মাছের অভয়াশ্রম এবং নিরাশ্রয় মানুষ by জয়নুল আবেদীন

যে গাঁয়ে আমার জন্ম সে গাঁ ছিল প্রাকৃতিক মৎস্য ও পক্ষীবহুল এলাকা। তিন দিকে নদী, এক দিকে বিল। বিলের পরে মাঠ, মাঠের পরে ঘন সবুজ বনবাদাড় ও ডোবানালা। জ্যৈষ্ঠের শেষে খালবিল ও ডোবানালায় নতুন পানি ঢুকতে শুরু করে। পানির সাথে ঢোকে টেংরা, পুঁটি, ডেলা, টাকি, বাইলা, পাবদা, ফলি, শিং, বাইনসহ নানা রকমের ছোট ছোট মাছ। পুঁটির মধ্যে একটা চ্যাপ্টা আর একটা বড় ও লম্বাটে জাতিপুঁটি। নতুন পানির সাথে নেমে আসা কোনো কোনো জাতিপুঁটির গায়ে আলতা লাগানো থাকে। ঠোঁটের পেছন থেকে লেজ পর্যন্ত লম্বালম্বি আলতা পরা পুঁটিকে আমরা বলি ‘বউপুঁটি’। হৃষ্টপুষ্ট নতুন বউপুঁটির পেট ভরা শুধু ডিম আর ডিম। ডিম দেয়ার সময় হলে সাজগোজ করে গায়ে আলতা মেখে নাচতে নাচতে এসে বড়শি গিলতে শুরু করে। বোশেখের ঝড় আর দেয়ার গর্জনে ঘুম ভাঙে মাছের। জোরালো বৃষ্টি হলে ডোবানালা ও খানাখন্দ পানিতে ভরে ওঠে। বৃষ্টির পানি মাঠ থেকে গড়িয়ে নামে বিলে। গড়িয়ে নামা পানির সোঁতা ধরে বিল থেকে ডাঙায় উঠে আসে মাছ। ভাটি থেকে উল্টো দিকে ধাবমান মাছকে বলে উজাইন্যা। ডাঙায় উঠে আসা উজাইন্যা মাছের মধ্যে কই মাছ অন্যতম। উজাইন্যারা বোশোখের শেষ দিকে কান খাড়া করে রাখে।
একদিন সহসা ঝড়বৃষ্টি থেমে পশ্চিমাকাশে সূর্য উঁকি দিয়েছে। পুবাকাশে সাঁকোর মতো ভেসে উঠেছে সাত রঙের ধনু। টেঁটাহাতে ডুলা নিয়ে কই মাছ খুঁজতে এখনই বেরিয়ে পড়ার সময়। পানির সোঁতা বরাবর ছুটছি। এক জায়গায় উঁচু আল থেকে নিচু জমিতে কলকল শব্দে পানি নামছে। পানি বেয়ে কই মাছ ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে। পানির কলকল ধ্বনির সাথে কই মাছের কানকোয় হাঁটার কটকট শব্দে আমার মাথা আউলায়ে যায়। কই মাছের পিঠে লোহার চিরুনির মতো খাড়া কাঁটা এবং কানকোর দুই পাশ ভাঙা কাচের মতোই ধারালো। বজ্রমুষ্টিতে ধরতে গেলেই কাঁটা লাগে। মাথায় যত রকমের কৌশল আছে সব খাটিয়ে বেশ কয়টা কই ডুলায় ঢুকাতে পারি। দেখতে না দেখতে লোকজন হামলে পড়ে। মাছ ধরা নিয়ে সেকি হুলুস্থূল কাণ্ড।  পরদিন ঝলমল রোদ। মাঠে হাল দিতে গিয়েও কৃষকদের অনেকে দুই একটা কই মাছ ঘরে তোলে। মাঠে যেখানে-সেখানে আটকে পড়া মাছ কাক-পী ঠোকরিয়ে ঠোকরিয়ে খায়। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কাক-পীর মতো আমিও আটকে পড়া মাছ খুঁজতে বেরোই।
