নিয়ন্ত্রণহীন রংপুর আওয়ামী লীগ by জাভেদ ইকবাল

আওয়ামী লীগ রংপুরে কোন্দল বৃত্তেই ঘুরছে। দলের রাজনীতি ছেড়ে নেতাকর্মীরা তদবির, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে মেতে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে দলের নেতাকর্মীরা। জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৫ই আগস্ট শোকদিবসকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসন থেকে ৩ টন চাল তুলে নামমাত্র বঙ্গবন্ধু স্মরণে শোকসভা করে বাকি টাকা লোপাট করেছে মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা। এছাড়া তদবিরের লেনদেনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে তথ্য গবেষণা সম্পাদক এজাজ মাহামুদ রঞ্জুকে। ছাত্রলীগ মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চাঁদাবাজি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজে ৪৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পদত্যাগ করে। অভিযোগে জানা যায়, কমিটি গঠনের পর থেকে সভাপতি মাহমুদুর রহমান রিফাত ও সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসানসহ তাদের অনুসারীরা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। ফলে কলেজে দলের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। এ কারণে ছাত্রলীগ মেডিকেল কলেজ শাখার ৬৩ সদস্যের কমিটির মধ্যে ৪৩ জন নেতাকর্মী লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা দেলোয়ার তালুকদার বলেন, দলের যে অবস্থা বিরাজ করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন, কতিপয় নেতাকর্মীর জন্য পুরো দলের নেতাকর্মীর বদনাম হচ্ছে। দলে কোন বিরোধ ও কোন্দল নেই এমন দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বলেন, দলের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। বিভিন্ন অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, বড় দল হিসেবে অভিযোগ উঠতেই পারে। তবে আমাদের কাছে এমন অভিযোগ আসেনি, যা দলের জন্য শুভকর নয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। দলের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি না হওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর কতিপয় নেতাকর্মীরা দলের চেয়ে ব্যক্তি উন্নয়নে মেতে উঠেছে। টেন্ডারবাজি, তদবিরবাজিসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। রংপুরে দলের এমন অবস্থার কথা জানতে পেরে নাখোশ হয়েছেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তাই দলকে সুসংগঠিত করতে রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে নির্দেশ দিয়েছেন। রংপুর সিটি করপোরেশন মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, এমপি এইচএন আশিকুর রহমান, টিপু মুন্সিসহ শীর্ষ নেতা থাকা সত্ত্বেও দলের এমন বেহাল অবস্থার জন্য নেতাকর্মীরা তাদেরকেও দায়ী করেন। নেতাকর্মীরা জানান, মেয়র ও এমপিরা দলের তদারকি করে অবস্থান শক্ত করতে পারেন। কিন্তু কোন্দল ও বিরোধের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। রসিক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচনে দলের কতিপয় নেতাকর্মী আমার বিরুদ্ধে দলের মহানগর সভাপতি সাফিয়ার রহমানকে প্রতিদ্বন্দ্বী করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা আমাকে আগে থেকেই ডেডহর্স ঘোষণা করেছে। ফলে দলের প্রতি কোন আগ্রহ নেই। ক্ষোভের সঙ্গে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করেও দলের নেতাদের মন জয় করতে পারিনি। নব্য আওয়ামী লীগ নেতারা উপজেলা নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে আমাকে ঠেকানো আন্দোলন করে সার্থক হয়েছে। ওদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের নেতাকর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বিরোধসহ গ্রুপিং চলে আসছে। দলে কখন সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে তা এখন কেউ সঠিক করে বলতে পারছে না। তবে অনুমান করে জানান, এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়েছে। কিন্তু সম্মেলনের মাধ্যমে কোন কমিটি হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.