সংবাদমাধ্যম নিয়ে ফরহাদ মজহার : মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ঘৃণাযুক্ত বক্তব্য এবং আইনী মীমাংসার প্রশ্ন by বাধন অধিকারী

একুশে টেলিভিশনের এক টক শো-তে ফরহাদ মজহারের গণমাধ্যম সংক্রান্ত বক্তব্য এই লেখার প্রেরণা। কদিন আগে ‘একুশের রাত’ নামের ওই আলোচনায়, একাত্তর টেলিভিশনে পিকেটারদের হামলার প্রেক্ষাপটে সঞ্চালক আলাপ তুললে, রাজনীতিক কাজী ফিরোজ রশীদ এবং চিন্তক ফরহাদ মজহার এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান। কাজী ফিরোজ, হামলার বিরোধীতা করে সঞ্চালককে উদ্দেশ্য করে বলেন, তাদের মানে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল হতে হবে আরও। একপক্ষীয় অবস্থান নেয়া যাবে না। নাহলে হামলার ঘটনা এড়ানো যাবে না। অন্যদিকে ফরহাদ মজহারের কিছু সুনির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ছিলো গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। এমনকী গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও। একটা অভিযোগ: গণমাধ্যম বিরোধীদের জায়গা দেয় না। আরেকটা অভিযোগ; গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টরা মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তার- হয়রানি, দিগন্ত টেলিভিশন-আমার দেশ-চ্যানেল ওয়ান বন্ধ হওয়া নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। সর্বোপরি গণমাধ্যমকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছেন ফরহাদ মজহার। আর এইসব অভিযোগকে ভিত্তি করেই উনি বলেছেন; “আপনাদের তো বোমা মারাই উচিত।” উনি যা বলতে চেয়েছেন, তার তরজমা করলে এমনটা দাঁড়ায় যে; গণমাধ্যমগুলোর জনবিরোধী ভূমিকাই এইসব হামলার শর্ত তৈরী করেছে। আপনাদের তো বোমা মারাই উচিত বলতে আমি বুঝেছি, গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করেই উনি বলেছেন; এর প্রতিক্রিয়ায় তো বোমা হামলাই হবে। গণমাধ্যমগুলো যতোটা জনবিরোধী তাতে সন্ত্রাসের মাত্রা আরও বেশি হতে পারত; এমনটাই ফরহাদ মজহারের প্রস্তাবনা। সুতরাং একাত্তর টেলিভিশনে বোমা হামলা করতে বলেছেন; সরাসরি এমন অভিযোগ আনা যায় না তাঁর বিরুদ্ধে।
তবে আজকের এই লেখার উপজীব্যের স্বার্থেই গণমাধ্যম নিয়ে ফরহাদ মজহারের ওইদিনের গণমাধ্যম সংক্রান্ত আলাপটাকে খানিক বিচার করতে হবে আমাদের। পাঠক, এইতো কদিন আগের কথা, আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়; ফরহাদ মজহার কিন্তু উৎসাহ জুগিয়েছেন এই তথ্যহীন-ভিত্তিহীন প্রচারণায় যে, হেফাজতের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে মারা হয়েছিলো। তিনি কিন্তু চুপ করে ছিলেন, যখন শাহবাগের তরুণরা সবাই নাস্তিক না হয়েও নাস্তিক্যের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলো। দেশব্যাপি ঘৃণাযুক্ত বক্তব্য (হেইট স্পিচ) প্রচার পেয়েছিলো। যাদের পক্ষে না দাঁড়ানোর কারণে তিনি আজকে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের অভিযুক্ত করছেন, সেই আমার দেশ, সেই দিগন্তই ছিলো এইসব ভিত্তিহীন প্রচারণার প্রাণভোমরা। আর শাসক শ্রেণীর সরকার-বিরোধী অংশের (আমার মতো অনেক মানুষের বিবেচনাতেই সরকার আর বিরোধী দল- দুই-ই শাসক শ্রেণীর অস্তর্গত) এইসব মিডিয়ার প্রচারণায় কেবল শাহবাগের তরুণদের ক্ষতি হয়নি; ক্ষতি হয় আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাঙ্কেও। সবগুলো সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট হেরে যায় বেহালভাবে। প্রতিশোধ নিতে আইনগত সন্ত্রাস চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় এইসব সরকারবিরোধী মিডিয়া।
আর এদিকে শাসকশ্রেণীর বিরোধীদলীয় অংশের হাতে তো আজ রাষ্ট্রের আইন নাই, নির্বাহী ক্ষমতা নাই, সেকারণে তারা শারীরিক সন্ত্রাস চালাচ্ছে। বোমা মারছে। খুব পরিস্কার কথা। আর সেই পরিস্কার কথাটা বলতে গিয়ে ফরহাদ মজহার ফাঁদে পড়েছেন। সরকারপন্থী মিডিয়াগুলো এবার সেই সময়ের আমার দেশ দিগন্ত টিভি কায়দায় মিথ্যা প্রচারণা করছে। সরকারবিরোধীরা করেছিলো ব্লগারদের বিরুদ্ধে, তাদের বানিয়েছিলো নাস্তিক। আজ সরকারপন্থীরা মিথ্যে প্রচারণা করছে ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে, তাকে বানিয়েছে বোমাবাজ। একেই কি বলে ন্যাচারাল জাস্টিজ?