গ্রাম থেকে আধা কিলো দেিণ মাঠ। মাঝখানে ছোট একটা ডোবা। ক’দিন আগেও ডোবার তলা ছিল ঠনঠনে। বৃষ্টির পর এখন এককোমর পানি। কোথা থেকে দলে দলে ব্যাঙ ডোবার পানিতে আশ্রয় নিয়েছে। শ’ শ’ ব্যাঙ ডাকাডাকি করে মাঠ তুলে নাচাচ্ছে। ডোবা থেকে কয়েক গজ দূরে একটা কাক। কাক ঠোকরিয়ে ঠোকরিয়ে কী যেন খাচ্ছে। ঢিল দিতেই কাকটা উড়ে যায়। দেখি একটা কই মাছ ঠোকরানো। ক’দিন আগে ডোবার পাশের জমিতে চাষি হাল দিয়ে গেছে। হাল দেয়া জমিতেও একহাঁটু পানি। ডোবায় উজাইন্যা কই থাকতে পারে।
বাড়ি থেকে ছোট কনুই জাল ও ডুলাসহ আবার ফিরে আসি। ডোবায় জাল মারি। আস্তে আস্তে টানতে থাকি। জালের গোড়া কাছে আসতেই দেখি ভেতরে উৎপাত শুরু হয়ে গেছে। তিন-চারটে কই মাছ লাফালাফি করছে। বৃষ্টির পানিতে কই মাছ! আনন্দ আর উত্তেজনায় হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। ঘণ্টাখানিকের মধ্যে মাছে মাছে ডুলা ভরে ওঠে। মাছগুলো কানকো দিয়ে ডুলা থেকে বাইরে আসতে চাইছে। ডুলার গায়ে শক্ত কানকোর ঘর্ষণে খড়খড় শব্দ হচ্ছিল। মাঝ মাঠের ঠনঠনে ডোবায় বৃষ্টির জমা পানি থেকে মাছ ধরছি, আজব খবরখান শনৈঃশনৈঃ সারা-গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন পলো, ওঁছা, জালি, টেঁটা, কনুইজাল ইত্যাদি নিয়ে কই মাছ ধরতে শুরু করে। শতাধিক লোক ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কয়েক শ’ কই মাছ ধরার ফলে ডোবার পানি ঘোলা হয়ে যায়। ডুলাভরা মাছ দেখে বাড়ির সবাই খুশি। কই মাছের শক্ত প্রাণ। পানি দিয়ে পাতিলে ভরে রাখলে অনেক দিন বাঁচে। মা ভাজা করার জন্য বড় দেখে ক’টা মাছ আলাদা করে বাকি মাছ একটা বড় পাতিলে জিইয়ে রাখেন।
মা মাছ কাটতে শুরু করলে মায়ের সামনে পিঁড়ি নিয়ে বসে যাই। হৃষ্টপুষ্ট মাছগুলো ভীষণ দাপাদাপি করছিল। তা দেখে হযরত মামা আছড়িয়ে মাছগুলো নিস্তেজ করেন। মা নিস্তেজ মাছ বটিতে তোলা শুরু করলে জানতে চাইÑ মা, জ্যৈষ্ঠ মাসে আসমান ডাকলে কই মাছ পাগল হয়ে যায় কেন? ‘ওরা ডাঙায় উঠে আসে ওদের বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য। কী রকম? ‘চেয়ে দেখ, প্রতিটি মাছ কেমন মোটাসোটা। (মা একটি মাছের পেট চিড়ে কাঁঠালের বিচির আকৃতির হলুদ রঙের এক জোড়া ডিম হাতে নিয়ে) দেখ কত বড় ডিম! ডিমওয়ালা কইকে বলা হয় মা-কই। ডিম দেয়ার সময় হলে কোনো মায়েরই মাথা ঠিক থাকে না।’ 
‘মাছের পেটে ডিম এলে নিজ জীবনের নিরাপত্তার চেয়ে সন্তানের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবতে শুরু করে। মাছ কথা বলতে পারে না। তাই বলে অনুভূতি নেই এ কথা সত্য নয়। নির্বাক প্রাণীদের যত বোকা মনে করা হয়, তত বোকা নয়। মতা বণ্টনে স্রষ্টার বিচারে ভুল হয় না। কোনো কোনো প্রাণী মনুষ্য জগতের বৈজ্ঞানিকের চেয়েও বড় বৈজ্ঞানিক। মাছ প্রখর অনুভূতিশক্তি দিয়ে পানিতে বাস করেই স্থলভাগের ডোবানালার অবস্থান বুঝতে পারে। সবল মাছের ভয়ে দুর্বল মাছ সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়ে পড়ে। ডাঙায় উঠে ডোবা-গর্ত পেলেই স্বস্তিতে ডিম ছাড়ে। একটা কই মাছে যে পরিমাণ ডিম রয়েছে সে পরিমাণ বাচ্চা বড় হলে এ গাঁয়ের সবাইকে একটা করে কৈ ভাজা খাওয়ানো যেত।
