কোবানির পথে ইরাকের কুর্দিরা

সীমান্ত পেরিয়ে আসা ইরাকের কুর্দি পেশমারগা যোদ্ধাদের গতকাল
সোল্লাসে স্বাগত জানায় তুরস্কের কুর্দিরা। ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই
যোদ্ধারা কোবানির লড়াইতে যোগ দিতে যাচ্ছে। ছবি: এএফপি
সিরিয়ার কুর্দি-অধ্যুষিত শহর কোবানিকে রক্ষার লড়াইয়ে যোগ দিতে তুরস্কে পৌঁছেছে ইরাকি কুর্দি বাহিনী পেশমেরগার যোদ্ধারা। এদিকে সিরিয়ার উদারপন্থী বিদ্রোহী গ্রুপ ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) ১৫০ সদস্য এরই মধ্যে তুরস্ক সীমান্ত হয়ে কোবানির যুদ্ধক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে। তুরস্ক সম্প্রতি ঘোষণা দেয়, তারা কোবানির লড়াইয়ে অংশ নিতে ইরাকের কুর্দি যোদ্ধাদের চলাচলের অনুমতি দেবে। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের। কুর্দি যোদ্ধাদের হটিয়ে তুরস্ক সীমান্তবর্তী শহর কোবানির দখল নিতে প্রায় দেড় মাস ধরে চেষ্টা করে আসছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের বিমান হামলার সুযোগ নিয়ে এবং প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে শহরটির পতন ঠেকাতে এখন পর্যন্ত সফল হয়েছে কুর্দি যোদ্ধারা। তবে এখনো শহরটি আইএসের হাতে পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। ইরাকের একটি বিমান ঘাঁটি থেকে আকাশপথে রওনা হওয়া কুর্দি যোদ্ধাদের একটি দল গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকালে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সানলিউরফা এলাকায় পৌঁছায়। এরপর তারা তিনটি বাসে করে ৫০ কিলোমিটার দূরের সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের দিকে যাত্রা শুরু করে। তুরস্কের চারটি সাঁজোয়া যান ও একটি পুলিশের গাড়ি ওই বাসগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। পেশমেরগা বাহিনীর আরেকটি দল স্থলপথে ৪০টি যানে করে তুরস্কে পৌঁছায়। তাদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। এই যোদ্ধারা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় একটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে তুরস্কে প্রবেশ করলে কুর্দি পতাকা নেড়ে তাদের স্বাগত জানায় শত শত মানুষ। কোবানি থেকে সিরিয়ার কুর্দিশ ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য আদম বাসো বলেন, ‘তারা আজকের মধ্যেই আমাদের শহরে পৌঁছাবে।’ সানলিউরফা এলাকায় পৌঁছানো দলটিতে ৯০ থেকে ১০০ জন যোদ্ধা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
কোবানিতে আইএসের বিরুদ্ধে যে প্রধান সিরীয় কুর্দি গোষ্ঠী লড়াই করছে, তার নাম কুর্দিশ পিপলস প্রটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজি)। এ গোষ্ঠীর সঙ্গে তুরস্ক সরকারের নিষিদ্ধ করা বিদ্রোহী কুর্দি সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তিন দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চালিয়েছে পিকেকে। তুরস্কের স্থানীয় একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমা-সমর্থিত উদারপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির ১৫০ সদস্যের একটি দল গতকাল তুর্কি সীমান্ত হয়ে কোবানিতে পৌঁছেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে তারা এফএসএ যোদ্ধার সংখ্যা ৫০ বলে জানিয়েছে। আর কুর্দিপন্থী সংবাদ সংস্থা ফিরাত নিউজ জানায়, ওই এফএসএ যোদ্ধারা আটটি গাড়িতে করে কোবানিতে গেছে। কোবানির ওই কুর্দি যোদ্ধাদের সহায়তার ব্যাপারে অনীহা দেখানোয় তুরস্ক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশটি কোবানিতে ইরাকি কুর্দি যোদ্ধাদের যাওয়ার সুযোগ করে দিল।
তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতগলু গত মঙ্গলবার বলেন, কট্টরপন্থী জঙ্গিদের মোকাবিলায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা যথেষ্ট নয়। কেবল পেশমেরগা ও উদারপন্থী সিরীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোই কোবানি থেকে আইএসকে হটাতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কোবানিতে আইএসকে মোকাবিলায় তুরস্ক যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে না, এমন সমালোচনার জবাব দিয়ে দাভুতগলু বলেন, ‘তুরস্ক কেবল মার্কিন বা ইউরোপীয় জনমতকে সন্তুষ্ট করতে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের একটি খেলার অংশ হতে চায় না।’ তেল-গ্যাসক্ষেত্রে আইএসের হামলায় নিহত ৩০: সিরিয়ার হোমস প্রদেশের শায়ের এলাকায় মঙ্গলবার একটি তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে আইএস জঙ্গিদের হামলায় দেশটির সরকারপন্থী ৩০ জন বন্দুকধারী ও নিরাপত্তাপ্রহরী নিহত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অবজারভেটরির পরিচালক রামি আবদেল রহমান এ খবর দিয়েছেন। ঘটনার সময় আইএসের অজ্ঞাত সংখ্যক যোদ্ধাও নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.