে হয় না- জীবন কি, এই কথা তারা জানেন। কবিতার সঙ্গে এক দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা এই অবস্থার জন্ম দিয়েছে। আর এই বিচ্ছিন্নতার জন্ম হয়েছে কবিতা রচনাকারীদের কবিতা সৃষ্টি করতে না পারার জন্যই। আগে থেকে তৈরি হয়ে থাকা কোন প্রাচীন স্বর্নমুদ্রার মতো গুপ্তধনের আশায় যতদিন কবিতা রচনাকারীরা থাকবেন- ততদিন অর্থনীতি বা অন্য কোন দৈনন্দিন বাস্তবতা সংশ্লিষ্ট বিষয় রাজত্ব করে যাবে চিন্তাহীনতার সাম্রাজ্যে।
যেকোন কবিকেই প্রথমে মানুষ হতে হবে। যথার্থ অর্থে মানুষ-যথার্থ একটি ধানগাছের মতো। তারপরেই না তিনি সমর্থ হবেন তার ফসল ফলাতে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মানুষ হওয়ার আগেই কবি হবার উদগ্র বাসনায় ডুবে যাচ্ছি আমরা। এটা কেবলমাত্র আমাদের দোষ না বরং সামাজিক চক্রগুলিই মানুষ না হয়ে অন্য কিছু হবার জন্য বাধ্য করছে সবাইকে। কিন্তু তারপরেওতো কবি মানেই সমস্ত দুঃস্থ নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক অটল দেয়াল। অর্থাৎ যা কিছুই হোক বা চলুক না কেন- যিনি কবি হবেন তিনি প্রথমেই মানুষ হবার পথে হাঁটতে শুরু করবেন এবং তারপর যখন তার উপলব্ধিতে এই কথা জাগবে যে জগতে তিনি না বলা কথাগুলি বলার জন্য এসেছেন- তখন আর সারাদিন চেষ্টা করে কবিতা বানাতে হবে না তাকে বরং তিনি যা বলবেন- তাই কবিতা হয়ে যাবে।
কবিতা কবিকে কথা বলার সাহস দেয়। আর যখনি কবিতার ভিতরে সাহসের এই ছাপচিত্রটি পড়ে- দেখা যায় অন্যান্য বিষয়েও অনেকেই সাহসী হয়ে ওঠেন। অর্থনীতিবিদ ভাবতে শুরু করেন জনগণের অর্থনীতির কথা, বিজ্ঞানী মগ্ন হন জনতার জীবন স্বচ্ছন্দ করার তত্ত্ব আবিস্কারে, দার্শনিক তার বইএর আলমারি থেকে সরিয়ে ফেলেন ভাববাদের মদের বোতল আর শিক্ষকরা হয়ে ওঠেন ছাত্রপ্লেটোদের সক্রেটিস। মাইকেল, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও সাহিত্য একদা আমাদের বঙ্গজীবনে এইরকম প্রভাব ফেলেছিল বৈকি।
তাহলে কবিতা কি বিপ্লব সংগঠনকারী? না- বরং কবিতা সবকিছুকেই যথার্থ হতে বলে, এমনকি দুঃস্থ নীতিকেও প্রকৃত দুঃস্থ নীতি হতে বলে সে। ভেজাল কোন কিছুরই কোন জায়গা নেই কবিতার দেশে। কেননা ভেজাল মানেই তো কাপুরুষতা- সাহসহীন সসীম সমাবেশের ভিড়- সুযোগসন্ধান। অথচ যথার্থতা অর্থ সনাক্তকরণ, যেকোন কিছুর প্রকৃত চেহারাটা ধরে ফেলা।
শিল্পের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় আইনস্টাইনের চতুর্থ মাত্রা আবিস্কারের ক্ষেত্রে। ইমপ্রেশনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত শিল্পীরা জানিয়েছিলেন প্রতিটি বস্তু কিংবা দৃশ্যের একটা নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল আছে এবং তারপর সময় এসে তাকে বদলে দিয়ে যায়। ফলে সকালের দৃশ্য আঁকার ক্ষেত্রে যে রঙ ব্যবহৃত হবে- দুপুরের দৃশ্যে তা থাকবে না। এক নতুন রঙ এসে দখল করে নেবে এই নতুন সময়ের পরিধিকে। ইমপ্রেশনিস্ট আন্দোলন যখন সময়ের এই নতুন বৈশিষ্টের কথা বললো- ওই মনীষী বিজ্ঞানী বুঝতে পেরেছিলেন বস্তু সময় দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। আবিস্কৃত হলো এক নতুন মাত্রার বোধ।