#এত বাচ্চা! একটা কইয়ের ডিমে?
#কই মাছের ডিমের কথা শুনেই তাক লেগে গেল? ইলিশ মাছের কথা শুনলে কী করবে! সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় ইলিশ। একটি ইলিশ এককালে বিশ লাখ পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। পাঁচটা ইলিশ একবারে যে ডিম দেয় সে ডিমের প্রতিটি বাচ্চা বড় ইলিশে পরিণত হতে পারলে সেই ইলিশ দিয়ে দশ কোটি মানুষকে একবেলা পেটভরে খাওয়ানো যাবে। আমরা নির্বিচারে দশ কোটি মানুষের খাবার একাই সাবাড় করে থাকি। তোর জন্য আমার যতটুকু দরদ প্রতিটি প্রাণীর তার সন্তানের জন্য ততটুকু দরদ।
#(কিছুণ ভেবে) শুনেছি, মাছ নিজের বাচ্চা খায়, যারা নিজের বাচ্চা খায় তাদের এত দরদ কিসের?
#ভুল শুনেছ, কোনো মাছই নিজের বাচ্চা খায় না। এক মাছ অন্য মাছের বাচ্চা খায়। এ কারণেই মা-মাছ অন্য মাছের ভয়ে বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে।
#আরো শুনেছি, যাদের মন আছে তাদের শোকদুঃখ ও মায়ামমতা আছে। মাছের কি মন আছে?
#কে বলে নেই! কোনো কোনো মাছের মন আমাদের মনের চেয়েও বড়। খালবিল আর নদী-নালার পানিতে এদের বাচ্চারা নিরাপদ নয়। পেটের ডিম বাড়তে শুরু করলেই মা-মাছের চিন্তা বাড়তে শুরু করে। তুমি যে ডোবা থেকে মাছগুলো ধরে এনেছ। সে ডোবাই ছিল সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়। ক’দিন পরেই প্রতিটি ডিম থেকে বাচ্চা বের হতো। বর্ষার পানি ডোবায় প্রবেশ করার অগেই প্রতিটি বাচ্চা ‘মাথা তোলা’ হয়ে পড়ত। মাথা তোলা বাচ্চা আত্মরা করতে পারে। স্যাঁতসেঁতে ভূমি ছাড়া কই মাছ ডাঙায় হাঁটতে পারে না। মাটি স্যাঁতসেঁতে হওয়ার জন্য এরা জ্যৈষ্ঠের বৃষ্টির আশায় থাকে। বৃষ্টিতে ভূমিতল সিক্ত হলে মা-মাছেরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে ডাঙায় উঠে আসে। হেঁটে হেঁটে নিরাপদ ডোবানালার সন্ধান করে।
গভীর সমুদ্রের লোনাপানি ইলিশ মাছের আসল বাড়িঘর। সন্তানের নিরাপত্তার জন্যই পেট ভরা ডিম নিয়ে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে ছুটে আসে অগভীর জলে। শোল ও গজার মাছও জলাশয়ের গভীর তলদেশে বাস করে। বাচ্চা প্রসবের সময় হলেই খেতখামার ও ডোবানালার অল্প পানিতে চলে আসে। ঘন কচি ধানক্ষেত, জলজউদ্ভিদ কিংবা ঘন ফসলের জমির নিরিবিলি