বাগেরহাট বগুড়া ঠাকুরগাঁওয়ে মন্দিরে আগুন ভাংচুর

(দুর্বৃত্তরা বুধবার রাতে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের উত্তর কচুবুনিয়া গ্রামে রাধাগোবিন্দ সেবা আশ্রম পুড়িয়ে দেয়) বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা ও বগুড়ার নন্দীগ্রামে কালীমন্দিরে অগি্নসংযোগ ও ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাতে এসব অপকর্ম ঘটানো হয়। মোরেলগঞ্জে দুই মন্দিরে অগি্নসংযোগের ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে মন্দিরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা মামলায় দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ব্যুরো, নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর_
বগুড়া :জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার কাথম গ্রামের কালীমন্দিরে বুধবার রাতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাতে মন্দিরে আগুন জ্বলতে থাকলে মন্দিরের পাশের বাড়ির লোকজন টের পায়। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে আগুন নেভায়। রাত প্রায় ১০টায় আগুন লাগানো হয় বলে স্থানীয়রা জানায়। এতে করে কাথম গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কাথম কালীমাতা মন্দির কমিটির সভাপতি গিরেন চন্দ্র জানান, আগামী মঙ্গলবার আমাদের পৌষ পার্বণ পূজা রয়েছে। এই পূজা নির্ভয়ে উদযাপন করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দেশেরে বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলার পরিেেপ্রক্ষিতে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গতকাল বুধবার হিন্দুু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঠাকুরগাঁও :সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের ঝাঁড়গাঁও গ্রামে মন্দির ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, বুধবার রাতে সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের ঝাঁড়গাঁও গ্রামে দুর্বৃত্তরা মাহিন্দ্র চন্দ্রের বাড়ির কালীমন্দিরে হামলা চালায়। এ সময় তারা মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করে। দুর্বৃত্তরা মন্দিরটিতে অগি্নসংযোগের চেষ্টা করে। বাড়ির মালিক মাহিন্দ্র চন্দ্র টের পেলে তার ও পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
মাহিন্দ্র চন্দ্রের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরাই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেওয়ায় তার বাড়িতে ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার ফয়সল মাহমুদ জানান, দোষীদের ধরার চেষ্টা চলছে।
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) :ময়মনসিংহের ত্রিশালে কালীরবাজার এলাকায় একটি মন্দিরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা মামলায় দু'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ত্রিশাল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কালীরবাজার এলাকার তিরখি গ্রামের তরফবাড়ী দয়াল মন্দিরে মঙ্গলবার রাতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মঞ্জুরুল ওয়াহেদ নিক্সনকে প্রধান আসামি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটনসহ ১৪ জনকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করে।
ত্রিশাল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সারোয়ার ও ভুলু মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বাগেরহাট/মোরেলগঞ্জ : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নে বুধবার রাতে দুটি মন্দিরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মন্দির দুটি হচ্ছে_ মসনি গ্রামের রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রম ও কামলা-জিলবুনিয়া গ্রামের শ্যামা মন্দির। আগুনে রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রমের লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে শ্যামা মন্দিরের উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এ হামলায় হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম দুটিতে আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আবদুল হাকিম, মো. এছাহাক ও মিন্টু নামে ৩ জনকে আটক করেছে।
রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রম মন্দিরের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ মৃধা জানান, বুধবার রাতে কে বা কারা রাধা-কৃষ্ণ মূর্তি ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। পার্শ্ববর্তী লোকজন ছুটে এসে আগুন নেভায়। আগুনে প্রতিমা মন্দিরের টিনের চালা পুড়ে যায়।
মোরেলঞ্জ থানার ওসি আজিজুল হক জানান, আগুন দেওয়ার ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
পীরগঞ্জ (রংপুর) : পীরগঞ্জ উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের শিমুলবাড়ীতে ছেরাতন মাঝি নামে এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ এনামুল হক (৪৫) নামে এক জামায়াত নেতাকে আটক করেছে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি বলেন, সংখ্যালঘুর বাড়িতে অগি্নসংযোগের ঘটনায় ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাঘায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সংখ্যালঘুরা
বাঘা (রাজশাহী) : বাড়িতে থেকেও হামলার ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বাঘা উপজেলার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। তাদের নিরাপত্তা বিধানে এলাকায় টহল দিচ্ছে বিজিবি-পুলিশ।
জানা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলার তুলসীপুর, হরিপুর ও আড়পাড়া এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সহিংস ঘটনা ঘটে। চলে দু'পক্ষের পাল্টাপাল্টি আক্রমণ। বাড়ির উঠানে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, মারধর ও গাছপালা কেটে ফেলাসহ গরু-ছাগল নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়।

No comments

Powered by Blogger.