আজকের কবিতাও যদি এইভাবে স্পষ্ট করে দিতে পারে সমস্ত বস্তুর যথার্থতাকে তাহলে আমাদের বিজ্ঞানীরাও যে এইরকম কোন নতুন উপলব্ধিতে পৌছাবেন না তা কে বলতে পারে। কিংবা অর্থনীতিবিদেরা বা দার্শনিক, শিক্ষকেরা- যারা এখন সেই অলস কৃষকের মতো দিন কাটাচ্ছেন, যে ভাবতো তার জমিতে চাষ না করার ফলে যে আগাছা জন্মেছে- তারা গবাদী পশুর খাদ্য এবং জমিটা তাকে ঠকায়নি। এটা একটা মিথ্যা জীবনের মিথ্যা দর্শন। তবুও এই দর্শন নিয়েই আমরা সান্ত্বনায় দিন কাটাতে পারছি এইজন্য যে- কবিতা কবিতার কাজ করতে পারছে না। আর কবিতা তখনি কবিতার কাজ করতে পারে না যখন সে সাহসী হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। আমাদের এখন বোধহয় সময় এসে গেছে স্বীকারোক্তির। আর তাহলেই সান্ত্বনা- যা এখন আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতাকে সুখ দিচ্ছে- তাকে পালাতে হতো।
জীবনে সান্ত্বনা বলে কিছু নেই কারণ ক্ষতি বলেও কিছু নেই জীবনে। আছে এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাবার ব্যাপার। এখন আগের স্তরের প্রতি মোহকে যদি ক্ষতি বলা হয় তাহলে পরের স্তরটির আগমনকে শুধু অস্বীকারই করা হয় না বরং সেখানে তৈরি হয় বাঁধাও। অথচ সভ্যতা হাঁটে অগ্রগতির রাস্তায়। সেখানে আগের স্তর মোহ হিসাবে থাকে না বরং পরের স্তরের ভিত্তি হিসাবেই সে পরিচিত হয়। এই কথাটিকে যদি খেয়াল করি তাহলে অতীতের স্তর এবং বর্তমানের স্তর সম্বন্ধে একটা স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করে নিতে হবে কবিকে। এবং অতীতের স্তরকে অবলম্বন করে যে কবিতাগুলি রচিত হয়েছে- বর্তমান স্তরের সঙ্গে তাদের পার্থক্য কোথায়- কেন এই পার্থক্য এবং এই পার্থক্যে নতুন কোন জিনিসের জন্ম হয়েছে- পুরানো কোন জিনিসই বা এখন আর আগের চেহারায় সক্রিয় নেই- এসব বিষয়েও একটা স্পষ্ট উপলব্ধিকে ডায়েরির মতো রেখে দিতে হবে কবির মাথার দেরাজে। এটা তাকে সচেতনতার এমন একটা স্তরে পৌছে দেবে যেখানে যেকোন বিষয়ের মুখামুখি হওয়ার পরেই কবি বুঝে ফেলবেন সেই বিষয়টির পুর্বপুরুষ কে ছিলেএবং ভবিষ্যতে সে কোন উত্তর পুরুষের জন্ম দিতে সক্ষম। এই সচেতনতা জাগে বর্তমানের শরীরে যে চিহ্ণগুলি রয়েছে সেগুলি কি তা বুঝে ফেলার ভিতর দিয়ে। ধরা যকি কম্পিউটারের কথা। এটা কি? মানুষকে কাজে সহায়তা করার জন্য মানুষের তৈরি একটা আধুনিক যন্ত্রই তো। আর যখনই আমি বুঝলাম কাজে সহায়তা করার বিষয়টি, তখনি এই কথা বুঝতেও আমার অসুবিধা হয় না যে হাজার বছর আগে একই উদ্দেশ্যে তৈরি করা কোদাল আজকের জটিল জীবনের প্রয়োজনে এই জটিল কম্পিউটারে পরিণত হয়েছে। সেইসঙ্গে এটাও বুঝতে পারি- এই কম্পিউটার আরো হাজার বছর পরে আমাকে আরো অবসর দেবার জন্য এবং সেই সময়ের জটিলতাকে ধারণ করতে আরো জটিল কোন অবয়ব নেবে। বর্তমান কে খুব সূক্ষ্মভাবে দেখাটা এইজন্যই জরুরী।
কবিতায় বর্তমানের প্রতি মনোযোগ থাকলেই তা শিকড় গজিয়ে কোথাও বসতে পারে। আর শিকড় গজিয়ে বসতে পারলেই বর্তমানের মাটির স্বাদ পাওয়া যায় এবং সেই স্বাদকে পুষ্টিতে পরিণত করে হওয়া যায় বর্তমানের গাছ। সেই গাছে তখন ভিড় জমায় বর্তমানের পোকামাকড়, পাখি, রোদ, ছায়া, পথিক।
