মা আয়েশার ছবি, কাপড় বুকে নিয়ে মেয়ের কান্না- গ্রেপ্তার হয়নি ছিনতাইকারীরা

বুকে মায়ের ছবি ও কাপড়, চোখে পানি। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মাকে ডাকছে ছয় বছরের শিশু রাইসা। স্বজনেরা ভিন্ন কথা বলে তাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আবার সে মাকে ডাকছে, কাঁদছে। তাঁর কান্না আবারও কাঁদাচ্ছে স্বজনদের। এই শোকার্ত পরিবেশ গতকাল বুধবার দেখা গেছে ছিনতাইকারীদের নির্মমতায় প্রাণ হারানো গৃহবধূ আয়েশা আক্তারের বোনের বাসায়। রাজধানীর লালমাটিয়ায় ওই বাসা। গত মঙ্গলবার ভোরে সোবহানবাগে মাইক্রোবাসে থাকা ছিনতাইকারীরা রিকশারোহী ওই গৃহবধূর হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে গিয়ে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিতে নিতে তাঁর প্রাণই কেড়ে নেয়। আয়েশা আক্তারের মরদেহ মঙ্গলবার রাতে মোহাম্মদপুর ঈদগাহ জামে মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়। ওই ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। তবে হত্যায় জড়িত কাউকে গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। দুপুরে আয়েশার বোনের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা কাঁদছেন। আয়েশার একমাত্র মেয়ে আফরোজা মাধবী রাইসা বুকে মায়ের ছবি ও কাপড়-চোপড় ধরে আছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে বলছে, ‘আম্মু, আম্মুরে, আমাকে একটু আদর করো।’ স্বজনেরা অন্য কথা বলে তাকে ভোলানোর চেষ্টা করছেন।
রাইসার মামা রায়হানজাদা বলেন, রাইসা মঙ্গলবার রাতে মায়ের জন্য বারবার ঘুমের ঘোরে ডুকরে কেঁদেছে। ঘুম থেকে জেগে সকাল থেকে সে মায়ের ছবি ও কাপড়-চোপড় বুকে নিয়ে কাঁদছে। তাকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে মায়ের কবরের ওপর পড়ে বিলাপ করে বলেছে, ‘আম্মু, তুমি আমাকে একটু আদর করো, তুমি কি আর আমাকে আদর করবে না।’
রায়হানজাদা জানান, এ দৃশ্য দেখে সেখানে উপস্থিত সবার চোখ ভিজে যায়। রাইসাকে বিকেলেও কবরস্থানে নেওয়া হয়। তখনো সে কেঁদেছে। তিনি বলেন, ‘আয়েশাকে ফিরে পাব না। তবে তাঁকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন আমরা দেখতে পাই।’
স্বজনেরা জানান, রাইসা মোহাম্মদপুরের প্রমিটাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আজ বৃহস্পতিবার ওই স্কুলে আয়েশা আক্তারের জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। ধানমন্ডি থানার পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে রায়হানজাদা অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে বলা হয়, ২৪ অক্টোবর আয়েশা বান্দরবানে বেড়াতে যান। সেখান থেকে মঙ্গলবার সকালে শ্যামলী পরিবহনে পান্থপথে নামেন। এরপর লালমাটিয়ার বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মারা যান। ছিনতাইকারীরা তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগে দুটি মুঠোফোন, একাধিক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ছিল। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে থানার একাধিক দল চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার সকালে সোবহানবাগ জামে মসজিদের সামনে মাইক্রোবাসে থাকা এক দুর্বৃত্ত রিকশায় থাকা আয়েশার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। ব্যাগ ধরে থাকা আয়েশাকে মাইক্রোবাসটি টেনেহিঁচড়ে অন্তত ১০০ গজ নিয়ে যায়, রাপা প্লাজার কাছে তিনি নিস্তেজ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান, ব্যাগ নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মাইক্রোবাসটি দ্রুত পালিয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.