সে প্রশ্নে আমরা পরে আসছি। তারআগে একটা জরুরি দিক খেয়াল করতে হবে আমাদের। সেটা হলো; যে প্রতিশোধের রাজনীতির কথা বললাম, সেই রাজনীতিকেই ফরহাদ মজহার স্বাভাবিক বলে রায় দিলেন। তাহলে প্রশ্ন না উঠে যায় কোথায়, ফরহাদ মজহার শাসক শ্রেণীর বিরোধী দলীয় অংশের একজন প্রতিনিধি; যিনি প্রতিশোধকেই গন্তব্য বিবেচনা করেন? ফরহাদ ভাইয়ের মতে; শাহবাগের ছেলেমেয়েরা যুদ্ধাপরাধির ফাঁসি চেয়ে চিৎকার দিলে ফ্যাসিবাদ হয়; আর জামায়াত-শিবির একাত্তর টিভিতে বোমা মারলে তা একাত্তরের ভূমিকার দোষ হয়! এই বৈপরীত্যের পাঠ নেয়াই আদতে ফরহাদ মজহার পাঠ! ফরহাদ ভাইয়ের সূত্রেই পরিচিত হয়েছিলাম এ্যাডোয়ার্ড সাঈদের সঙ্গে। নিপীড়িতের পক্ষের আমৃত্যু লড়ে যাওয়া সেই সংগ্রামী বুদ্ধিজীবী সাঈদের জবানে প্রকৃত বুদ্ধিজীবী একা। না, জনবিচ্ছিন্ন নন তিনি। তবে ক্ষমতাবিচ্ছিন্ন। শাসক-শ্রেণী বিচ্ছিন্ন। ক্ষমতার বিপরীতে একাকী দাঁড়াতে পারেন যিনি, তিনিই সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী। ফরহাদ মজহারের অন্য এক ক্ষমতাশক্তির পক্ষ হয়ে এখনকার এক ক্ষমতাশক্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন। এটা দলবৃত্তি। বুদ্ধিবৃত্তি না। সেকারণেই এই বৃত্তি বড়জোর প্রতিশোধকেই নির্দিষ্ট করতে পারে। প্রতিশোধ-স্পৃহার উত্থান যেখানে, সেই জায়গাটাকে নির্দিষ্ট করতে পারে না।
ফরহাদ ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন রেখে বলছি; একাত্তর টেলিভিশনে মারা এই বোমার ভেতরে যে প্রতিশোধের আগুন তার জ্বালানি সরবরাহকারী তো দুই পক্ষই। যে পক্ষ আজ একাত্তরকে সরকারের দালাল বলে বোমা হামলা করছে, সেই পক্ষইতো তাদের সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধ হওয়ার আগে মনের মাধুরী মিশিয়ে হলুদ গল্প লিখে গেছে দিনের পর দিন। তখন কি ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, সরকারপক্ষকে কথা বলতে না দিলে তো এগুলো বন্ধ হবেই! বলেছিলেন কি, বন্ধ হওয়াই উচিত! বলেননি। বলার কথাও নয়। কাজের কথা ছিলো দাঁড়ানো। অবস্থান নেয়া। উনি নিয়েছেন। সিরকারবিরোধী মিডিয়াগুলোর পক্ষে। আর আজ সরকারপক্ষীয়রা নির্বাহী ক্ষমতায় নয়, একেবারে ডিরেক্ট বোমায় আক্রান্ত হবার পর উনি বলছেন, এটাই উচিত ছিলো! মানে এটাই হবার ছিলো! এখানেই তিনি বুদ্ধিজীবী থেকে দলীয় চিন্তাবিদে পর্যবসিত হন, হারিয়ে ফেলেন বোমার ভেতরের মানসিক উপাদানগুলো; যার নির্মিতি খোদ ক্ষমতাদখলের রাজনীতির মধ্যেই।
টক শোর আলোচনার এক পর্যায়ে গিয়ে ফরহাদ ভাই বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে তিনি। সেকারণে সরকারপন্থীরা যা করছে করুক না, তবে সরকারবিরোধী মিডিয়াগুলো বন্ধ করে দেয়া হলো কেন, সেটাই ফরহাদের অভিযোগ। এই অভিযোগের ভেতরেও রয়েছে, ক্ষমতা-রাজনীতির সীমাবদ্ধ অঞ্চল। উনি এই সরকার আর বিরোধীদের বাইরে এসে বলেননি; সরকারপক্ষীয় বা সরকারবিরোধী; যাই হোক না কেন, সবগুলো মিডিয়াই এন্টিপিপল (জনবিরোধী কিংবা এর সমার্থক শব্দ উনি উচ্চারণ করেছেন বটে, তবে তা কেবল বিরোধী দল-বিরোধী অর্থে। যেন বিরোধী দলটাই হলো মাস পিপল!)। তিনি বলেননি, সবগুলো বড় মিডিয়া হাসিনা-খালেদার কিংবা কথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, কিংবা বহুজাতিক কর্পোরেশনের পক্ষের রাজনীতি করে। ফরহাদ ভাই বলেননি, কেননা উনিও ওইসব পক্ষেরই কোনো একটার অন্তর্গত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চান। তার পক্ষের জন্য। সেটাই তাঁর কাছে নিরপেক্ষতা।
