নিজামীর রায়- ফের বিশ্বের দৃষ্টি বাংলাদেশের দিকে

জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ফলে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আদালতের প্রতি আবারও বিশ্বের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রায় এক বছর বিরতির পর এই আদালত এ রায় দিলো। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক শীর্ষ নেতা গোলাম আযম কারান্তরীণ অবস্থায় মারা যাওয়ার পর পরই এ নিজামীর বিরুদ্ধে রায় দেয়া হলো। এ রায় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কারণ, ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর এটাই প্রথম রায়। নির্বাচনের পর আর একটি মামলার শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল। গতকাল মতিউর রহমান নিজামীকে কমপক্ষে ৮টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ফাঁসির রায় দেন। এরপরই অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়। এর শিরোনাম ‘দ্য পলিটিক্স অ্যাট প্লে ইন বাংলাদেশ ওয়ার ট্রায়ালস’। এ বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে গত বছর বেশ কয়েকটি রায় দেয়া হয়েছিল। সে অবস্থা থেকে এ বছর অনেকটা ভিন্নতর। গত বছর যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে থাকে ততই নিয়মিতভাবে মামলার রায় হতে থাকে। নির্বাচনের আগেই ফাঁসি কার্যকর করা হয় জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় দাবি যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য সাড়া দিয়েছেন। তার ফলেই ঢাকায় গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। বিশেষ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনে যারা পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছিল, নিজেরা সম্পৃক্ত ছিল তাদের বিচার করার জন্য গঠিত হয় এ আদালত। কিন্তু গত বছরের শুরুর দিকে অভিযুক্ত ১৬ জনের মধ্যে প্রথম জন যখন প্রথম কাঠগড়ায় দাঁড়ান তখন থেকেই এ প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা, স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলছে না আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত- এমন অভিযোগ তোলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন। অভিযোগ করা হয়েছে, এই বিচারের মাধ্যমে রাজনীতিতে সুবিধা নেয়ার প্রত্যাশা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সম্প্রতি এই বিচার আবার গতি পেয়েছে। বিশেষ করে এ বছরের নির্বাচনে আদালতের নীরবতার পর। সেপ্টেম্বরে জামায়াতের আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড লঘু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এ বিষয়ে অভিযুক্তের বৃটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান পর্যন্ত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে যখন অংশ নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময়েই সাঈদীর শাস্তি লঘু করা হয়। এর মধ্যে কোন মিল নেই। তিনি যখন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছিলেন তখন তিনি বাংলাদেশের রাজপথে সহিংসতার ঝুঁকি নিতে চান নি। এইসব মানুষের জীবন তো তার হাতে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেন, সব সিদ্ধান্তই স্বাধীনভাবে নিচ্ছেন আদালত। যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সৈয়দ ফারুক এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কোন হাত নেই। এসব ব্যক্তির বিচারের জন্য শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই তিনি আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোন কিছুই বলেন নি। তবে আদালত কেন ধীরগতিতে এগিয়েছে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা দেয় নি এখনও। এ বছরের জুনে বৃটিশ হাউজ অব লর্ডসে তখন বাংলাদেশের নতুন নিয়োগ পাওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘আল জাজিরা’র সাংবাদিককে বলেছিলেন, মামলাগুলো প্রস্তুত করা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। কিন্তু তার এই বক্তব্য গত বছর কিভাবে এতগুলো রায় হলো সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় না। ব্যারিস্টার মানজুর হাসান মনে করেন, এখন সরকার চাইছে রাজপথে সংঘাত এড়াতে।

No comments

Powered by Blogger.