কবি সবসময়ই বর্তমানের সন্তান। কিন্তু তারপরেও চিরকালীন প্রাণের যত রকমের বৈশিষ্ট- সব তার মধ্যে থাকে। অর্থাৎ সেই-ই সব আর এই সমস্তটুকু হওয়ার পরেই তার পক্ষে সম্ভব আরো নতুন কোন বৈশিষ্টের জন্ম দেয়া। কবির প্রকৃত সন্তান এই নতুন বৈশিষ্টই- বিবর্তনের এই নতুন চিহ্ণ। আজকের কবিতা যে আগামীকাল টিকে থাকে তা এই বিবর্তিত হওয়ার গুণের কারণেই। ডারউইনের যোগ্যতমের অস্তিত্ব বিষয়ক তত্ত্বটি কবিতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কেননা সে বিবর্তনের ভিতর দিয়েই যোগ্যতম হয়। ফলে প্রাকৃতিক নিয়মের যে আবহমানতা- যা জড়জগতের মধ্যে সঞ্চারিত করেছে প্রাণের প্রবাহ বা জড়জগতকেই পরিণত করেছে প্রাণে- কবিতাও সেই নিয়ম মেনে চলে। তাই সে বিজ্ঞান- পদার্থের নিয়মাবলীর পদার্থবিজ্ঞানের মতো বা জীবনের নিয়মাবলীর জীববিজ্ঞান। ফলে কবিতাকে এখন শুধু কবিতা না বলে আরো যথার্থ কিছু বলা বোধহয় সঙ্গত। আমরাতো যথার্থকেই খুঁজছি।
যথার্থ হচ্ছে এমন এক বর্ণনা যা অতীত থেকে ভবিষ্যত পর্যন্ত বিস্তৃত দীর্ঘ কালসীমাকে একটা ব্র্যাকেটের মধ্যে স্থাপন করতে সক্ষম। ফলে তার মাধ্যমে যা কিছুকেই আমরা দেখি- দেখি তার পূর্ণপরিচয়ে। ধরা যাক যথার্থ মানুষ শব্দটিকে। এখানে যথার্থের অর্থ হলো জড় পৃথিবীর কয়েকটি বিশেষ উপাদান বিশেষ এক যুগ্মতায় যে প্রাণকোষের জন্ম দিয়েছিল- তারই সাম্প্রতিকতম একটি বিকাশের নাম মানুষ। এইভাবে একটি চেয়ারের যথার্থতা তার পূর্বপুরুষ বৃক্ষটির সঙ্গেও জড়িত। আর বৃক্ষ যেহেতু প্রাণের আরেক ধরণের বিকাশ- তাই চেয়ার মানুষেরও আত্মীয়। এই আত্মীয়তাকে মানুষ নির্মাণ করেছে তার সৃজনশীলতা দিয়ে। যেমন আমরা আরেকটি পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করি বা একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে তৈরি হয় আরেকটি রাষ্ট্রের সামরিক মৈত্রী বা আদর্শিক সখ্যতা। যথার্থতা আমাদের বুঝিয়ে দেয় এই মহাবিশ্বের সবকিছুই একটি মাত্র কেন্দ্রের বিভিন্ন পরিধির দিকে হেঁটে যাওয়ার একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া মাত্র। ফলে ব্যাসার্ধই সবকিছুর প্রকৃত পরিচয়- কে কোন পরিধি পর্যন্ত পৌছেছে সেই ব্যাসার্ধের। এ ব্যাপারে মানুষ বোধহয় একটু এগিয়ে আছে তার অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের চেয়ে কিন্তু মাঝেমধ্যেই তার ভিতরে পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারটাও চোখে পড়ে। মনে হয় কেন্দ্র তাকে টানছে আর সে মাধ্যাকর্ষণকে এড়িয়ে মহাশূন্যযানে চড়ে চাঁদে যাবার মতো উপেক্ষা করতে চাইছে সেই কেন্দ্রের টান তার অগ্রগামীতা দিয়ে। তাই পরিধিযাত্রা দ্বান্দ্বিক। তবে এই যাত্রায় স্থিতি এলেও কখনোই আবার কেন্দ্রস্থিত হয় না কিছুই বরং কেন্দ্রের বাইরে কোথাও তারা থাকে। আর ব্যাসার্ধের দূরত্ব যতোই বাড়ে ততোই পিছনে যাবার টান শিথিল হতে থাকেএবং স্থিতিস্থাপকতা যেমন চরম দূরত্ব অতিক্রমের পর হারিয়ে ফেলে তার সঙ্কোচনের ক্ষমতা- মানুষও বোধহয় এইভাবেই একদিন ফেরার অভ্যাস থেকে বিচ্যুত হয়ে পৌছে যাবে অসীমের ভূগোলে।
কবিতা আমাদেরকে ভূগোলের এই অসীমতার আস্বাদ দেয় সবকিছুকে যথার্থ হতে বলার ভিতর দিয়ে।



nocturnemagblog.wordpress নকটার্ন থেকে

No comments

Powered by Blogger.