আর এ কারণেই বিপরীত পক্ষ তাঁকে একাত্তর-টেলিভিশন বিরোধী হিসেবে শনাক্ত করে। আখ্যা দেয় বোমাবাজ। তাঁকে ফাঁদ পেতে ধরার চেষ্টা করে। একাত্তরে বোমা হামলা যেমন করে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর বিলীন করবার প্রতিক্রিয়া; ফরহাদ মজহারের জন্য বোমা-ফাঁদ পাতাও তেমনি ওনার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া। এটাই প্রতিশোধের খেলা। এরই নামতো রাজনীতি। ক্ষমতা দখলের লড়াই। ফরহাদ মজহার বুদ্ধিজীবী থেকে সেই দখলদারিত্বের খেলায় বিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক শক্তির একজন বুদ্ধিবৃত্তিক হাতিয়ারে রূপান্তরিত হয়েছেন। সরকার-পক্ষীয়রা এবার তাই তাঁর বিরুদ্ধে তৎপর; আইনগত সন্ত্রাস চালাতে।
এরইমধ্যে এই আইনগত সন্ত্রাসের পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্র সরবরাহ করেছেন আরেক মহাত্মা সলিমুল্লাহ খান। ক্ষমতাশক্তির সরকারপন্থী অংশের পক্ষে দলবৃত্তি করতে গিয়ে ফরহাদ মজহারের বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহীতা আখ্যা দিয়েছেন তিনি। এবার এও বলা হতে পারে; ফরহাদ মজহার হেট স্পিচ ছড়িয়েছেন। একটা কমিউনিটি হিসেবে সাংবাদিকদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়েছেন। তাদের হামলার মদদ দিয়েছেন। তবে এইসব অভিযোগ সত্য নয়; আমরা যারা সেদিনের টক শো টা দেখেছি, তারা সবাই জানি। আর যদি সত্যি হয়ও, তাহলেও কি আমরা ফরহাদ মজহারকে সরকারের আইনগত সন্ত্রাসের হাতে ছেড়ে দেব? তাঁকে গ্রেপ্তার হয়রানি রিম্যান্ড করবে সরকার; আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব? তারপর টক শো-তে গিয়ে বলব; ফরহাদ মজহার কেবল সরকার-বিরোধীদের পক্ষেই বলে। সরকারের পক্ষে কোনো অবস্থান নেয় না। তার গ্রেপ্তার-রিম্যান্ড-হয়রানি তো হবারই কথা! তার ফাঁসি হওয়া উচিত! না বলব না।
‌তাহলে ফরহাদ মজহারের মতো, আমরাও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্তব্য ভুলে সরকারের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হয়ে যাব। ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে রাখি; নির্বাহী আদেশে আমার দেশ বন্ধ করে দেয়ার পর প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি আমি। যদিও ওই পত্রিকাটা আমার কাছে আগাগোড়া হলদেটে! দগদগে হলুদ। আজ ফরহাদ মজহারের মতামতের প্রবল বিরোধী হয়েও তার বিরুদ্ধে পাতা সরকারপক্ষীয় ফাঁদের হাত থেকে তাকে বাঁচানোকেই তাই বুদ্ধিবৃত্তিক কর্তব্য হিসেবে নির্দিষ্ট করেছি। এমনকী ফরহাদ মজহার হেট স্পিচ ছড়াইলেও (যদিও আমার বিবেচনায় ফরহাদের বক্তব্য কোনোভাবেই হেট স্পিচ না) আমাদের সামগ্রিক মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষের অবস্থানের নৈতিক পাটাতন থেকে তাঁর অধিকারের পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে।
