শপথ গ্রহণ সংবিধানের লঙ্ঘন

২৪ জানুয়ারির আগে দশম সংসদের সদস্যদের শপথ পড়ার ঘটনায় সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, '৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনে নির্বাচিত বলে কথিত কোনো ব্যক্তি সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কার্যভার নিতে পারেন না। অথচ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তারা কার্যভার গ্রহণ করেছেন।' একে 'ভয়ঙ্কর ঘটনা' হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, 'এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সময় আসবে এবং জনগণ এ প্রহসনের জবাব দেবে।'
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে এবং ভোটবিহীন কারচুপির মাধ্যমে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন তারা শুধু পবিত্র সংসদ ও গণতন্ত্রকেই কলঙ্কিত করেননি বরং তারা জনগণের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
'সংবিধান অনুযায়ী আজ (গতকাল) যাদের শপথ গ্রহণের কোনো সুযোগ ছিল না_ তাদেরকে শপথ পড়িয়ে, মাননীয় স্পিকারও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। শপথ নেওয়া এসব সদস্যের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ নেতাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির দ্বারাও সংবিধানের বিচ্যুতি ঘটবে বলে স্পষ্ট বলা যায়।'
'সব কিছুই ঘটেছে স্রেফ ক্ষমতার জন্যই'_ অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'দ্রুত ক্ষমতা সংহত করার জন্যই এসব কিছু করা হয়েছে।' ক্ষমতার মোহে রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে অবজ্ঞা করার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই একদিন অভিযুক্ত হতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, 'যারা আজ সংবিধানের এমন বিচ্যুতি ঘটালেন তাদের মনে রাখা সঙ্গত যে, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তারাই সংবিধানের বিচ্যুতি ঘটানোর জন্য বিরাট শাস্তির বিধান করেছেন।'
তিনি বলেন, সংসদের মেয়াদকালীন পুনরায় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কয়েক দিনের জন্য হলেও দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকায় দু'জন করে নির্বাচিত সদস্য থাকার মতো অঘটন যাতে না ঘটে সে জন্য একই অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৩(ক) অনুচ্ছেদের(ক) উপদফায় বলা হয়েছে, 'তবে শর্ত থাকে যে এই দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উলি্লখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্য রূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।'
মির্জা ফখরুল বলেন, গণবিচ্ছিন্ন ক্ষমতাসীন সরকার জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে ১৫৩ জনকে কোনো ভোট ছাড়াই মনোনীত করার প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনী তামাশার মাধ্যমে অবশিষ্ট ১৪৭ জন সদস্যের মধ্যে ১৩৯ জনকে নির্বাচিত দেখিয়েছে সরকারের আজ্ঞাবহ এবং এদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নতজানু নির্বাচন কমিশন। তথাকথিত এই নির্বাচনী প্রহসনকে বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য দেখানোর জন্য গায়েবি ভোটারদের একটা কাল্পনিক হিসাবও প্রকাশ করা হয়েছে, যা দেশ-বিদেশের কেউই বিশ্বাস করেনি। সরকারের পছন্দের স্থানীয় পর্যবেক্ষকরাও এই হিসাবকে অতিরঞ্জিত তথা বানোয়াট বলেছেন।

No comments

Powered by Blogger.