স্থানে আশ্রয় নেয়। পাখি যেভাবে খড়কুটা জড়ো করে বাসা বানায়, ঠিক সেভাবে গজার দম্পতি মিলে বাসা বানায়। ডিম ছাড়ার কয়েক দিন আগে বাসা বানানোর কাজ শেষ করে। গজারের বাসাকে বলা হয় আঁতাল। জোড়মানিকেরা খানাপিনা ছেড়ে ঠায় বসে থাকে আঁতালের নিচে। জলজ খড়কুটোতে ডিম ছাড়ে। আঁতাল বানানো থেকে বাচ্চা বের হওয়া পর্যন্ত সময় লাগে কমবেশি পনেরো দিন। এ পনেরো দিন বলতে গেলে না খেয়েই পার করে দেয়। ডিম প্রসবের পর বাবাÑমা দু’জনই পাহারা দেয়। পাহারাকালেও বাবা-মার আহার-নিদ্রা বন্ধ থাকে। না খেয়ে না খেয়ে শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে পড়ে। তার পরেও বাচ্চা ফেলে আহার খুঁজতে যায় না। মাছের এই দুঃসময়ে শিকারিরা বাচ্চাসহ বাবা-মাকে ধরে খেয়ে ফেলে। প্রতিটি প্রাণীর কাছে প্রাণের চেয়ে বেশি মূল্যবান আর কী থাকতে পারে! মাছের কাছে সন্তানের নিরাপত্তা নিজের প্রাণের চেয়েও বড়। এর পরেও কী করে ভাবতে পারলে মাছের মন নেই? মাছের মন বুঝতে হলে মনের মতো মন থাকা লাগে। আসলে আমাদেরই মনের মতো মন নেই বলেই উদরপিশাচের মতো আণ্ডা-বাচ্চাসহ মা-মাছকে উদরস্থ করে ফেলি।
মাছের মায়ের পুত্রশোকের কথা শুনে মোটা মোটা ডিমের দিকে চোখ যায়। আমার ভেতরটা কেমন যেন হয়ে ওঠে। নিস্তেজ মাছগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার চোখ পানিতে ছলছল করতে থাকে।
শীতকালে দূর থেকে ‘শোঁ...’ শব্দ কানে এলেই চোখ চলে যায় আকাশে। আকাশের গলে বলাকার মালা। হাজার হাজার বলাকা পাখায় পাখায় মিলে রচনা করে বিনাসুতার মালা। আমাদের গ্রামগুলো যেন প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা। শীতের সকালে বলাকার শব্দে ঘর থেকে বের হইÑ সন্ধায় ঘরে ঢুকি বলাকাদের ঘরে ফেরার শব্দ নিয়ে।
লাউয়ের গলার মতো বিলের গলা সরু হয়ে যুক্ত নদীর সাথে। ছোট মাছ আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে ঠাঁই নেয় বিলে। বিল হয়ে ওঠে দুর্বল মাছের অভয়াশ্রম। মাছে মাছে ভরপুর থাকে বিলের পানি। গাংচিল আর মাছরাঙা প্রি গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পানিতে। ঠোঁটে মাছ নিয়ে আবার চলে আসে আকাশে। ঠোঁট থেকে মাছ ছুড়ে দেয় শূন্যে। আবার দুই ঠোঁটে লুফে নেয় দ ম্যাজিসিয়ানের মতো। পাখির এসব মেলা ও খেলা বারবার দেখি। অস্থির নগরজীবন থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস পেতে কবি, লেখক ও শিল্পীরা ছুটে আসেন গাঁয়ের নিসর্গের কাছে। কান পেতে শোনেন, কদমগাছে কোকিলের ‘কুহু কুহু’ ধ্বনি। চোখ মেলে দেখেন বিলে মাছের টাপুরটুপুর খেলা।
