৫৮ লাখ টাকার ঘুষ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য by মহিউদ্দীন জুয়েল

চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে ৫৮ লাখ টাকার ঘুষ দিতে গিয়ে ধরার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ ১২ জনকে বদলি করেছে- যাদের সবার বিরুদ্ধে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টাকা নেয়ার কথা আমিও শুনেছি। তবে বিষয়টি তদন্ত করলে সত্য কিনা তা বেরিয়ে আসবে। যদি এই ধরনের ঘটনা গোপনে কেউ করে থাকেন অবশ্যই তার শাস্তি হবে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। সেখানে যাদের নাম আসবে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে ব্যবস্থা নেবো। সচেতন মহলের ধারণা, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সেখানে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জমির জালিয়াতির কারবার করে আসছে। একজন সার্ভেয়ারকে এত টাকা ঘুষ দেয়ার ঘটনায় প্রতি সপ্তাহে সেখানে এক কোটি টাকারও বেশি অবৈধ লেনদেন হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার শহীদুল ইসলাম মুরাদকে সেদিন ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা পড়ে ইলিয়াস নামের অপর ব্যক্তি। মূলত নগরীর পতেঙ্গা আউটার রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য হুকুম দখল করা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ এ সব টাকা দেয়ার কথা ছিল। বর্তমানে নগর ও জেলা এলাকায় ৫০টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। মুরাদ নামের ওই সার্ভেয়ার এর আগে নগরীর চান্দাগাঁও ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন। মুরাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কেবল তিনি নন, তার মতো এমন আরও অন্তত ১০-১২ জনের একটি চক্র রয়েছে যারা বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে কমিশন বাণিজ্য করছে।
গত মঙ্গলবারের ঘটনার পর পরই জেলা প্রশাসনে এই নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গঠিত হয় দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। পরদিন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জেলা প্রশাসনের এলএ ও রেকর্ড শাখা পরিদর্শন করেন। দোষ এড়াতে পরে ১০ জন সার্ভেয়ার ও দু’জন কানুনগোকে বদলি করা হয়। সার্ভেয়ার মুরাদের বিষয়ে নানা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার সঙ্গে সার্ভেয়ার নূর চৌধুরী ও মুজিবুর রহমানকেও বদলি করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে প্রকল্পের জন্য ঘুষ দিতে গিয়ে ধরার পড়ার ঘটনা ঘটে সেই চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড-এর ২৩ দশমিক ৪৭ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। এর ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় ধরা হয় ১২৫ কোটি টাকা। ঘুষ বাণিজ্যের ঘটনা ধরা পড়ায় কর্তৃপক্ষ শিগগিরই সেখানে ৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখাটি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জন্য ঘুষের হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ইতিমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানে কেশব লাল চৌধুরী নামের অপর এক ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার কথা ফাঁস হয়ে পড়লে গত ৩ মাস আগে তাকে বদলি করা হয়।

এদিকে ৫৮ লাখ টাকা ধরার পড়ায় ঘটনায় কোতয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম ও এসআই কামরুজ্জামানকে শোকজ করেছে আদালত। আটক ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানোতে গতকাল তাদেরকে শোকজ করা হয়। আগামী রোববার এই বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ইলিয়াসের রিমান্ড আবেদনের ওপরও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মনজুর মোরশেদ মানবজমিনকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তাদের বদলির কথা শুনেছি। তবে গ্রেপ্তার করা ইলিয়াসকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত ভবনে বোমা আতঙ্কের ঘটনায় নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। এক পর্যায়ে তল্লাশি চালাতে গিয়ে পাওয়া যায় ব্যাগভর্তি ৫৮ লাখ টাকা। মোট ৫৮টি বান্ডিলে টাকাগুলো একটি লাল ব্যাগে বিশেষ কায়দায় নিউজ পেপারে মোড়ানো ছিল। বেলা ১টায় ইলিয়াস নামের ওই ব্যক্তি টাকা নিয়ে আদালতের এনেক্স ভবন-২ এর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ধরা পড়েন। কোতোয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক। আগামী রোববার মোহাম্মদ ইলিয়াছকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। আদালতের মতো এমন র্স্পশকাতর জায়গায় এত টাকা নিয়ে সে কোথায় যাচ্ছিল প্রশ্ন আমাদের। আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে সব কিছু বেরিয়ে আসবে। ধরাপড়ার আগে ইলিয়াস চটের ব্যাগ নিয়ে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। এক পুলিশ তাকে অনুসরণ করে। পরে পুলিশ তাকে থামতে বললে কিছু দূরে থাকা এক ব্যক্তি দৌড় দেয়। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে হাতেনাতে আটক করে।

No comments

Powered by Blogger.