দেশের প্রধান ইন্ডাস্ট্রি হওয়া উচিত ‘দক্ষ জনশক্তি উৎপাদন’ by সাহস রতন

কোন ইন্ডাস্ট্রি বা কারখানা স্থাপনের কথা চিন্তা করলে প্রথমেই যে বিষয়টা ভাবতে হয় তা হলো সেই কারখানায় কি ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার হবে। সেই কাঁচামালের উৎস কোথায় কিংবা কোথা থেকে সংগ্রহ করা হবে সেই কাঁচামাল। অর্থাৎ, ফ্যাক্টরি স্থাপনের সময় কাঁচামাল বা ‘র’ ম্যাটেরিয়াল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য, বাজারজাতকরণ সহ আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলো বিবেচনায় নিতে হয়। কিন্তু কাঁচামালের ব্যাপারটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ, কাঁচামাল হলো সেই পদার্থ যা ব্যবহার করেই প্রস্তাবিত কারখানায় বিশেষ পণ্যটি উৎপাদন করা হবে। কাঁচামাল হতে হবে সহজলভ্য। অধিক সংখ্যক। আর সর্বোপরি দামে সাশ্রয়ী। কাঁচামালের ঘাটতি হলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। কাঁচামাল সরবরাহে দেরি হলে উৎপাদন সময় দীর্ঘায়িত হবে। তার মানে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে কারখানাটি। লোকসান গুনতে হবে। আর সে জন্যই যে কোন ধরনের কারখানা স্থাপনের একেবারে গোড়াতেই কাঁচামালের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হয়।
কাঁচামাল বলতে প্রাকৃতিক কাঁচামালকেই বোঝাতে চাইছি আমি। বাংলাদেশে প্রধান প্রাকৃতিক কাঁচামালগুলো হলো গ্যাস, কয়লা, পাট, তুলা, মাছ, আখ প্রভৃতি। তবে গ্যাস আর কয়লা- এই দুই প্রাকৃতিক কাঁচামাল সাধারণত জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে পর্যাপ্ত ও সাশ্রয়ী না হওয়ায় পাট, তুলা, মাছ, আখ প্রভৃতি কাঁচামাল ব্যবহার করে আমাদের দেশে খুব বেশি কারখানা এখনও গড়ে ওঠে নি। বাংলাদেশে এযাবৎ কালে ব্যাপক হারে যে সব কারখানা গড়ে উঠেছে তার প্রায় সবগুলোরই কাঁচামাল আসছে দেশের বাইরে থেকে। আর বহির্বিশ্বের কাঁচামাল নির্ভর কারখানা দিয়ে দেশে কখনই সত্যিকার অর্থে শিল্পায়ন সম্ভব নয়। যেগুলোকে কারখানা বলে আমরা চিহ্নিত করছি সেগুলো মূলত এসেম্বলিং ইউনিট। গার্মেন্ট কারখানাগুলো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। গার্মেন্টস রপ্তানির মাধ্যমে শুধু সুইং কস্ট বা সেলাইয়ের খরচটি দেশে থেকে যায়। বাদ বাকি সব অর্থ কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশে চলে যায়। অনেকে দেশে গড়ে ওঠা কার্টুন, লেবেল সহ বিভিন্ন ধরনের এক্সেসরিজ বা লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির কথা বলবেন। তবে বাস্তবতা হলো, এই সব লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত সব কাঁচামালই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ওষুধ শিল্পের কথাও এখানে বলা যেতে পারে। ওষুধ তৈরির প্রায় সব কাঁচামালই বিদেশ থেকে আমদানিকৃত। তার মানে হলো, বড় আকারের যত ধরনের কারখানাই আমরা গড়ে তুলেছি তার বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামালের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না?
তাহলে কি আমাদের এখানে কোন শিল্প গড়ে উঠবে না? যে সব শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলোর কি হবে? কিংবা আমাদের দেশে এমন কাঁচামাল কি আছে যা ব্যবহার করে আমরা শিল্পায়ন ঘটাতে পারি? আমি তো মনে করি, আমাদের দেশে সহজলভ্য, অধিক সংখ্যক এবং সাশ্রয়ী দামে এই তিনটি গুণাবলীসম্পন্ন একটামাত্র কাঁচামালই আছে। আর তা হলো- আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠী। বিশাল সংখ্যার এই কাঁচামাল পাওয়ার জন্য বাড়তি কোন খরচ নেই। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে। আমদানি খরচও নেই। এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা হলো- এই কাঁচামালকে সহজেই দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়। আজই কাজ শুরু করে দেয়া উচিত। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত সর্বত্র এই কারখানা স্থাপন করা হবে। সবার একটাই কাজ। আর তা হলো, বিপুল জনগোষ্ঠীকে ট্রেনিং দিয়ে ‘দক্ষ জনশক্তি’তে রূপান্তর করা। এখনই আছে চৌদ্দ কোটি (মতান্তরে ষোল কোটি)। যা ২০৪০ সালে প্রায় ৩৫ কোটিতে দাঁড়াবে। এই সংখ্যাকে দক্ষ করে অর্ধেক জনগোষ্ঠী বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি আমরা। গার্মেন্ট কিংবা ওষুধ শিল্প থেকে অন্তত ১০ গুণ বেশি আয় হবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কথা হলো আমরা সেটা করবো, না বসে বসে ভাববো- দেখি না কি করা যায়?

No comments

Powered by Blogger.