শোকের মাতম- ৩ বাংলাদেশীর লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ by নুরুল আমিন

ভারতীয় নাগরিকদের হাতে নিহত ৩ বাংলাদেশীর লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কোন এক সময় কেদারাকোট সীমান্ত দিয়ে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে বিএসএফ জানিয়েছে। গতকাল বিকালে বাল্লা সীমান্তের কেদারাকোট নামক স্থানে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে এ তথ্য দিয়েছে বিএসএফ। ওই পতাকা বৈঠকে ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন বিএসএফ কমান্ডিং অফিসার লে.  কর্নেল একে বিদ্যাপীঠ ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়ন কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন। নিহত ওই ৩ বাংলাদেশীর লাশ ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই থানার পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। বাল্লা বিজিবি মরদেহ ফেরতের জন্য গতকাল সকালে বিএসএফ-এর কাছে পত্র দিলে এ পতাকা বৈঠক হয়। মঙ্গলবার রাতে চুনারুঘাট উপজেলার রেমা সীমান্তের বাছাইবাড়ী এলাকায় গাজীপুর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের আজগর আলীর পুত্র করম আলী (৩৫), ছমির হোসেনের পুত্র সুজন (২২) ও চুনু মিয়ার পুত্র আকল মিয়া (১৯) কে ভারতীয় নাগরিকরা কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ সীমান্ত এলকার একটি ধানক্ষেতে ফেলে রাখে। পরে সিংগিছড়া বিএসএফ জওয়ানরা ৩ বাংলাদেশীর মরদেহ উদ্ধার করে খোয়াই থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ৩ বাংলাদেশী হত্যার ব্যাপারে প্রথমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুই জানে না বলে জানালেও পরে বিভিন্ন মিডিয়াতে সংবাদটি প্রচারিত হলে পুলিশ-বিজিবি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে। এদিকে গতকাল সকালে একদল সাংবাদিক আলীনগর গ্রামে গেলে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়।  নিহত সুজনের নববিবাহিত স্ত্রী পান্না বেগম বলেন, আমার স্বামী আমাকে একা রেখে ঘর থেকে বের হয়ে যান। রাত তখন ৮টা কি সাড়ে ৮টা হবে। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘ভয় পেয়ো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই দোকান থেকে ফিরে আসব। এরপর শুনলাম তাকে হত্যা করা হয়েছে, এ বলেই তিনি মূর্ছা যান। মাত্র ১৩ দিন আগে সুজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পান্না বেগমের। এদিকে একই সময় গানের অনুষ্ঠানের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন আকল মিয়া। যাওয়ার সময় স্ত্রী সাহেনাকে বলেন, ‘আসার সময় ছোট মণির জন্য দুধ নিয়ে আসবো। সেই যে গেলেন আর এলেন না। সাহেনা ২ মাসের সন্তানকে বুকে নিয়ে বিলাপ করছিলেন। এমনি ভাবে রাতের আঁধারে ঘর থেকে বের হন করম আলী। তার সংসারে রয়েছে রাসেল (৭) ও রাশেদা (৪) নামের দুই অবুঝ সন্তান। বাবার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে তাদের কান্না কেউ থামাতে পারছেন না। তারা স্বজনের লাশ ফেরত ও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। চলতি বছরের ৫ই এপ্রিল ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই শহরের কাছে গৌড়নগর গ্রামের বাসিন্দারা গাজীপুর ইউপির মানিক ভাণ্ডার গ্রামের খুর্শেদ আলীর পুত্র আনোয়ার আলী (৩৫), একই ইউনিয়নের হাপ্টার হাওর গ্রামের ছিদ্দিক আলী (৫৫) ও উসমানপুর গ্রামের মফিজ উল্লার পুত্র উমর আলী (৩০)-কে কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন রাতের আঁধারে ওই ৩ ব্যক্তির মরদেহ বিজিবি’র কাছে হস্তান্তর করেছিল বিএসএফ। উল্লেখ্য, বাল্লা সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় গত ১০ বছরের শিশুসহ ২০ জন বাংলাদেশীকে গুলি ও পিটিয়ে হত্যা করে বিএসএফ।

No comments

Powered by Blogger.