অর্থনৈতিক উদ্বেগই হংকং বিক্ষোভের মূল কারণ

হংকংয়ে অধিকতর গণতান্ত্রিকভাবে প্রশাসক নির্বাচিত করার অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছেই। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশের শক্তি প্রয়োগ ও চীন সরকারের হুমকি এতে অংশগ্রহণকারীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাদের দাবিগুলো মৌলিক অধিকারবিষয়ক বলেই সহজে তারা মাঠ ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গণতান্ত্রিক অধিকারকর্মীদের আয়োজনে চলমান এ বিক্ষোভে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছে। ছত্রভঙ্গ করতে ছুড়েছে মরিচের গুঁড়াও। কিন্তু বিক্ষোভ শুরু হওয়ার বেশ কয়েক দিন পরও হাজারো আন্দোলনকারী পথে রয়ে গেছে। বরং নুতন নতুন জায়গায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলেকজান্ডার চ্যান বলেন, ‘আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এটা খুবই বাড়াবাড়ি। তাই আমি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি।’ বিশ্লেষকেরা কেউ কেউ মনে করছেন, হংকংয়ের এ বিক্ষোভ আরও কয়েক দিন চলতে পারে। চায়নিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের চীনবিষয়ক বিশ্লেষক ও-লাপ লামও বলেন, পুলিশের ভূমিকায় সাধারণ মানুষ খুবই ক্ষুব্ধ। তারা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করায় আরও বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। এই সহিংস পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে পারে। লামের মতে, বেইজিং নমনীয় হবে এবং তাদের দাবি মেনে নেবে—বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এ আশা খুব ক্ষীণ।
তাই ব্রিটিশ শাসনাধীনে অর্জিত আইনের শাসন, বাক্স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষ বেসামরিক প্রশাসনের মতো মৌলিক মূল্যবোধগুলো রক্ষায় তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের শাসন থেকে ১৯৯৭ সালে হংকং দ্বীপ আবার কমিউনিস্ট চীনের শাসনে ফিরে আসে। একদলীয় শাসনের দেশ চীন এ সময় সেখানে, বিশেষ করে ব্রিটিশ শাসকদের চালু করা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিধিব্যবস্থা এবং মূল্যবোধ রক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। ‘ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস’-এর মহাসচিব আলেক্স চাও ইয়ং-কাং বলেন, ‘এ বিক্ষোভের সম্ভাব্য মূল প্রভাব হলো হংকংয়ের সাধারণ মানুষ আরও সচেতন হবে এবং আরও বেশি সংখ্যায় রাস্তায় নেমে আসবে। এতে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে।’ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক বিষয়ে হংকংয়ের যুবকদের উদ্বেগই এই বিক্ষোভের মূল কারণ। চায়নিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের বিশ্লেষক ও-লাপ লাম মনে করেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশাই ছাত্রদের পথে নামিয়েছে। চাকরিজীবীরা মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না। হংকং কনফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নও শ্রমিকদের দুরবস্থার অবসানে বিক্ষোেভ যোগ দিয়েছে। ১৯৯৭ সালে হংকং চীনের শাসনে ফিরে আসার পর দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১০ লাখ লোক অর্থনৈতিকভাবে উন্নত এ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পাড়ি জমায়। এ কারণেও স্থানীয় লোকজন বেইজিংয়ের ওপর ক্ষুব্ধ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হংকংয়ে গুরুতর আবাসনসংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে এ পরিস্থিতি।

No comments

Powered by Blogger.