কাঁধে বন্দুক ঝুলিয়ে শহর থেকে আসেন সাহেবরা। পাখির ওড়াওড়ি দেখলেই বুঝতে পারি, বিলে শিকারি ঢুকেছে। পাখিরা বিল থেকে নদী, নদী থেকে বিল, প্রাণ নিয়ে ছোটাছুটি করে। গুলি করার সাথে সাথে শ’ শ’ পাখির গগনবিদারি আর্তচিৎকারে বিলভূমি কাঁপতে শুরু হয়। যন্ত্রণাকাতর মুমূর্ষু পাখি কিছু দূর গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।
ষাটের দশকে শুরু হয় নদী থেকে বালু উত্তোলন। শুরু হয় ভাঙন। জনগণ চেষ্টা করেও বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারেনি। ফসলের জমিসহ বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে যেতে দেখে বিপন্ন মানুষ বহু আবেদন-নিবেদন করেছে কর্তৃপক্ষের কাছে। ফল পেয়েছে মিথ্যা মামলায় পুলিশি হয়রানিসহ হাজতবাস।
গত ২৮.৯.০০৭ ইং। এক রাতে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলাধীন রামপ্রসাদের চর গ্রামের শতবর্ষের প্রাচীন মসজিদসহ ২০টি বাড়ি ও ৫০ একর ফসলের জমি নদীতে তলিয়ে যায়। পরদিন দৈনিক নয়া দিগন্তসহ প্রতিটি জাতীয় পত্রিকায় সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিটও করা হয়। রিটের বরাত দিয়ে করা হয়েছিল দেওয়ানি মামলাও। বাস্তুহারা মানুষের কান্নায় খোদার আরশ টলে; কর্তৃপক্ষের হৃদয় টলে না। অর্থ ও ক্ষমতার কাছে প্রশাসন, আইনরক্ষাকারী সংস্থা, স্থানীয় সরকার, আইনের শাসন ও যুক্তি শিশুর মতো অসহায়।
গত তিন যুগে আমাদের গ্রামসহ পাশের টেকানগর, কালীর চর, সোনামই, খাসের চর ও রায়পুর গ্রামগুলো জমিসহ নদীতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উপজেলা কর্তৃপক্ষ ‘ইজারার বিপক্ষে মতামত’ দেয়ার পরেও জেলা কর্তৃপক্ষ কার স্বার্থে প্রতি বছর ইজারা দিয়ে কোটি টাকার সম্পত্তিসহ গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন করছে, বোধগম্য নয়। অনেকের ধারণা, সাধারণ মানুষের বুকের ভাষা চোখের জল প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে পৌঁছে না। পৌঁছলে যেখানে বিপন্নপ্রায় মৎস্য প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য অভয়াশ্রম করতে পারেন সেখানে মনুষ্যজাতিকে অভয়াশ্রম না হোক পৈতৃক আশ্রয় থেকে নিরাশ্রয় করতেন না।
`God made the country man made the town’ কথাগুলো শৈশবে রচনায় লিখতাম। রচনার চেয়েও সুন্দর ছিল আমাদের গাঁ। শৈশবে গ্রাম ছাড়া দুই দিনও থাকতে পারতাম না। গ্রামে গেলে এখন আর প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা দেখা হয় নাÑ পথেঘাটে দেখা হয় বাস্তুহারা বিপন্ন চিড়িয়াদের।
লেখক : আইনজীবী

No comments

Powered by Blogger.