শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : খুতবায় সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি

পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার হজের অন্যতম প্রধান কাজটি সম্পাদন করছেন হাজীরা। এর ফলে আরাফাতের ময়দানটি বিশ্ব মুসলিমের সর্ববৃহৎ মিলনস্থলে পরিণত হয়। হাজীদের আবেগ মিশ্রিত ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ময়দান। হজের খুতবা শুনে ইমামের পেছনে পরপর জোহর ও আসরের নামাজ জোহরের ওয়াক্তে আদায়ের পর সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন হাজীরা। সূর্যাস্তের পর আরাফাতের ময়দান  ত্যাগ করে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হন তারা। ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়।

গতকাল দুপুরে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা প্রদান করেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল আশ শেখ (৭৩)। খুতবায় গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অনৈসলামিক শক্তিগুলো ইসলাম ও মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ইসলামের মূল ধারা থেকে বিচ্যুত ‘খাওয়ারিজরা’ এখনো ইসলামের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, ইসলামি শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হওয়া বিশ্বে মুসলমানদের সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার অন্যতম কারণ। এ জন্য ইসলামের পতাকাকে বিশ্বে উড্ডীন করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর সংবাদমাধ্যমকে ভূমিকা পালন করা উচিত।
তিনি বলেন, নিরীহ মানুষকে হত্যা করা সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুরতা। কারণ ইসলাম বলেছে, ‘নিরীহ মানুষকে হত্যা করা পুরো মানবসমাজকে হত্যার শামিল’। তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য মুসিলম দেশগুলোর নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত। কারণ এখন হচ্ছে ষড়যন্ত্রের সময়। গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে সহজ ধর্ম। ইসলাম মানবিকতার ধর্ম। এর ভিত্তি সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি মানুষের পুরো জীবনের নীতিকে ধারণ করে। তিনি বলেন, পবিত্র কুরআন মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ উম্মাহ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কারণ তারা সৎকাজের আদেশ করেন এবং অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখেন। তিনি ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরা ও মানুষকে কুরআন সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত পথ দেখানোর জন্য ইসলামি স্কলারদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি মুসলমানদের বিশ্বময় ভালোবাসা ও মানবিকতা ছড়িয়ে দেয়ারও আহ্বান জানান।
আব্দুল আজিজ আল আশ শেখ ৩৪ বছর ধরে হজের খুতবা দিয়ে আসছেন। এই ইসলামি স্কলার তার ১৭ বছর বয়সে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান।
সমবেত মুসল্লিরা খুতবা শুনেন ও জোহরের ওয়াক্তে জোহর ও আসরের নামাজ পরপর আদায় করেন একই ইমামের পেছনে। এরপর হাজীরা সেখানে অবস্থান করে চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে আল্লাহর দরবারে গুনাহ মাফের প্রার্থনা করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুনা কামনা করেন কায়মনো বাক্যে। সূর্যাস্তের সাথে সাথেই আরাফাত ময়দান ত্যাগ করেন হাজীরা।
এবার ২০ লখের বেশি ধর্মপ্রাণ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেছেন। ১৬০টির বেশি দেশের মুসলমানেরা হজ পালন করছেন। এ দিকে গতকাল ফজরের নামাজের পর মক্কায় কাবা ঘরের পুরনো গিলাফ খুলে নতুন গিলাফ লাগানো হয়। প্রতি বছর এই দিন কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়।
আজ থেকে ১৪ শতাধিক বছর আগে এই দিনে রাসূল সা: আরাফাতের ময়দানে লক্ষাধিক সাহাবিকে সামনে রেখে ভাষণ দেন, যা ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ নামে পরিচিত। এই ভাষণে তিনি ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করাসহ জীবন পরিচালনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড ইমাম হাজীদের উদ্দেশে খুতবা দেন সেই রীতি অনুযায়ীই।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেই হাজীরা হজের মূল কাজটি সম্পন্ন করেছেন। এই ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ। ৮ জিলহজ বৃহস্পতিবার ইহরাম বেঁধে মিনায় অবস্থান নেয়ার মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
হাজীরা গত রাত কাটান আরাফা ও মিনার মধ্যবর্তী স্থান মুজদালিফায়। সেখান থেকেই কংকর সংগ্রহ করেন পরের তিন দিন জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে নিক্ষেপের জন্য। আজ শনিবার সকালে হাজীরা মিনার তাঁবুতে ফিরে গিয়ে জামারায় কংকর নিক্ষেপ করবেন ও কোরবানি করবেন। কোরবানির পশু জবাইয়ের পরই ইহরাম ভাঙবেন। এরপর হাজীদের মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করতে হবে। এই তাওয়াফও হজের অন্যতম ফরজ। পাশাপাশি পাশেই অবস্থিত সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সায়ি (দৌড়ানো) করবেন। এ সায়ি করা ওয়াজিব। এরপর মিনার তাঁবুতে ফিরে গিয়ে পরপর দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজ জামারাতে তিনটি শয়তানের প্রতিকৃতিতে কংকর নিক্ষেপ করবেন। ১২ জিলহজ ইচ্ছে করলে হাজিরা মিনা ত্যাগ করতে পারবেন। তবে কেউ মিনায় অবস্থান অব্যাহত রাখলে পরদিন ১৩ জিলহজও তাকে কংকর নিক্ষেপ করে, তবে মিনা ত্যাগ করতে হবে। এরই মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। মক্কা ত্যাগের আগে হাজীরা বিদায়ী তাওয়াফ করবেন।
উল্লেখ্য, হজ ইসলামের ফরজ বিধান। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। পবিত্র কাবাঘরকে কেন্দ্র করেই মূলত হজের কার্যক্রম। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম আ: ও তার ছেলে ইসমাঈল আ: কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। হজের বেশির ভাগ কাজই হজরত ইবরাহিম, তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও ছেলে ইসমাঈল আ: এর সাথে সম্পর্কিত।

No comments

Powered by Blogger.