এখানে একটু বিস্তারিত বলে রাখি। ফরহাদ মজহার রাষ্ট্রীয় হয়রানির শিকার হলে তার বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে; দিন দুয়েক আগে আমার এমন একটি স্ট্যাটাসের বিপরীতে ফেইসবুকে কথা হচ্ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের একজন প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে। উনি বলছিলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নির্বিচারী হতে পারে কিনা। যিনি বলছেন, তার দায়দায়িত্বের প্রশ্ন আছে কি নেই। আলাপটা যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এগোয়নি। তবে এটা কে না জানে, দায়িত্বহীন মন্তব্য অনেক ক্ষতি করে ফেলে। হেইট স্পিচ কিংবা হার্ম স্পিচ, যা কিনা, কোনো নির্দিষ্ট জাতি-বর্ণ-লিঙ্গ-ধর্ম অথবা অন্য কোনো অর্থে একটা কমিউনিটির প্রতি বিদ্বেষ ছড়াতে ব্যবহার করা হয়, তার ফলাফল খুবই ভয়ঙ্কর হয়। এতে দাঙ্গা-সংঘর্ষ-রক্তপাত অব্দি হয়। তবে একক মন্তব্যকারীকে বিচ্ছিন্নভাবে এজন্য দায়ী করে কোনো লাভ হয় না। তাকে আইনের আওতায় নিয়েও সত্যিকারের ইতিবাচক কিছু হয় না। কেননা হেট স্পিসের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে নয় কিন্তু, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনের পরিসর কাজ শুরু করে হেট স্পিস ছড়িয়ে পড়ার পরে। ততক্ষণে যা ক্ষতি হবার, তাতো হয়েই যায়। ইতিহাসের মুক্তিপন্থী-সমাজবাদীদের কাছে শিখেছি; যে বক্তব্য হেইট স্পিচ, হার্ম স্পিচ, তাকে ইতিবাচক মানবিক শুভ আর মঙ্গলের পক্ষের বক্তব্য দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একটা হেট স্পিসের বিপরীতে ১০টা সমতা-ন্যায়ের পক্ষের বক্তব্য সামনে আনতে হবে। পাঠক খেয়াল করে দেখেছেন নিশ্চয়, হেইট স্পিসের ভাইরাস সবাইকে আক্রান্ত করে না। পাহাড়িদের বিরুদ্ধে কেউ এমন বক্তব্য ছড়ালেই কি আমি যাব, পাহাড়িদের ধ্বংস করতে? যাব না। অনেক মানুষ যাবে না। এই যারা যাবে না, তারা কিন্তু মানবীয়তার (দোহাই, আমাকে হিউম্যানিস্ট ভাববেন না) একটা পর্যায় অতিক্রম করেছে। সেকারণে হেট স্পিসের বিপরীতে আমাদের প্রতিরোধের অস্ত্র হলো, সমাজটাকে আরও মানবীয় করে তোলা। আরও মুক্ত করে তোলা। আরও শোষণহীন করে তোলা। যেন হেইট স্পিসের ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করতে না পারে। আইন করে তাকে বন্ধ করতে গেলে খুব একটা লাভ হবে না। আর তারও আগের কথা হলো, আইন মানেই তার রাজনৈতিক ব্যবহার হবে। কোনটা হেট স্পিচ, কোনটা হেইট স্পিচ না, তা নির্ধারিত হবে দলীয় কিংবা ক্ষমতাশালীর এজেন্ডার ভিত্তিতে। চোখের সামনেই উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। একাত্তরে বোমা হামলার প্রেক্ষাপটে ফরহাদের বক্তব্য সরকারপক্ষের কাছে ভয়ঙ্কর। তবে তাদের মন্ত্রী-এমপিরা হরতালকারীদের হত্যা করতে বললেও তা ভয়ঙ্কর হয় না।
সুতরাং, আমরা যারা ক্ষমতাশালীদের কোনো অংশেরই প্রতিনিধিত্ব করি না, তাদের দাঁড়াতে হবে যে কোনো মতামতের বিপরীতে রাষ্ট্রীয় হয়রানির বিরুদ্ধে। ব্যক্তি ফরহাদ মজহার নয়; নিজের মতামত প্রকাশকারী একজন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকে যেন স্বাধীনতা ভোগ করে, সেই ন্যায়ভিত্তিক সমাজের প্রেরণার পক্ষে দাঁড়াতে গিয়েই আমাদের ফরহাদের হয়ে লড়তে হবে প্রয়োজনে; রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে। আদতে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই দাঁড়াতে হবে। যেন আমার কথা বলার অধিকারটাও একদিন কেড়ে নিতে না পারে রাষ্ট্রযন্ত্র!
লেখক: সংবাদকর্মী

No comments

Powered by Blogger.