কী দোষ ছিল স্বপনের?

রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না ইজিবাইকচালক স্বপন। কিন্তু রাজনীতির অশুভ ছোবল থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি। সহিংসতার আগুনে ঝলসে গেছে তাঁর শরীর। অবরোধ চলাকালে গত সোমবার রাতে দুর্বৃত্তরা পেট্রল ছিটিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তাঁর একমাত্র সম্বল ইজিবাইকটি। দগ্ধ হয়েছেন তিনি।

স্বপন এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বপনের একটাই প্রশ্ন, কী দোষ ছিল তাঁর? তাঁর পরিবার বলতে সাত বছরের মেয়ে স্বপ্ন। যে কি না, পঙ্গুত্ব বরণ করে ছয় মাস ধরে খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাই অবরোধের মধ্যেও মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগানোর তাগিদে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ঝলসে গেছে স্বপনের শরীরের ৭০ শতাংশ। এখন পর্যন্ত এলাকাবাসীর চাঁদায় কোনো রকমে তাঁর চিকিৎসা চলছে। আর্থিক সংকটের কারণে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তিনি।
হাসপাতালের বারান্দায় অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর স্বপন চিকিৎসক ও দেখতে আসা লোকদের বলছিলেন, ‘যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না। মনে হয়, তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়ি। কিছু একটা করেন আপনারা।’
স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রী সেজে আমার গাড়িতে উঠে দুর্বৃত্তরা সোনাডাঙ্গা আল ফারুক সোসাইটির কাছে অন্ধকার স্থানে নেমে ভাড়ার টাকা দেওয়ার অভিনয় করে ইজিবাইক ও আমার গায়ে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমি বাঁচার জন্য চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি দিই। পরে এলাকার মানুষ হাসপাতালে নিয়ে আসে। এখন জানি না আমার কী হবে, আমার পঙ্গু মেয়েটার কী হবে? আমার দোষ কী?’
খুলনা মেডিকেল কলেজের সহকারী রেজিস্ট্রার (সার্জারি) কমলেশ সাহা বলেন, স্বপনের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আস্তে আস্তে তাঁর শরীরের ক্ষত আরও বৃদ্ধি পাবে। এখনই উন্নত চিকিৎসা করানো না গেলে অবস্থার ক্রমাবনতি হবে, যা রোগীর জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
স্বপনের প্রতিবেশী ও বন্ধু নগরের নয়াবটি এলাকার ইজিবাইকচালক আযাদ জানান, টাকার অভাবে যার মুখে খাবার জোটে না, সে মানুষটির চিকিৎসা কীভাবে হবে? প্রতিবেশীরা চাঁদা তুলে কিছু ওষুধ কিনে দিয়েছেন। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার সহায়তা করার সামর্থ্য তো তাঁদের নেই। তাই সরকারসহ সমাজের বিত্তবান মানুষের সহায়তা পেলে হয়তো জীবন ফিরে পাবেন দরিদ্র মানুষটি।

No comments

Powered by Blogger.