অপরিণামদর্শিতার খেসারত মানুষ কেন দেবে? আন্দোলনের নামে সহিংসতা
রাজনীতি জীবনের মূল্যে তার খাজনা প্রতিদিন নিচ্ছে। একতরফা নির্বাচনের ঘোষণা এবং তার জবাবে বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ শুরুর পর থেকে রাজনীতি সহিংস মাত্রা পেয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগুনে পুড়ে অথবা গুলিবিদ্ধ হয়ে মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে।
সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব যতই সীমা ছাড়াচ্ছে, ততই তাদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। দুই জোটের বিনাশী তৎপরতা জনমনে ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে। এই অবস্থার আশু অবসানই এখন জাতীয় দাবি।
বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর কর্মীদের সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি না করতে আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বান শুনে মনে পড়ে যায়, ‘এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে!’ ইতিমধ্যে স্কুলগামী শিশু, ঘরফেরতা পেশাজীবী-গৃহবধূ, দিনমজুর বৃদ্ধ বীভৎস আগুনে পুড়ে অথবা গণশত্রু ককটেলের আঘাতে জীবন হারিয়েছেন। এ এমন মৃত্যু, যার কোনো সান্ত্বনা নেই; এ এমন মৃত্যু, কোনো মানুষেরই যা হওয়া উচিত নয়। অথচ যা হওয়া উচিত নয়, তা-ই ঘটছে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার এই আহ্বান তাই অপরিণামদর্শী সহিংসতার দায় লাঘব করতে পারে না।
এমনকি সরকারি বাহিনীর গুলিতেও আন্দোলনকারীসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। সরকার সমঝোতার পথ ছেড়ে পুলিশ-বিজিবি ও ক্যাডারদের দিয়ে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছে। এই কৌশলও অপরিণামদর্শী। কারণ, রাজনৈতিক সমস্যাকে এভাবে বলপ্রয়োগে সমাধান করা যায় না। এতে করে বিরোধীরা পাল্টা বলপ্রয়োগে উৎসাহী হয় ওঠে এবং সেটাই ঘটছে। প্রমাণিত হয়েছে, সরকারি বাহিনীগুলো বিরোধী দল দমনে যতটা দক্ষ, জননিরাপত্তা প্রদানে ততটাই ব্যর্থ। নইলে পুলিশের নাকের ডগাতেই একের পর এক নাশকতা ঘটা এবং অপরাধীদের অধরা থেকে যাওয়া কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? বাসে অগ্নিদগ্ধ গীতা সেনের কণ্ঠে তাই দেশবাসীর মনের কথাটাই প্রকাশিত হয়েছে যে ‘আমরা অসুস্থ সরকার চাই না’।
বিরোধী দলকেই প্রথমে নাশকতা থেকে আন্দোলনকে আলাদা করতে হবে। আর সহিংসতাই যদি আন্দোলনের একমাত্র ভাষা হয়, তাহলে পরিস্থিতির অবনতির দায় তাদেরও ছাড়বে না।
No comments