পুলিশে সোপর্দের ৪ ঘণ্টা পরই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবক নিহত

ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্ধ্যায় জনতার হাতে ধরা পড়েন তিন যুবক। তাঁদের তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। এর চার ঘণ্টা পরই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন একজন। খুলনার তেরখাদা উপজেলার কোদলা গ্রামের গাজির মোড় এলাকায় গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, নিহত বাবুল মোল্লা (৩৫) ডাকাতি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, নারী নির্যাতন, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁর বাড়ি উপজেলার তেরখাদা ইউনিয়নের বিলজুড়িয়া গ্রামে।
বুধবার রাতে যে স্থানে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে, সেটি মাছের ঘের এলাকা। কোদলা গ্রামের অন্য অংশের চেয়ে ওই এলাকাটি তুলনামূলক ফাঁকা। আশপাশে তেমন বাড়িঘর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। তবে পরিচয় প্রকাশ করে কেউ কথা বলতে চাননি। রাতে গুলির শব্দ শুনছেন কি না, এ বিষয়েও কেউ মুখ খুলতে চাননি। একজন গুলির শব্দ শুনেছেন দাবি করলেও তিনিও পরিচয় প্রকাশ করেননি।
পুলিশের ভাষ্য, খুলনার তেরখাদা ইউনিয়নের পান ব্যবসায়ী নিতিশ কুমার বিশ্বাস ও নুরুন্নবী গত বুধবার বিকেলে পাঁচটার দিকে ১৬ লাখ টাকা নিয়ে পাশের ইউনিয়নের সাচিয়াদাহ হাটে যাচ্ছিলেন। হাটে পৌঁছার আগে পাখিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী তিন সন্ত্রাসী তাঁদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি অন্য ব্যবসায়ী ও স্বজনদের জানান তাঁরা। এরপর হাটসংলগ্ন আশপাশের এলাকার রাস্তায় প্রহরা বসান ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। পরে ছাগলাদাহ এলাকা থেকে টাকা ছিনতাইয়ে জড়িত সন্দেহে বাবুল মোল্লা, মো. সাগর শেখ ও মো. শান্তকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
সাচিয়াদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মুঠোফোনে খবর পেয়ে আমরা সবাই রাস্তায় দাঁড়াই। সন্ত্রাসীরা লোকজনের ধাওয়া খেয়ে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে আমার ভাতিজা ইমরানের পায়ে গুলি লাগে। পরে তাদের ঘিরে ফেলে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে ওই সময় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে টাকা ছিল না।’
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আটক তিনজন পালিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনতার ওপর গুলি করেছিল। ওই অস্ত্র উদ্ধারে রাতে তাদের নিয়ে বের হয় পুলিশ। কোদলার গাজির মোড়ে পৌঁছালে অন্য সন্ত্রাসীরা এ তিনজনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। এত বাবুল মোল্লা নিহত হন। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চার পুলিশ আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ওসি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পাইপগান ও ১০টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ছিনতাই হওয়া টাকার বিষয়ে ওসি বলেন, টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
গতকাল দুপুরে বিলজুড়িয়া গ্রামে গিয়ে বাবুল মোল্লার বাড়ি তালাবদ্ধ দেখা গেছে। আশপাশের মানুষ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, বিভিন্ন সময় তিনি জেল খেটেছেন। ময়নাতদন্তের পর গতকাল সন্ধ্যায় বাবুল মোল্লার লাশ তাঁর চাচার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওসি বলেন, আটক দুজনকে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.