শুভবুদ্ধির উদয় হোক- দেশ কোন দিকে যাচ্ছে?

নির্বাচনের বিরোধিতা করে যখন বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির সময় ক্রমশ বাড়ছে, তখন একতরফা নির্বাচনের নানা উদ্যোগ-আয়োজনও চলছে। সোমবার সারা দেশে মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই প্রক্রিয়ায় শরিক না হওয়ায় নির্বাচন-প্রক্রিয়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেই নিজেকে সরিয়ে নিল দলটি। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও গতকাল দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ পরিবেশ নেই—এই অজুহাতে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তাঁর এ ঘোষণাই যে শেষ কথা, তা হলফ করে বলা যায় না। কাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরোধী জোটের অবরোধের ডাক দেওয়া আছে, নির্বাচন ঠেকাতে এখন যদি তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়, তবে পরিস্থিতি আসলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সমঝোতার আহ্বানই উপেক্ষিত হয়েছে এবং দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে। দুই দফা অবরোধ কর্মসূচিতে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে। এই অবস্থায় শান্তিপূর্ণ, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কেবল দুরূহ নয়, অসম্ভবও।
জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা যদি শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে, তবে দেশ যে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, তা সব অর্থেই একদলীয় হিসেবেই বিবেচিত হবে। এ ধরনের একটি নির্বাচন দেশের জন্য কী ফল বয়ে আনবে?
গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একটি নির্বাচনকে তখনই প্রকৃত নির্বাচন হিসেবে উল্লেখ করা যায়, যদি তা হয় অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ। এর একটির অনুপস্থিতিই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে। দেশের প্রধান বিরোধী দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তবে সেটা আর যা-ই হোক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। আর বিরোধী দল যখন সেই নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন করছে, তখন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কাই জোরালো হয়েছে।
আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলি, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। আর এ ধরনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতৈক্যে আসার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে বিরোধ, তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের অযোগ্য নয়। কিন্তু যেকোনো সমঝোতা বা বিরোধ মেটানোর ক্ষেত্রে যেটা জরুরি, তা হচ্ছে আন্তরিকতা ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা। দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল এই দুটি ক্ষেত্রেই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশ আজ যে অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে এসে পড়েছে, এর দায় দুই পক্ষের হলেও একতরফা নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত ও সংঘর্ষের দায় প্রধানত সরকারকেই নিতে হবে। আমরা এখনো মনে করি, সমঝোতার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

No comments

Powered by Blogger.