থাইল্যান্ডে বিরোধীদের জয়

থাইল্যান্ডের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বিজয় দাবি করেছে। রাজধানী ব্যাংককের সরকারি ভবন ও পুলিশ সদর দফতরের বাইরে তাদের বিক্ষোভের অনুমতি দেয়ার পর মঙ্গলবার তারা এ বিজয় দাবি করল। বিক্ষোভকারীরা বলেছে, পুলিশ যদি ব্যারিকেড তুলে না নিত তাহলে বহু মানুষ হতাহত হতো। এর আগে, ১১ নভেম্বর থেকে থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপকমাত্রায় টিয়ার গ্যাস, পানি কামান ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর মধ্য দিয়েই তারা বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় দখর করে নেয় এবং পুলিশ সদর দফতর দখলের চেষ্টা করে। প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকারি বাসভবন গভর্নর হাউসেও চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। ১১ নভেম্বর সরকারের আনা একটি বিল থাই সিনেট নাকচ করে দেয়ার পর দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে। ওই বিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমা করে দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছে- ইংলাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করলেও কার্যত নির্বাসনে থেকে দেশ চালাচ্ছেন তার ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন ২০০৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তারপর থেকে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। এদিকে প্রতিবাদকারীরা প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং নিকটবর্তী মহানগর পুলিশের সদর দফতর ভাংচুর করার চেষ্টা করলেও তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ না করার প্রতিশ্র“তি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক। মঙ্গলবার সকালে একটি হেলিকপ্টার এসে প্রতিবাদকারীদের ওপর লিফলেট বিলি করে যায়। তাতে প্রতিবাদকারীদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তাদের নেতা সুথেপ থাগসুবানকে বিদ্রোহের অভিযোগে খোঁজা হচ্ছে।
লিফলেটে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তাই অনুগ্রহ করে, থাগসুবানের থেকে দূরে থাকুন এবং আইন অমান্যকারী জটলা থেকে বিরত থাকুন।’ থাকসিনের তীব্র বিরোধিতাকারী সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী থাগসুবান সোমবার রাতে নিজের উৎফুল্ল সমর্থকদের সামনে পুলিশের তীব্র সমালোচনা করে পরদিন পুলিশ সদর দফতর দখল করা হবে বলে ঘোষণা দেন। তবে পুলিশের সদর দফতর বা এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতর গভর্নমেন্ট হাউস দখল করলেও ইংলাক সরকারের বৈধতায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না সরকারবিরোধী প্রতিবাদকারীরা। কিন্তু আরও বিশৃংখলা ও সহিংসতা বাড়লে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ক্রমেই কমে আসছে থাইল্যান্ডের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা। সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থেকেও পিছু হটতে শুরু করেছে বিরোধীরা। সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত সপ্তাহের শেষ দিক ও সোমবারের সহিংসতার পর ব্যাংককে সংঘাত আগের চেয়ে মঙ্গলবার অনেক বেশি কম দেখা গেছে। যদিও বিক্ষোভকারীদের নেতা সুথেপ থাউগসুবান লড়াই করে সরকার উৎখাতের অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এর আগে, সোমবার টেলিভিশনে দেয়া এক জরুরি ভাষণে বিরোধীদের পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। অনির্বাচিত পিপলস পরিষদকে ক্ষমতায় বসানো অসাংবিধানিক ও অবৈধ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরাসরি সংলাপ সমঝোতায় বসতে প্রস্তুত তার সরকার।
ইংলাক সিনাওয়াত্রা
পুলিশের সদরদফতর এমনকি প্রধানমন্ত্রীর গর্ভনমেন্ট হাউস দখল করলেও সরকারের বৈধতায় কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না
সুথেপের বিজয় ভাষণ
আমরা বিজয় উল্লাস করতে পারি সানন্দে কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন লক্ষ্যচ্যুত না হই।
থাই ছাত্রসমাজের প্রতিক্রিয়া
দ্য নেটওয়ার্ক অব স্টুডেন্টস অ্যান্ড পিপল ফর থাইল্যান্ডস রিফর্ম’র (এনএসপিটিআর) সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। এনএসপিটিআর নেতা উথাই ইয়োদম্যানি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে আমরা বিজয় ঘোষণা করেছি ঠিকই কিন্তু তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবেই।

No comments

Powered by Blogger.